লালমনিরহাট: উজানের পাহাড়ি ঢল ও হালকা বৃষ্টিতে আবারও তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার)। যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, ভারতের সিকিম উপত্তকা থেকে সৃষ্ঠ তিস্তা নদী ভারতে প্রবাহিত হয়ে লালমনিরহাট জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। উজানে ভারতের অংশে ভারত সরকার বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা নদীর এক তরফাভাবে ব্যবহার করছে। ফলে শুস্ক মৌসুমে বাংলাদেশ অংশে কোনো পানি থাকে না। মরুভূমিতে পরিণত হয় তিস্তা। আবার বর্ষাকালে অতিবর্ষণের ফলে ভারতের অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যা আর তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলাসহ নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলা।
উজানের পাহাড়ি ঢলে বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) দিনগত রাত থেকে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়ে গিয়ে শুক্রবার বিপৎসীমা অতিক্রম করে। দিনভর বৃষ্টিতে আরও বাড়তে থাকে তিস্তার পানি প্রবাহ। একই দিন বিকেল ৩টার দিকে দেশের বৃহত্ততম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষার্থে সব জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। করোনার সংক্রমণ রোধে বিধি-নিষেধের ধকল না কাটতে বন্যার শঙ্কায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষজন।
তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টের বন্যা পূর্বাভাষ কেন্দ্র জানায়, ১২ আগস্ট সন্ধ্যার পর থেকে হঠাৎ পানি প্রবাহ বেড়ে যায় তিস্তায়। শুক্রবার সকালে তিস্তার পানি প্রবাহ এ পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। বিকেল ৩টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বিধি-নিষেধের ফলে দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকায় বন্যার জন্য গচ্ছিত খাদ্য শেষ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিস্তা চরাঞ্চলের এসব ছিন্নমূল মানুষ। বিশেষ করে শিশু বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধিদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। গবাদি পশু পাখি নিয়েও চরম কষ্টে পড়েছেন পানিবন্দি তিস্তা পাড়ের মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়ে পানির চাপ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্রাবিত হয়েছে। তবে তা রাতে বিপৎসীমার নিচে নেমে আসারও সম্ভবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময় ১৬১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২১
এসআরএস