ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

শেষ হয়ে এলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর

মহিবুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৬
শেষ হয়ে এলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর

মুম্বাই থেকে: দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসর। বাছাই পর্ব, সুপার টেন’র ম্যাচ শেষ।

এবার পালা শেষ চার বা সেমিফাইনাল। আর ৩১ মার্চের সেই সেমিফাইনালের দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ম্যাচের সংবাদ সংগ্রহের জন্য আমরা ছুটে চলেছি মুম্বেইয়ের পথে। এই যাত্রায়ও যথারীতি আমার সঙ্গে আমার সঙ্গে আছেন সহকর্মী শোয়েব মিথুন।

পশ্চিম বঙ্গ থেকে মুম্বাই। প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার পথ! যেতে হলে পাড়ি দিতে হবে; ছত্রিশগড়-ঝাড়খন্ড-উরিষ্যা-মধ্যপ্রদেশর মত চার চারটি প্রদেশ, এই চার প্রদেশ পার হবার পর, আমরা গিয়ে পৌঁছাবে মহারাষ্ট্রে যেখানে অবস্থিত মুম্বাই।

মুম্বাই যেতে হাওরা রেলওয়ে স্টেশন থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়, ২৮ মার্চ সকাল ৮টা ২০ মিনিটে। বাংলাদেশ থেকে আসা আরও ৩ সংবাদকর্মী মিলে আমরা দিনের যাত্রা শুরু করি। সকালের ঝকঝকে রোদের আলোতে দুরন্ত এক্সপ্রেসটি লম্বা হর্ন বাজিয়ে দুরন্ত গতিতে মুম্বাইয়ের পথে ছুটতে শুরু করলো।

মুম্বাই যেতে আমাদের সময় লাগবে ২৬ ঘণ্টা। লম্বা ভ্রমন তাই এসি স্লিপিং কেবিন নেয়ার কোনো বিকল্প ছিল না। করলাম ও তাই। দুরন্ত এক্সপ্রেসের বি-থ্রি কম্পার্টমেন্টের ৪১, ৪২, ৪৪, ৪৭ ও ৪৮ নম্বর আসনে বসে আমরা মুম্বাই পানে ছুটে চলেছি।

আমাদের কম্পার্টমেন্টটিতে যাত্রীর সংখ্যা মোট আটজন। আমরা ছাড়াও রয়েছেন- দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র স্টাফ ক্রীড়া প্রতিবেদক মিথুন আশরাফ, রেডিও টুডে’র স্টাফ ক্রীড়া প্রতিবেদক সৌরভ আবিদসহ ভারতীয় ৩ নাগরিক। এদের মধ্যে একজন মোটরবাইক মেকানিক ও অন্য দু’জন ব্যবসায়ী।

দুরন্ত এক্সপ্রেসটির গতি বেশ ভালো। ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার আর মুম্বাই যেতে থামবে মাত্র ৫টি স্টেশনে। শুনেছি কলকাতা থেকে মুম্বাই যেতে এটিই সব চাইতে দ্রুত গতির ট্রেন।

এর আগে গেল ১৯ মার্চ বাংলাদশের ম্যাচের সংবাদ সংগ্রহের জন্য এই হাওড়া থেকেই আমরা বেঙ্গালুরু গিয়েছি। কিন্তু সময়টি ছিল বিকেল বেলা, তাই হাওরার সকালের দৃশ্যটি আমাদের অদেখা ছিল। সঙ্গত কারণেই হাওরার সকাল বেলার কর্ম ব্যস্ততা দেখতে আমার চোখ ছিল জানালার বাইরে। আর ট্রনের জানালা দিয়ে দেখছিলাম এখানকার মানুষের দিনের প্রথম প্রহরের কর্মব্যস্ততা। কেউ ছিলেন সকাল বেলার পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত, কেউ স্কুলের পথে, দোকানিরা দোকান খুলে দিনের পসরা শুরুর কাজে আর চাকুরিজীবিরা অফিস আদালতে সপ্তাহের প্রথম দিনের হাজিরা দিতে।

এভাবে দেখতে দেখতে এক সময় হাওরার নগরজীবন দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে যায়। দৃষ্টির সীমানায় আসে গ্রাম্য জীবন। রেল লাইনের পাশে লোকালায় না থাকায় এখানকার মানুষের জীবন যাত্রা দেখার সৌভাগ্য হয়নি, তাই বিস্তীর্ণ ফসলী মাঠ দেখে দেখেই চোখের তৃষ্ণা মিটিয়েছি।

