চট্টগ্রাম থেকে: বিপিএলের চলমান আসরে ড্যারেন স্যামি-সাব্বির রহমান-মেহেদি মিরাজ-মুমিনুলদের রাজশাহী কিংসকে হারিয়ে জয়ে ফিরলো তামিম ইকবালের চিটাগং ভাইকিংস। আসরের ১৬তম ম্যাচে তাসকিনের বোলিং তাণ্ডব আর মোহাম্মদ নবীর ব্যাটিং তাণ্ডবে ১৯ রানের জয় পেয়েছে ভাইকিংস।
এর আগে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত শুরু পায় চিটাগং। কিন্তু, পরের চার ম্যাচেই হেরে নিজেদের হারিয়ে খুঁজতে থাকে তামিমরা। এ ম্যাচের আগে জয়ে ফেরার লক্ষ্যে ঘরের মাঠেই হারের স্বাদ পেয়েছিল তারা। তবে, এবার আর জয়বঞ্চিত হতে হয়নি চিটাগংকে।
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে আনামুল হক ও মোহাম্মদ নবীর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে পাঁচ উইকেটে ১৯০ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাঁড় করায় চিটাগং। জবাবে, রাজশাহীর ইনিংস থামে ১৭১ রানের মাথায়।
চিটাগংয়ের হয়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে স্কোরবোর্ডে ১০৫ রান (৫৫ বল) তোলেন আনামুল-নবী। দু’জনই অর্ধশতক হাঁকান। ক্যারিয়ার সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংস উপহার দেন নবী। রাজশাহী বোলারদের ওপর দিয়ে রীতিমতো ‘স্টিমরোলার’ চালান আফগান অলরাউন্ডার। ৬ চার ও ৬ ছক্কায় ৩৭ বলে ৮৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে অপরাজিত থাকেন তিনি। বল হাতে তাসকিন একাই তুলে নেন ৫টি উইকেট। ৪ ওভার বল করে টাইগার এই পেসার খরচ করেন মাত্র ৩১ রান।
১৯তম ওভারে আউট হওয়ার আগে আনামুলের ব্যাট থেকে আসে ৪০ বলে ৫০। তাতে ছিল ৪টি চার ও ২টি ছক্কার মার। তাকে সামিত প্যাটেলের তালুবন্দি করেন ফরহাদ রেজা।
শুক্রবারের (১৮ নভেম্বর) ম্যাচটিতে টস জিতে তামিমদের ব্যাটিংয়ে পাঠান রাজশাহী অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। হারের বৃত্ত (টানা চার ম্যাচ) থেকে বের হতে জয় ভিন্ন কিছুই ভাবেনি চিটাগং। অন্যদিকে, এক ম্যাচের বিরতিতে জয়ে ফিরতে মরিয়া ছিল স্যামি-সাব্বিররা।
ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই অধিনায়ক তামিমের (৫) উইকেট হারায় চিটাগং। দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে তাকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন উঠতি তারকা মেহেদী হাসান মিরাজ। ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত দিলেও খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার ডোয়াইন স্মিথ। পঞ্চম ওভারে আবুল হাসানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৯ বলে ৩৪ রান করেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান।
দলীয় ৫৮ রানের মাথায় রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন নিউজিল্যান্ডের গ্রান্ট এলিয়ট (৮)। মাত্র ২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন জহুরুল ইসলাম। দশম ওভারে তাকে ফরহাদ রেজার ক্যাচে পরিণত করেন ইংলিশ অলরাউন্ডার প্যাটেল।
সামিত প্যাটেল দু’টি ও একটি করে উইকেট নেন ফরহাদ রেজা, মেহেদী হাসান মিরাজ, আবুল হাসান।
১৯১ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে দলকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন ওপেনার মুমিনুল হক এবং জুনায়েদ সিদ্দিক। ওপেনিংয়ে এ জুটি থেকে আসে ৪৪ রান। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বিদায় নেন মুমিনুল। ব্যক্তিগত ২২ রানে তাসকিনের বলে জহুরুলের তালুবন্দি হন তিনি। ১৪ বলে চারটি চারের সাহায্যে মুমিনুল তার ইনিংসটি সাজান। ইনিংসের দশম ওভারে গ্রান্ট এলিয়ট ফিরিয়ে দেন ব্যক্তিগত ৩৮ রান করা জুনায়েদ সিদ্দিককে। ২৮ বলে একটি চার আর তিনটি ছক্কায় জুনায়েদ তার ইনিংসটি সাজান।
এরপর জুটি গড়েন সাব্বির রহমান এবং উমর আকমল। এ জুটি থেকে আসে আরও ৩৪ রান। ১২ বলে দুই চার আর এক ছক্কায় ২১ রান করে তাসকিনের বলে স্মিথের তালুবন্দি হন আকমল। দলীয় ১১২ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় রাজশাহী।
তিন উইকেট হারালেও রাজশাহীর রানের চাকা ঘোরান আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সাব্বির রহমান। তবে, ব্যক্তিগত ৪৬ রান করে ঝড়ের ইঙ্গিত দেওয়া সাব্বিরকে বিদায় করেন ইমরান খান। ৩০ বলে একটি চার আর চারটি ছক্কায় সাব্বির তার ইনিংস সাজিয়ে তামিমের তালুবন্দি হন। দলীয় ১২৮ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় রাজশাহী। এর পরের ওভারেই বিদায় নেন সামিত প্যাটেল। মোহাম্মদ নবীর বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন ৬ রান করা প্যাটেল।
রাজশাহীকে স্বপ্ন দেখানো দলপতি ড্যারেন স্যামিও ফিরে যান দলীয় ১৫১ রানের মাথায়। ইমরান খানের বলে বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৭ বলে দুই ছয়ে ১৪ রান করা ক্যারিবীয়ান তারকা স্যামি। ১৮তম ওভারে বিদায় নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তাসকিনের তৃতীয় শিকারে সাজঘরে ফেরেন রান শ্রীবর্ধানে। পরের বলেই বোল্ড করে তাসকিন ফিরিয়ে দেন ২ রান করা মিরাজকে। তবে, হ্যাটট্রিক বঞ্চিত হন টাইগার পেসার তাসকিন।
শেষ ওভারের প্রথম বলেই ফরহাদ রেজাকে (৯) ফিরিয়ে নিজের ৫ উইকেট তুলে নেন তাসকিন। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারানো রাজশাহীর ইনিংস থামে ১৭১ রানের মাথায়।
চিটাগং একাদশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), ডোয়াইন স্মিথ, আনামুল হক (উইকেটরক্ষক), মাহমুদুল হাসান, মোহাম্মদ নবী, গ্রান্ট এলিয়ট, নাজমুল হোসেন মিলন, সাকলাইন সজিব, জহুরুল ইসলাম, ইমরান খান, তাসকিন আহমেদ।
রাজশাহী একাদশ: মুমিনুল হক, জুনায়েদ সিদ্দিক, সাব্বির রহমান, ওমর আকমল, সামিত প্যাটেল, মিলিন্ডা সিরিবর্ধনে, ড্যারেন স্যামি (অধিনায়ক), নুরুল হাসান (উইকেটরক্ষক), মেহেদী হাসান মিরাজ, ফরহাদ রেজা, আবুল হাসান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
এমআরপি