ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ডাস্টবিনে পলিথিন সরবরাহ, রেলওয়ের মাসে গচ্চা ১৭ লাখ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২৩
ডাস্টবিনে পলিথিন সরবরাহ, রেলওয়ের মাসে গচ্চা ১৭ লাখ  ...

চট্টগ্রাম: রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশনে ডাস্টবিনের পলিথিন সরবরাহ ও সংরক্ষণের জন্য একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে প্রতিমাসে ১৭ লাখ টাকা পরিশোধ করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পলিথিন সরবরাহ তো দূরের কথা, কোনও কোনও স্টেশনে ডাস্টবিনেরই দেখা মিলেনি।

জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্টেশনের ডাস্টবিনে পলিথিন সরবরাহ ও সার্ভিসিং এবং সংরক্ষণ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার জন্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজারের সঙ্গে ওয়াহদিকা সার্ভিসেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দুই বছরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এজন্য ওয়াহদিকা সার্ভিসেসকে মাসে ১৭ লাখ টাকা পরিশোধ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

 

এ কাজের জন্য দুই বছর পর পর নতুন টেন্ডার আহ্বান করার নিয়ম থাকলেও গত ৭ বছর ধরে একটি প্রতিষ্ঠানই কোনও টেন্ডার আহ্বান না করে নবায়ন মাধ্যমে রেলওয়ের বিপুল টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশনে কোনও পলিথিন সরবরাহ করা হয় না। ডাস্টবিনে পলিথিন ছাড়াই ময়লা ফেলতে দেখা গেছে যাত্রীদের। যাত্রীরা যে যার মতো করে খাওয়া শেষে ময়লা ফেলে চলে যাচ্ছেন। ওয়াহদিকা সার্ভিসেস এর কোনও কর্মচারীকে ডাস্টবিনে পলিথিন সরবরাহ করতে দেখা যায়নি। কোনও স্টেশনে ৫টি আবার কোনও স্টেশনে ১০টি পর্যন্ত ডাস্টবিন দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেখানে একটি করে পলিথিন থাকার কথা থাকলেও সেটি দেখা যায়নি। এ কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে প্রতি ডাস্টবিনে মাসে ১ হাজার ৯৮৫ টাকা পরিশোধ করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এসব স্টেশনে ডাস্টবিনের দেখা মিললেও পলিথিনের দেখা মিলেনি।   

যাত্রীদের অভিযোগ, স্টেশনে ডাস্টবিন থাকলেও ময়লা যথাসময়ে সংগ্রহ করা হয় না। যার কারণে অনেক সময় ডাস্টবিন থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। যদি ডাস্টবিনের ময়লা সংগ্রহের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও টাকা পরিশোধ করে থাকে তাহলে তা অপচয় হয়ে যাচ্ছে।  

ষোলশহর স্টেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, ষোলশহর স্টেশনে আমরা পলিথিন তো দূরের কথা ডাস্টবিনের দেখাই পাইনি। স্টেশনের বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আর্বজনা পড়ে থাকে। ময়লা সংগ্রহের জন্য যে রেলওয়ে টেন্ডার দিয়েছে, তা শুনে অবাক হয়েছি।

শুধু তাই নয়, ঢাকা-চট্টগ্রামে বেডিং পোর্টার সরবরাহের জন্য প্রতিমাসে ৫ লাখ টাকা করে টেকনোক্রেটস নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এসব কাজের জন্য শ্রমিক প্রয়োজন হয় ৯ থেকে ১০ জন। কিন্তু টেকনোক্রেটস নামের প্রতিষ্ঠানটি সেখানে ৩২ জন শ্রমিকের কথা উল্লেখ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে অতিরিক্ত মজুরি গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।  

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের পিপিআর ২০০৮ লঙ্ঘন করে অলিউর রহমানের প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই লন্ড্রী ও ওয়াহদিকা সার্ভিসেসকে বার বার নবায়ন করার সুযোগ দিচ্ছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা।  

এ টেন্ডার নবায়নের জন্য ভাই ভাই লন্ড্রী ও ওয়াহদিকা সার্ভিসেসের মালিক অলিউর রহমান মাসে বড় অংকের টাকা মাসোয়ারা দেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজমুল ইসলামকে। তাই বিনা টেন্ডারে ওই প্রতিষ্ঠানকে নবায়নের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।  

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আসতে পারে। যা চলছে ভালই চলছে। কোনও অনিয়ম হচ্ছে না। আমাদের তদারকিরও কোনও ঘাটতি নেই।  

রেলওয়ের সঙ্গে এমন চুক্তির বিষয়ে জানেন না রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের চুক্তির বিষয়ে আমি অবগত নই। যদি আপনার কাছে কোন ডকুমেন্টস তাকে আমাকে দেন। আমি বিষয়টি দেখবো’।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২৩ 
বিই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।