ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফেরমোন ফাঁদ

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৫
জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফেরমোন ফাঁদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভোলা: ফসলের খেতের পোকা দমনে আধুনিক প্রযুক্তি ‘ফেরমোন ফাঁদ’ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভোলায়। ক্ষতিকর পোকা দমন ও ফসল রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখায় এ ফাঁদ ব্যবহারে ব্যাপক সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা।


 
পোকা ও কীট দমনে অন্য কীটনাশক কিংবা ওষুধের তুলনায় খরচ অনেক কম হওয়ায় এর ব্যবহারে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। ফলে দিন দিন ফেরমোন ফাঁদ ব্যবহারে সুফল পেয়ে উৎসাহিত হচ্ছেন তারা। কৃষি অফিসও পোকা দমনে ফেরমোন পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষাবাদে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

কৃষকরা জানান, এ ব্যাপারে আরো বেশি বেশি প্রশিক্ষণ ও প্রচারণা চালালে খুব দ্রুত এর প্রসার ঘটানো সম্ভব হবে।
 
তারা জানান, আগে যেখানে ফসলের খেতে পোকার আক্রমণ হলে তারা চিন্তিত হয়ে পড়তেন। বাজার থেকে বিভিন্ন ওষুধ ও কীটনাশক এনে ব্যবহার করেও পুরোপুরি পোকা দমন হতো না। এতে ফসলের উৎপাদন অনেকাংশে কমে যেতো। কিন্তু এই প্রথমবারের মত এ জেলায় এক হাজার ৮০ জন কৃষক ফেরমোন ফাঁদ ব্যবহার করছেন।

জানা গেছে, বিষমুক্ত সবজি আবাদের লক্ষ্যে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা’ (জিজেইউএস) বিনামূল্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এ ফাঁদ ব্যবহারে উৎসাহিত করেছেন।

এদিকে, ভোলা সদরের ইলিশা, ভেলুমিয়া ও ভেদুরিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বিস্তীর্ণ কৃষকের ফসলের খেতে পোকা দমনকারী ফেরমোন ফাঁদ দেখা গেছে।

কৃষক-কৃষাণি এই ফাঁদের মাধ্যমে পোকা দমন করতে পেরে বেশ খুশি। করলা, কুমড়া, সিম, চিচিঙ্গা, বেগুন, ঝিঙ্গা ও কাকরোলসহ বিভিন্ন ফসলের খেতে এখন ফেরমোন ফাঁদ কৃষকের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে।

ইলিশা ইউনিয়নের কৃষক ইদ্রিস, মোস্তফা, নিজাম, ইউনুসসহ অন্যরা জানান, সবজি খেতে ক্ষতিকর মাছি, ছিদ্রকারী পোকা, ছেনি পোকা, উলানী পোকা ও পাতা পঁচা পোকাসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। বাজার থেকে কীটনাশক এনে প্রয়োগ করার পরও তেমন কোনো ফল হয়নি। সেই মুহূর্তে গ্রামীণ সংস্থা বিনামূল্যে ফেরমোন ফাঁদ দেয়। এটি ব্যবহার করে সবজি খেতকে পোকামুক্ত করার কাজ করছি। প্রতিদিন খেতের শত শত পোকা মারা পড়ছে। ফসলের খেতও স্বাভাবিক হয়ে উঠছে।

সবজি চাষি মো. লিটন বলেন, এনজিও থেকে লোন নিয়ে দুই একর জমিতে সবজির চাষ করে বিপাকে পড়েছিলাম। তখন ফেরমোন ফাঁদ ব্যবহার করি।

একটি প্লাস্টিকের পাত্রে কিছু পানি ও একটি স্ত্রী পোকা রেখে দেওয়া হয়। ওই পাত্রে স্ত্রী পোকার টানে ক্ষতিকর পোকাগুলো এসে মারা পড়ে। প্রতিদিন শত শত পোকা এভাবে মারা যায়। এতে ফসলের খেতও পোকার আক্রমণ থেকে মুক্ত হয়।

গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন বলেন, মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী থাকায় প্রতি বছরই ভোলাতে ব্যাপক হারে সবজির আবাদ হয়ে থাকে। এ বছরও চাষিরা প্রচুর সবজি আবাদ করেছেন।

পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় বর্তমানে সদরের তিনটি ইউনিয়নের এক হাজার ৮০ জন কৃষককে ফেরমোন ফাঁদ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো কৃষকদের এ ফাঁদ দেওয়া হবে।
 
এ ব্যাপারে ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রমেন্দ্র বাড়ৈ বলেন, সবজি জাতীয় ফসলের জন্য ফেরমোন ফাঁদ একটি কার্যকরী পদ্ধতি। এ ফাঁদটি ব্যবহার করলে অন্য কোনো কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়না। তাই আমরা কৃষকদের ফেরমোন ফাঁদ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

ফেরমোন ফাঁদ বিতরণকারী এনজিও গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, কৃষকদের সহায়তায় কৃষি অধিদপ্তরের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার এগিয়ে আসা উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৫ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।