শেরপুর: শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। সোমবার (জুলাই ২০) সদর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসএই) জিয়াসমিন খাতুন জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বর্তমানে বিপৎসীমার ০.০২ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া জেলার শ্রীবরদী উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম, নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালী, ভোগাই ও নাকুগাঁও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওইসব এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া নকলার ৩-৪টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। এ কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় অর্ধলাখ মানুষ। বন্যার পানির নিচে তলিয়ে আছে চলতি আমন মৌসুমের বিপুল পরিমাণ জমির বীজতলা। এছাড়া শেরপুর-জামালপুর সড়কের কজওয়ে পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় শেরপুরের সঙ্গে অন্যান্য জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আকবর আলী বাংলানিউজকে বলেন, নতুন ভাগলগড় গ্রামটি পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রায় ৬শ’ পরিবার পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকার ১০-১৫টি বাড়ি বন্যার কারণে বিলীন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের মধ্যে ৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও শেরপুর-১ (সদর) আসনের এমপি মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক। এ সময় বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন তিনি।
সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোরশেদুজ্জমান বলেন, তার এলাকার মুন্সিরচর, নলবাইদ, চরভাবনা, কেন্দুয়ারচর, চান কাসার, হরিণধরা, মাছপাড়া, ধাতিয়াপাড়া এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মানুষের বাড়িতে পানি উঠে গেছে। লোকজন এখন নৌকা এবং কলাগাছের ভেলায় করে উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি আরো বলেন, বিষয়টি সদর ইউএনওকে জানানো হয়েছে। আজ-কালের মধ্যেই জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজ আল মামুন জানান, বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় চরপক্ষীমারী ও কামারেরচর ইউনিয়নের জনসাধারণের মধ্যে ১২ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আলু, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং খাবার স্যালাইনও রয়েছে বিতরণের তালিকায়।
বন্যায় আমন ধানের বীজতলা ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মোহিত কুমার দে বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্রটা পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে জেলা সিভিল সার্জন ডা. অনোয়ারুর রউফ বলেন, বন্যায় পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা দিতে এরই মধ্যে ২০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। রোগীরা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২০
আরএ