ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

কঠিন চ্যালেঞ্জেই ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত টাইগাররা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৬
কঠিন চ্যালেঞ্জেই ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত টাইগাররা ছবি: শোয়েব মিথুন/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বেঙ্গালুরু থেকে: আইসিসির সিদ্ধান্তে টাইগার স্কোয়াড থেকে ছিটকে পড়েছেন তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানি। ফলে মাশরাফির অতি যত্নে সাজানো বাগানও এলোমেলো হয়ে গেছে! সঙ্গত কারণেই মন ভেঙে গেছে অধিনায়কসহ পুরো টাইগার দলের।

সতীর্থদের হারানোর যন্ত্রণায় কেঁদেছেন মাশরাফি। তারপরেও হাল ছাড়তে চাইছেন না অদম্য এই টাইগার কাপ্তান।

বিশ্বকাপের মাঝখানে সতীর্থ হারানোর কষ্ট ভুলে থাকতে না পারলেও, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে আইসিসির এমন অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে  বদ্ধ পরিকর এই লাল-সবুজের অধিনায়ক। আর এমন দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েই সোমবার (২১ মার্চ) আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শেষ দশে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টাইগারদের এই ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়।

বিশ্বকাপের সুপার টেনের শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৬ মার্চ ইডেন গার্ডেনে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের কাছে ৫৫ রানে হেরে গেছে। সেই হারের কষ্ট সাকিব-তামিমরা নিবারণ করতে চাইছিলেন এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় নিয়েই। কিন্তু আইসিসির খাম-খেয়ালিপনা সিদ্ধান্তে দলের অন্যতম দুই বোলিং অ্যাটাক পেসার তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার আরাফাত সানি সাময়িক নিষিদ্ধ হওয়ায় টাইগার স্কোয়াডে ছন্দপতন হয়েছে। ফলে সেই কাজটিও কঠিন হয়ে গেছে বলে মনে করছেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা।

রোববার (২০ মার্চ) বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের সম্মেলন কক্ষে ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মলনে মাশরাফি জানান, ‘তাসকিন ও সানির নিষেধাজ্ঞার ফলে দলের কারোরই মানসিক অবস্থা ভালো নেই। তাসকিন ও সানি আইসিসি’র নিষেধাজ্ঞায় দল থেকে ছিটকে পড়ায় আমরা ভীষণ বিমর্ষ। এটা টিম বাংলাদেশের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। আইসিসির এমন সিদ্ধান্ত সত্যিই হতাশার। বিশেষত তাসকিনের কথা বলবো। যে ছেলেটা গেল আটটা ম্যাচেই আমাদের বোলিংয়ের শুরুটা করেছে। এটা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ওর বোলিংই আমাদের দলকে একটি ছন্দ এনে দিয়েছে এবং একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ’

এমন ভঙ্গুর মানসিকতায় অন্য যে কেউ হলে নির্ঘাত ভড়কে যেতেন। একেতো বিশ্বকাপ আর তারপরে আবার প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার মতো টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট একটি দল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো মাশরাফি ততটা ভেঙে পড়ছেন না। চাইছেন এই ম্যাচ দিয়েই ঘুরে দাঁড়াতে, চাইছেন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে গেল ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের জ্বালা কমাতে। ‘প্রতিপক্ষ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া আমাদের গ্রুপের অন্যতম শক্তিশালী দল। ওদের ব্যাটিং অর্ডার ও বোলিং সব দিক থেকেই ওরা শক্তিশালী। ওদের বিপক্ষে জয় পাওয়া এমনিতেই কঠিন ছিল, এখন কাজটি আরও কঠিন হয়ে গেল। তবে আমাদের প্রথম চাওয়া থাকবে আমরা যেনো ম্যাচটি জিততে পারি এবং আমরা সেই উদ্দেশ্যেই খেলবো’ যোগ করেন ম্যাশ।

