ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

মাঠের মানুষ আব্দুস সাত্তার কচি

সাজ্জাদ খান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৬
মাঠের মানুষ আব্দুস সাত্তার কচি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা থেকে ফিরে: শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার হিসেবে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন আব্দুস সাত্তার কচি। এক সময় এ মাঠেই দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন ব্যাট-বল হাতে।

খুলনা জেলা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন, খেলেছেন বিভাগীয় দলে। বয়সভিত্তিক দলের কোচের ভূমিকায়ও ছিলেন কিছু দিন। আবু নাসের স্টেডিয়ামের সব ঘাসই চেনা তার। সন্তানের মতোই আগলে রেখেছেন প্রিয় মাঠটিকে।
 
মাঠকে কতটা ভালোবাসেন তার নজির মিললো স্টেডিয়াম সম্পর্কে তার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের নমুনা দেখে। ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৬- দীর্ঘ ৪০ বছরের সমস্ত ঘটনা টুকে বানিয়েছেন একটি ফাইল। ফাইলের শেষ পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ মাঠে হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ-জিম্বাবেুয়ে সিরিজের তথ্য। ক্রিকেট-অন্তঃপ্রাণ এ মানুষটির মুখোমুখি হয়েছিল বাংলানিউজ। স্টেডিয়ামেই কথা বলেছেন খুলনার ক্রিকেট, ক্রিকেটার, কোচ ও মাঠ নিয়ে।
 
বাংলানিউজ: এ মাঠটিকে কতোটা ভালোবাসেন?
আব্দুস সাত্তার: এক সময় এ মাঠে কত খেলেছি..। এখন এই মাঠের দেখভালের দায়িত্ব পালন করছি। এ মাঠকে সন্তানের মতো করেই দেখি।
 
বাংলানিউজ: আবু নাসের স্টেডিয়ামের বিশেষত্ব কী?
আব্দুস সাত্তার: সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, এ মাঠে খেলতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যেহেতু দলের অধিকাংশ ক্রিকেটার খুলনা বিভাগের। এ মাঠটা হলো ফিল্টার ফিল্ড। মাঠের নিচে পানি শোষনের ব্যবস্থা রয়েছে। মাটির নিচে অনেকগুলো হোল বসানো। বৃষ্টির পানি মাটি শুষে নেওয়ার পর ওই হোলের পানি সরাসরি ড্রেনে চলে যায়। মাঠে যে ঘাস দেখতে পাচ্ছেন এ গুলো সব দূর্বা ঘাস। উইকেট থেকে মাঠটি ২২ ইঞ্চি ঢালু।
 
বাংলানিউজ: আপনার খেলোয়াড়ি জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
আব্দুস সাত্তার: খুলনার সন্তান আমি। আমার বয়স যখন ১০, তখন থেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু করি। তখন কুষ্টিয়ায় থাকতাম। বাবার চাকরির সুবাদে বদলি হয়ে খুলনায় আসি। ১৯৭৪ সালে প্রথম জাতীয় লিগ যেটা হলো সেটা খুলনা স্টেডিয়ামে হলো বরিশালের বিপক্ষে। তারপর ১২ বছর জেলা দলে অংশ নেই। তিন বছর  অধিনায়কত্ব করি। প্রথম বিভাগে আজাদ বয়েজের হয়ে খেলতাম।
 
বাংলানিউজ: ক্রিকেট ছাড়ার পর?
আব্দুস সাত্তার: ১৯৮২ সালে ভারতের পাতিয়ালায় ইন্দিরা গান্ধী স্কলারশিপ নিয়ে ক্রিকেটের উপর ডিপ্লোমা করি। পেশাগত জীবনে আমি ছিলাম সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
 
বাংলানিউজ: খুলনার ক্রিকেটের জাগরণ কখন শুরু হলো?
আব্দুস সাত্তার: আমি ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় লিগে খুলনা বিভাগের কোচ ছিলাম। সে সময় অর্নূধ্ব-১৯ টিম নিয়ে গিয়েছিলাম ঢাকায়। খুলনা চ্যাম্পিয়ন হয়। সে সময় ঢাকার বিভিন্ন ক্লাব আমাদের ক্রিকেটারদের নিতে লাগলো। সে টিমে ছিল রানা (প্রয়াত মাঞ্জারুল ইসলাম), মাশরাফি, সেলিম, (সাবেক উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান) আরও অনেকে।   এরপর ২০০২-০৩ এ নিয়ে ঝড়ু (হাসানুজ্জামান), সেতু, রানা ডিভিশন টিমে চলে এলো। একই বছরে খুলনা লংগার ভার্সন চ্যাম্পিয়ন ও ওয়ানডে ফরম্যাটে রানার আপ হলো ঢাকার সাথে হেরে। খুলনার ক্রিকেটের জাগরণটা তখনই হলো। এখান থেকে ক্রিকেটাররা বিভিন্ন টিমে সুযোগ পেতে শুরু করলো।
 
বাংলানিউজ: খুলনার ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে পেছন থেকে কারা কাজ করেছেন?
আব্দুস সাত্তার:  এর কৃতিত্ব প্রয়াত কোচ সালাউদ্দিনের আছে। তিনি খুলনা ডিভিশনের কোচ ছিলেন। এছাড়া ইমতিয়াজ আহমেদ পিলু মেয়েদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের সিংহভাগ খেলোয়াড় তার হাত ধরে উঠে এসেছে। শঙ্কর নামে একজন উইকেটরক্ষক ছিলেন তিনি এটার পেছনে খুব খাটাখাটি করেছেন।
 
