সুনীল ও তার স্ত্রী তখন পরিষ্কার করছিলেন বনঘেঁষে। হঠাৎ গাছের মাথায় নড়েচড়ে বসলো কি যেন।
ভাগ্য সদয়, তখনও তারা বসে ছিলো যেন ছবির পোজ দেওয়ার জন্য। ততক্ষণে আশপাশের গাছের পাতাও নড়তে শুরু করেছে। আগে থেকেই জানতাম এরা দলবেঁধে থাকে। সে সম্ভাবনা থেকেই একা বনে ঢোকা। কিছুদূর ঢুকেই দেখা গেলো সত্যিই একটি দল এখানে। তিনটি বড় একটি শিশুর দল।
নিচের মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে বারবার এ গাছ থেকে ওগাছে লাফাচ্ছিলো। এরইমধ্যে মা ও তার শাবককে পাওয়া গেলো একটি উঁচু অন্ধকারগোছের একটি গাছের ডালে। ক্যামেরার লেন্সে বেড় পাওয়া মুশকিল। ক্লিক অথবা শুকনো পাতার শব্দ পেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে পড়লো কয়েক সেকেন্ডের জন্য। একেবারে চোখ চোখ রেখে তাকানো যারে বলে। মায়ের কোল সেঁটে লক্ষ্মীছাড়ার মতো বসে থাকলো শাবকটি। দুজনেরই চোখের চারপাশ গোলাকৃতির সাদা রঙে ঢাকা। ঠিক যেন চশমা পরে বসে আছে। ভেতরে কালো ডাগর চোখ। ঠোঁটের চারপাশেও তাই। হাত দেড়েক লম্বা লেজ আর ধূসর লম্বাটে লোম শরীরে।
মাথায় যেন টুপি পরা। চোখে চোখ রেখে আবার মাঝে মধ্যে দাঁত খিচিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা থেকেও বিরত থাকলো না। ভাবখানা এমন যে, এই গহীন বনে তোমার কি!
কিন্তু বেশিক্ষণ সুযোগ না দিয়ে কয়েক সেকেন্ডেই উঠে গেলো গাছের মটকায়। আর টিকি দেখা গেলো না বনের ঘনত্বে। তবে পাশ থেকে অবস্থান জানান দিতে লাগলো আরেকটি। তার সঙ্গেও কিছুক্ষণ হলো চোখাচোখি। এভাবে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে রাস্তার পাশে আসতেই দেখা মেহগনি গাছে দেখা দিলো আরেকটি দল। নিচে তখন পিকনিকে আসা স্কুলের শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদেরও একদফা বিনোদন দিয়ে বনে এসে বন্যপ্রাণী দেখার ইচ্ছে সার্থক করে দিলো দলটি।
মৌলভীবাজার রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চশমা পরা হনুমানরা সাধারণত দলবেঁধে থাকে। পুরো বন এরা ঘুরে বেড়ায়। লাউয়াছড়া বনে এরা যথেষ্ট সংখ্যায় আছে। গাছের কচিপাতা ও সব ধরনের ফল এদের প্রধান খাবার। বনে এদের খাদ্য সংকট নেই।
বাংলাদেশের সাতছড়ি, লাউয়াছড়া, রেমা-কালেঙ্গা ও কাপ্তাই সংরক্ষিত বনে এদের বেশি দেখা মেলে। তবে বনের মধ্যে দিয়ে ট্রেন লাইন ও সড়ক থাকায় প্রায়ই এদের যানবাহনের নিচে চাপা পড়ে জীবন হারাতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭
এএ