ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌপথে যেভাবে চলছে পারাপার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০২৩
কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌপথে যেভাবে চলছে পারাপার ....

চট্টগ্রাম: ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে রানা প্লাজা ধস হয়। নিহতদের মধ্যে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার বেশ কয়েকজন ছিল।

সীতাকুণ্ডের কুমিরা থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাট পারাপারে প্রতিটি মরদেহ বাবদ গুনে গুনে ২০ হাজার টাকা নেয় তৎকালীন ঘাটের ইজারাদার। একারণে ক্ষোভে ফুসে ওঠে সন্দ্বীপের জনগণ।
এরপর ওই বছরই ঘাটের ইজারাদারের দায়িত্ব নেন এস এম আনোয়ার হোসেন।  

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ঘাটের ইজারা নিয়ে দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দাদের পারাপারে ওই ইজারাদার নানা ইতিবাচক পরিবর্তন আনেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কয়েক হাজার মরদেহ বিনামূল্যে পারাপার করা হয়। এছাড়া আগের ইজারাদাররা রাতের বেলা কোনো রোগী পারাপার করতেন না। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর আনোয়ার চেয়ারম্যান দিনে-রাতে রোগী পারাপার করছেন। এক্ষেত্রে অসহায় কেউ হলে একেবারে টাকা দিতে হয় না। আবার কেউ চাইলে অর্ধেক ভাড়ায় রোগী পরিবহন করতে পারে।

সন্দ্বীপ উত্তাল দরিয়া পারাপারে নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দা, মুক্তিযোদ্ধা ফোরকান উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, আরিফুল ইসলামসহ কয়েকজন বাসিন্দাদের সঙ্গে। তারা জানান, ২০১৩ সালের পর থেকে সীতাকুণ্ড থেকে সন্দ্বীপ দরিয়া পারাপারে নানা পরিবর্তন এসেছে। আগের চেয়ে ভাড়া বাড়ার পরিবর্তে উল্টো কমেছে। অথচ এ সময়ে তেলের দামসহ আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম বেড়েছে।

তারা জানান, ২০১৩ সালের আগে জনপ্রতি স্পিড বোটে ভাড়া নেওয়া হত ৪০০ টাকা। আবার ভিড় থাকলে বেড়ে ৪৫০ টাকা নেওয়া হত। ইজারাদার পরিবর্তন হওয়ার পর ভাড়া প্রথমে ৩৫০ টাকা করা হয়। এর দুই বছর পর আবার ভাড়া কমিয়ে ৩০০ টাকা করা হয় এবং তারও একবছর পর আরও কমিয়ে ২৫০ টাকা করা হয়। সবশেষ এ বছর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর ভাড়া ৩৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সন্দ্বীপ উপজেলায় যাতায়াতে নদী পাড়ি দেওয়া ছাড়া ভিন্ন কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে সীতাকুণ্ড কুমিরা থেকে গুপ্তছাড়া ঘাট ছাড়াও বাঁশবাড়িয়া এবং আমির মোহাম্মদ ফেরি ঘাট দিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলায় যাওয়া যায়। অন্যান্য ঘাটে স্পিড বোটের ভাড়া প্রতিজন ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়। শুধুমাত্র কুমিরা ঘাট দিয়ে ৩৮০ টাকা দিয়ে যাতায়াত করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন কুমিরা ঘাট থেকে জেলা পরিষদ এবং সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হয় ৯৩ হাজার ৭৫০ টাকা। আগের ইজারাদারকে দিতে হত ৬৯ হাজার টাকা। এছাড়া আগে স্পিড বোটচালকদের বেতন ১০ হাজার টাকা দেওয়া লাগতো। এখন তাদের বেতন দিতে হয় ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে ২০১৩ সাল থেকে বর্তমানে আনুষঙ্গিক নানা ব্যয় বাড়লে স্পিড বোটের ভাড়া উল্টো কমেছে। আবার বিভিন্ন পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আগে আলুর ৮৪ কেজির বস্তা ১২০ টাকা নেওয়া হলেও এখন দিতে হয় ৪৫ টাকা। চালের বস্তা ৬০ টাকা থেকে কমিয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে এবং সিমেন্টের বস্তা ৬০ টাকা থেকে কমিয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।

কুমিরা ঘাট থেকে গুপ্তছড়া ঘাট পারাপারে মোট ১৭টি স্পিড বোট রয়েছে। প্রতিটি বোটের বর্তমান মূল্য ২৮ লাখ টাকা। আগে দাম ছিল ১৬ লাখ টাকা। স্পিডবোটের প্রতিবছর ইঞ্জিন পরিবর্তন করতে হয়। প্রতিটি ইঞ্জিনের মূল্য ৮ লাখ ৮১ হাজার। আগে ছিল ৪ লাখ ৮৫ হাজার। ২০১৩ সালে মবিলের মূল্য ছিল লিটারপ্রতি ২০৫ টাকা, বর্তমানে মূল্য ৫৬০ টাকা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফোরকান উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, আনোয়ার চেয়ারম্যান ঘাট নেওয়ার পর থেকে সন্দ্বীপের মানুষের ঘাট নিয়ে সমস্যা হয়নি। তিনি দিনে-রাতে মানুষ পারাপারের সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছে। তিনি মরদেহ বিনামূল্যে পারাপার করে দেন। আনোয়ার চেয়ারম্যান ঘাট নেওয়ার পর থেকে রাতে রোগী পারাপারে কোন সমস্যা হয় না। তিনি যেকোনো সময়ে স্পিড বোট, যাত্রীবাহী কাঠের বোটের ব্যবস্থা করে দেন। গরীব ও অসহায় রোগীদের টাকা পয়সা ছাড় দেন।

এস এম আনোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান বলেন, আমি ইজারা নেওয়ার পর থেকে লোকজন পারাপারকে ব্যবসা হিসেবে দেখিনি। এটা মানবসেবা হিসেবে নিয়েছি। আগের চেয়ে বোটের যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। তারপরও আগের ইজারাদারের চেয়েও বর্তমানে ভাড়া কম নিচ্ছি। যাত্রীদের কাঁদা মাটি মাড়িয়ে যাতে যেতে না হয়, সেজন্য গুপ্তছড়া ঘাটে নিজে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে কাঠের ব্রিজ করেছি। যা প্রতিনিয়ত সংস্কার করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০২৩
এমআই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।