মৌলভীবাজার: ‘ডেওয়া’ এক ধরনের বুনো ফল। মূলত এ ফলটি বন্যপ্রাণীদের খাবার।
মানুষের অবহেলা আর উদাসীনতার কারণে বাংলার প্রকৃতি থেকে বহু বৃক্ষ বিলুপ্ত হতে চলেছে। এদের মধ্যে ‘ডেওয়া’ও একটি। তবে, আশার কথা, বনবিভাগে বিপন্ন প্রজাতির এসব উদ্ভিদকে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে চলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে এ প্রসঙ্গে বলেন, এই ফলটি নাম ডেওয়া। তবে, অনেকে ‘বরতা’ও বলে থাকেন। এর ইংরেজি নাম Monkey Jeck এবং বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus lacucha। এটি Moraceae পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। এই ফলটি বনপ্রাণীদের বিশেষ করে মেমেলসদের (স্তন্যপায়ী) উল্লুক, বানর, হনুমান, কাঠবিড়ালিদের প্রিয় খাবার। এমনি ফলটি পাকলে পাখিরাও খায়।
ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যেহেতু কাঁঠাল গোত্রের উদ্ভিদ, তাই মানুষও খায়। অর্থাৎ কাঁঠালের যে ধরনের পুষ্টিগুণ আছে এই ডেওয়াও পুষ্টিগুণে ভরা। সবচেয়ে বড় দিক হলো, এই ফলটি মানুষের খাদ্য এবং পুষ্টি নিরাপত্তায়ও ভূমিকা রাখতে পারে। এটা যেহেতু দেশীয় বৃক্ষ এবং বনে জন্মে তাহলে এটিকে রক্ষা করলে তো দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষা হলো।
তিনি আরও বলেন, যদি ডেওয়া ফলের গুরুত্বকে যদি আমরা আগাগোড়া বিশ্লেষণ করি তবে, ৩টি প্রধান দিক সহজেই প্রকাশিত হবে: ১) বন্যপ্রাণীদের প্রিয় খাবার, ২) মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তায় বড় অবদার রাখতে পারে এবং ৩) এই বৃক্ষটিকে সংরক্ষণ করলে আমাদের প্রাকৃতিক বনের দেশীয় একটি প্রজাতি সুরক্ষিত থাকবে। ফুল এবং ফল ধরা সম্পর্কে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি-মার্চে ফুল হয় এবং মে-জুনের দিকে ফল পাকে। এখন কিন্তু আমাদের প্রাকৃতিক বন-বনান্তরে ডেওয়া ফল পাকতে শুরু করেছে। আবার এর ভেতর কিছু ভ্যারাইটির উদ্ভিদ আছে যেগুলো সারা বছর ফল হয়। ফলে এটা বন্যপ্রাণীর জন্য আরও বেশি উপকারী।
‘এই ছবিটি আমি ঢাকার নীলক্ষেত থেকে তুলেছি। ঢাকায় বিক্রি হয় কেজি প্রতি ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা। এই ফলটি খেতে একটু টক-মিষ্টি স্বাদের। এই ফলটি সাইজে হাফ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এই বৃক্ষটি উচ্চতায় প্রায় ৬০-৭০ ফিট হতে পারে। এই উদ্ভিদের কাঠ তেমন দামি নয়। তবে, মানুষ ব্যবহার করে থাকে। হালকা ধরনের আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহার হয়। ’
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, বন বিভাগ চলতি বছর তাদের বনায়নের তালিকায় ফলদ উদ্ভিদ হিসেবে এই ডেওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং এটিকে প্রাকৃতিক বনে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখছে এটি খুবই ইতিবাচক দিক।
আমরা এ ফলকে তেমন একটা পাত্তা দেইনি বলে আজকে প্রকৃতি থেকে এটি হারিয়ে যাচ্ছে বলে জানান উদ্ভিদ গবেষক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২১
বিবিবি/এএটি