ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

শুভ জন্মদিন: বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘ফাইটার’ সুজন

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১২ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৯
শুভ জন্মদিন: বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘ফাইটার’ সুজন খালেদ মাহমুদ সুজন-ছবি: শোয়েব মিথুন

বাংলাদেশের ক্রিকেটে তার অবদান অনস্বীকার্য। ক্রিকেটার হিসেবে সফল ক্যারিয়ার শেষে সংগঠক, কোচ, ম্যানেজার সব ভূমিকাতেই তার দেখা মেলে। বিশ্বকাপের পর কোচবিহীন হয়ে পড়া টাইগারদের অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দায়িত্ব নিয়ে বর্তমানে শ্রীলঙ্কা সফরে আছেন তিনি। টাইগারদের প্রয়োজনে সবসময়ই দলের পাশে ছায়ার মতো লেগে থাকা খালেদ মাহমুদ সুজনের আজ ৪৮তম জন্মদিন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক ওয়ানডে ও টেস্ট অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনের জন্ম ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই। তিনি একাধারে একজন মিডিয়াম পেস বোলার ও মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন দলের নিয়মিত সদস্য।

এর মধ্যে ২০০৩ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ছিলেন দলের অধিনায়ক। সেসময় তাকে বলা হতো ক্রিকেট মাঠের ‘ফাইটার’।

টাইগার ওয়ানডে দলপতি মাশরাফির সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত কোচ সুজনক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোচিংয়ে জড়ান সুজন। ঘরোয়া ক্রিকেটের জায়ান্ট ঢাকা আবাহনী থেকে শুরু করে বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি ঢাকা ডায়নামাইটসের কোচিং করিয়েছেন সাফল্যের সঙ্গে। সেই সঙ্গে জাতীয় দলের সহকারী কোচ হিসেবেও ছিলেন দীর্ঘদিন। পরবর্তীতে দলের ম্যানেজার এবং ভারপ্রাপ্ত কোচ হিসেবেও একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাহমুদ ছিলেন মূলত বোলার। পাশাপাশি ব্যাটিংও করতে পারতেন। দেশের ক্রিকেটে তার স্মরণীয় অবদানের কথা বলতে গেলে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক ম্যাচটির কথা না বললেই নয়। ওই ম্যাচে ব্যাট হাতে ২৭ রান করার পর বল হাতে ১০ ওভারে ৩১ রান খরচ করে নেন ৩ উইকেট। এমন অসাধারণ পারফরম্যান্স তাকে ম্যাচ সেরার পুরস্কার এনে দেয়। এই ম্যাচ দিয়েই বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় বাংলাদেশ।

সুজন ছিলেন কার্যকর মিডিয়াম পেসারবাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের আক্ষেপ জাগানিয়া ম্যাচটির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? ২০০৩-০৪ মৌসুমে পাকিস্তান সফরের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট তথা মুলতান টেস্টে অল্পের জন্য প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। ইনজামাম-উল-হকের বীরত্বপূর্ণ ব্যাটিংয়ে সেবার হেরে যাওয়া ম্যাচ ১ উইকেটে জিতে যায় পাকিস্তান। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে বল হাতে ৩৭ রানে ৪ উইকেট ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৮ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন অধিনায়ক সুজন।

পাকিস্তানের বিপক্ষে মুলতান টেস্টে অনেকের মতে বাংলাদেশই জয়ী। কিন্তু পাকিস্তানের নিয়ম ভঙ্গ করে উইকেটে পানি ঢালা আর লঙ্কান আম্পায়ার অশোকা ডি সিলভার অদ্ভুত ও পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং তা হতে দেয়নি। ওই ম্যাচে উমর গুলের বাউন্সার হেলমেটের ফাঁক গলে অলক কাপালির চোখের উপরে আঘাত করে। কলকল করে রক্ত বের হলেও বড় ব্যান্ডেজ বেঁধে ব্যাট চালিয়ে যান কাপালি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বুড়ো আঙুলে আঘাত পেয়ে ফের মাঠ ছাড়েন।  

খালেদ মাহমুদ সুজন-ছবি: সংগৃহীতদলের যখন ৭ উইকেট নেই, তখন ইনজুরি নিয়েই ক্রিজে ফেরেন তিনি। কিন্তু ইয়াসির আলীর একটা বল তার ব্যাটের কানায় লেগে পাকিস্তানি অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক রশিদ লতিফের গ্লাভস গলে পড়ে যায়। কিন্তু ওই বল সঙ্গে সঙ্গে মাটি থেকে কুড়িয়ে আবেদন করলে আউট দেন অশোকা! এরপর ‘মুলতানের সুলতান’ ইনজামামের অতিমানবীয় ব্যাটিং।  

এর মাঝে অবশ্য কিন্তু আছে। উমর গুলকে একবার নিশ্চিত রান আউটের সুযোগ পেয়েও ভদ্রতার চূড়ান্ত নজির স্থাপন করেন মোহাম্মদ রফিক। ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিতে মরিয়া ছিলেন ইনজামাম। আর এজন্য রফিক বল করার আগেই ক্রিজের মাঝে দৌড়ে চলে যান উমর গুল। চাইলেই মানকাডিং করতে পারতেন রফিক। আর তা হলে গল্পটা অন্যরকমও হতে পারত। ইনজামামের রানের চাকাও হয়ত এত দূর যেতে পারত না।  

যাই হোক, এই ম্যাচ দিয়ে ইনজামামের ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবিত হলেও শেষ হয়ে যায় রশিদ লতিফের ক্যারিয়ার। ওটাই তার শেষ টেস্ট। ৫ ওয়ানডে ও ১ টেস্টের জন্য নিষিদ্ধ হন। এরপর সেই ইনজামামের কাছেই নেতৃত্বও হারান তিনি। আম্পায়ার অশোকাও আইসিসি’র এলিট প্যানেল থেকে বাদ পড়েন।  

মুলতান টেস্টে হেরে যাওয়ার পর চোখ মুছতে মুছতে মাঠ ছাড়েন সুজন-ছবি: সংগৃহীতকিন্তু বাংলাদেশ হেরেও পায় বীরের সম্মান। অধিনায়ক সুজনের ক্যারিয়ারও হয় দীর্ঘায়িত। কিন্তু ম্যাচ শেষে কান্না ভেজা চোখে মাঠ ছাড়ছেন সুজন-রফিকরা, এই দৃশ্য আজও দেশের ক্রিকেটভক্তদের হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। বিশেষ করে অধিনায়ক সুজনের রুমাল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে মাঠ ছাড়ার দৃশ্য সেসময় ক্রিকেটবিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল।

ম্যাচটা জিততে পারলে অবশ্য ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে যেতেন তিনি। হয়ে যেতেন বাংলাদেশকে টেস্ট জেতানো প্রথম অধিনায়ক। তা হয়তো হয়নি। কিন্তু দেশের ক্রিকেটের জন্য অবদান রাখার ক্ষেত্রে তার আগ্রহের কোনো কমতি নেই আজও। টাইগারদের জরুরি প্রয়োজনে সবার আগে ডাক পড়ে তারই।

শুভ জন্মদিন ‘ফাইটার’।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৯
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।