বাংলানিউজ: নারী ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় অবদান কাদের?
আব্দুস সাত্তার:  নারী ক্রিকেট নিয়ে এখনও লেগে আছে ইমতিয়াজ আহমেদ পিলু। খুলনার বিভাগীয় কোচ তিনি। তার হাত ধরে জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার এসেছে। শুকতারা, রিপা, রুমানা, সালমা, জাহানারা, শারমিন আক্তার-এরা পিলুর হাত ধরে এসেছে। নারীদের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে ২০১১ থেকে তাদের ইনডোর ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়।   দুপুর আড়াইটার পর কেবল নারী ক্রিকেটাররা ইনডোরে অনুশীলন করে।

খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়ামের সকল তথ্য (আব্দুস সাত্তারের ফাইল থেকে):
১৯৭৬ সাল: খুলনায় একটি বিভাগীয় স্টেডিয়াম তৈরির জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ খুলনা-যশোর সড়কের পাশ্বে মুজগুন্নি নামক স্থানে ১৩.৮৮ একর জমি অধিকরণ করে।
১৯৮০ সাল: মাটি ফেলার কাজ শুরু হয়।
১৯৮৩ সাল: স্টেডিয়ামের পশ্চিম-পার্শ্বে আংশিক গ্যালারি ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অফিস তৈরির কাজ শুরু হয়।
১৯৯৯ সাল: স্টেডিয়ামের চার পাশে একতলা গ্যালারির কাজ শুরু হয়।
২০০২ সাল: ক্রিকেট খেলার উপযোগী একটি মাঠ তৈরির জন্য বিসিবিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। বিসিবি মাঠ, পাঁচটি উইকেট, প্যাভিলিয়ন ভবন, মুভেবল সাইডস্ক্রিন ও স্কোরবোর্ড তৈরি করে।
২০০৩ সাল: প্রথমবারের মতো কোনো বিদেশি ক্রিকেট দলের সঙ্গে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলে এসিসি কম্বাইন্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
২০০৪ সাল: যুব বিশ্বকাপের ৬টি ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৫ সাল: ২৫ নভেম্বর প্রথমবারের মতো প্রথম শ্রেণির ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দল। এরপর বাংলাদেশ ‘এ’ ও শ্রীলঙ্কা একাডেমি দলের মধ্যে ২টি তিনদিনের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৬ সাল: ২৮ নভেম্বর দেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। ৩০ নভেম্বর প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৭ সাল: শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দল ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের মধ্যে ২টি চারদিনের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৮ সাল: বাংলাদেশ একাডেমি দল ও দক্ষিণ আফ্রিকা একাডেমি দলের মধ্যে একটি চারদিনের ম্যাচ ও একটি একদিনের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৯ সাল: ফেব্রুয়ারিতে ত্রিদেশিয় মহিলা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। বিসিবি অনূর্ধ্ব-১৯ ও ও শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের একটি তিনদিনের, একটি একদিনের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা।
২০১০ সাল: ২৬ মার্চ বিশ্বকাপের বিকল্প ভেন্যু হিসেবে প্রায় ৫৭ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়।
২০১২ সাল: ১২ অক্টোবর আইসিসির ম্যাচ রেফারি রোশান মাহানামা খুলনা ভেন্যু পরিদর্শন করে অক্টোবরের শেষের দিকে সপ্তম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। আইসিসির ১০৭তম ও দেশের ৭ম টেস্ট ভেন্যুর মর্যাদা পায় শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম। ২১-২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে প্রথম টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৩ সাল: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ৮টি ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৪ সাল: বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে একটি টেস্ট হয়।
২০১৫ সাল: বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস ওপেনিংয়ে রেকর্ড ৩১২ রানের জুটি গড়েন। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচটি ড্র করে বাংলাদেশ।

২০১৬ সাল: জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৪ ঘণ্টা, ০৬ এপ্রিল ২০১৬
এসকে/এমআর

** জাতীয় দলে ফিরবেন, বিশ্বাস জিয়ার
** লক্ষ্যটা নিজের ভেতরেই রাখতে চান সোহান
** ‘মাশরাফি ভাইয়ের রুমেই বেশী আড্ডা হতো’
** আবু নাসের স্টেডিয়াম যেভাবে ‘লাকি ভেন্যু’ হলো
** ক্রিকেটভক্ত-ক্রিকেটারভক্ত মিম, আফরিদ
** বিশ্বকাপের ক্যাচ দুটি মনে রাখবেন সৌম্য
** ‘লাল-সবুজ’ বাড়ির বাসিন্দা সৌম্য
** সৌম্যর সুন্দরবন-ট্রিপ
** মাশরাফিতে মুগ্ধ মুস্তাফিজের বাবা
** মুস্তাফিজের বোলিংটাই কেবল পাল্টেছে
** ‘কাটার স্পেশালিস্ট’ এর শুরু এ মাঠেই
** গ্রামের বাড়িতে দুরন্ত মুস্তাফিজ
** ক্রিকেটাঙ্গনে দাপট দেখানো খুলনার পথে…

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।