ভৌগলিক ভাবেই ভারতের ভুখণ্ড বিশাল, তাই ভু-রাজনীতিতে ঐতিহাসিকভাবেই দেশটি বেশ প্রভাবশালী যা  তাদের পরিণত করেছে আঞ্চলিক শক্তিতে। এখানে হঠাৎ করেই ভারতে ভু-রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে আনার একটি কারণ আছে, পশ্চিমবঙ্গ পেরিয়ে যাবার পর আমরা যখন ছত্রিশগড় ও ঝাড়খন্ডে আসি তখন এখানকার বিশাল ল্যান্ডস্কেপ দেখে বারবারই ফিরে যাচ্ছিলাম, সেই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের স্নাতক তৃতীয় বর্ষে। সেখানে ভু-রাজনীতি কোর্সে পড়েছিলাম বিশাল ভু-খন্ড একটি দেশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান এনে দেয়। ভারতের এমন বিশাল ভু-খন্ড দেখে তাই বারবারই ভু-রাজনীতি কোর্সের কথা মনে পড়ছে।

যা হোক রাজনীতির কথা বাদ দেই। আসি মুল আলোচনায়। শুধু সারি সারি গগণচুম্বি পাহাড়ই নয়, ছত্রিশ গড় ও ঝাড়খন্ডের বিস্তীর্ণ নয়নাভিরাম ল্যান্ডস্কেপ গুলো যে কারো মনই আলোড়িত করবে। সারি ধরা গগনচুম্বি পাহাড়ের পাদদেশে প্রকৃতির নিজ হাতে সাজনো বিস্তীর্ণ সবুজ বনভুমি ও কদাচিত লোকালয় গুলো যে কাউকেই তার কোলে যেতে আকর্ষিত করবে।

শুধু পাহাড়, সবুজ বনানী কিংবা কদাচিত চোখে পড়া লোকালয়ই নয়, ছত্রিশ গড় ও ঝাড়খন্ড’র ছোট ছোট পাথুরে নদীগুলোও একবারের জন্য হলেও ট্রেনের জানালা থেকে আপনার দৃষ্টি সীমানায় আসবেই। কী মনোমুগ্ধকর!

এই রুটের রেল ভ্রমনে এলে আরেকটি বিষয় চোখে পড়ার মত আর সেটি হলো, ট্যানেল যা কলকাতা বেঙ্গালুরু রুটে চোখে পড়েনি। ঝাড়খন্ডে সূর্যের আলোতে ট্রেন চলতে চলতে হঠাৎ অন্ধকার। ট্রেন প্রবেশ করছে ট্যানেলে, গতিও কমে যাচ্ছে। টানেলের মৃদু আলোতে হেলে দুলে ভেদ করে যায় আঁধারে আবৃত্ত সেই ট্যানেল।

শুধু ঝাড়খণ্ডই নয়, এমন ট্যানেল মহারাষ্ট্রেও চোখে পড়বে। মুম্বাই যেতে মাত্র আধা ঘণ্টা আগে আরও একটি ট্যানেল পথে পড়ে। প্রকান্ড পাহাড়ের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া এই টানেলটি পার সময় লাগে প্রায় ৫ মিনিট। আর টানেলের মধ্যদিয়ে যাবার অনুভুতিটি সত্যিই অন্যরকম। মনে হয়, অন্ধকার গহবরে প্রবেশ করছি।

টানেল থেকে বের হয়ে যখন ভারতের এই অঞ্চল দেখে মনে হয় এখন আবাদের সময় নয়। তাই রেল লাইনের দুই পাশের জমিগুলোতে কোন শষ্য নেই। নির্দিষ্ট দুরত্বের বড় ও মাঝারি বনজ ও ফলজ গাছগুলোর সমন্বয়ে সাজানো বনভুমির মধ্য দিয়েই আমরা ছুটে চলেছি মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে।

এভাবে দেখতে দেখতে দিন পেরিয়ে এক সময় রাত হয়ে যায়। রাতের আঁধারে কেটে যায় পুরো উরিষ্যা ও মধ্যপ্রদেশ। কখনও আঁধার কখনও আলো এভাবেই করতে করেতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাইনি। যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখি আমাদের গন্তব্য মুম্বাইয়ে পৌঁছে গেছি।


বাংলাদেশ সময়: ০১৫৩ ঘণ্টা,
মার্চ ৩০, ২০১৬
বিএস  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।