টাইগারদের দলপতি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বমঞ্চে জয়ের কথা বললেও দলটির বিপক্ষে অতীত পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যাবে জয়ের পাল্লা অজিদের দিকেই ভারি। অজিদের বিপক্ষে এই পর্যন্ত তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ যেখানে তিনটিতেই জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। মুহূর্তেই বদলে যায় ম্যাচের দৃশ্যপট। তাই এখানে পরিসংখ্যান একেবারেই অগ্রাহ্য। টি-টোয়েন্টিতো আরও অনিশ্চিত। এক বা দুটি ওভারই বদলে দেয় পুরো মাচের দৃশ্যপট। তাই মাশরাফি যে জয়ের কথা বলছেন সেই জয় আসতেই পারে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলেছিলো ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। যেখানে স্বাগতিকরা হেরেছিলো ৭ উইকেটে।
 
কিন্তু গেল দেড় বছর যাবত টাইগাররা যে ভাবে খেলছে তাতে বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশের উপাখ্যান পড়েছে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। তাইে একথা খুব সহজেই বলা যায় যে, ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়া যে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিলো এটি সেই বাংলাদেশ নয়।

তাসকিন-সানিদের বদলি হিসেবে এসেছেন শুভাগত হোম ও সাকলাইন সজিব। রোববার  (২০ মার্চ) বেঙ্গালুরু এসেই সাকিব-তামিমদের সাথে অনুশীলনও করেছেন তারা। কিন্তু তাসকিন-সানির অভাব শুভাগত-সাকলাইনকে দিয়ে ক্রিকেটিয় নিয়মেই তা করা সম্ভব নয় বলে জানান মাশরাফি, ‘নিঃসন্দেহে সাকলাইন ও শুভাগত ভালো। কিন্তু দেশ থেকে এসেই বিশ্বকাপের মতো এত বড় আসারে খেলা একটু কঠিনই হবে। তাছাড়া কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ব্যাপারটিতো আছেই। ’

তারপরেও হাল ছাড়ছন না ম্যাশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় নিয়েই চাইছেন ঘুরে দাঁড়াতে।
 
বাংলাদেশের মতো এটি অস্ট্রেলিয়ার জন্যও ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচ। গেল ১৮ মার্চ ধর্মশালায় নিজেদের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে মাত্র ৮ রানে হেরে টুর্নামেন্টের শুরুটা ভালো করতে পারেনি স্মিথ-ওয়াটসনরা। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই বিশ্বকাপের এবারের আসরে জয়ের ধারায় ফিরতে চাইছে অস্ট্রেলিয়াও। কিন্তু প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ হলেও দলটিকে মোটেও হালকা ভাবে নিচ্ছেন না অজি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ বরং দেখছেন সমীহের চোখেই। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ‘এই ম্যাচে প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে আমরা মোটেও হালকাভাবে নিচ্ছি না। তবে আমরা চাইবো নিজেদেরে সেরা খেলাটি খেলতে। আর সেটা যদি করতে পারি তাহলে আশা করছি আমরা সফল হবো। ’

এদিকে আইসিসি’র কুট-চালে গেল ১৯ মার্চ বিশ্বকাপের মাঝপথে ক্রিকেট থেকে সাময়িক নিষিদ্ধ হন দুই টাইগার বোলার তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানি। তাদের ছাড়াই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসর খেলতে হবে মাশরাফিদের। সঙ্গত কারণেই অজিদের হালকা মেজাজে থাকার কথা থাকলেও তারা বরং বাংলাদেশের কোয়ালিটি বোলিং লাইনআপ নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত। ‘এখনও বাংলাদেশের বোলিং স্কোয়াডে বেশ কয়েকজন দক্ষ বোলার আছেন যারা যেকোনো সময়ই জ্বলে উঠার সামর্থ্য রাখে’ যোগ করেন স্মিথ।

অজিদের বিপক্ষে ম্যাচের পর স্বাগতিক ভারত এবং পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, ২১ মার্চ ২০১৬
এইচএল/এমআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।