ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত যত ঘটনা

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৪
২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত যত ঘটনা ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: সংঘর্ষ, আন্দোলন, নিয়োগ কেলেঙ্কারি, বিতর্কিত পদোন্নতি, সাংবাদিক নির্যাতন, শিক্ষক সমিতি ও প্রশাসনের মধ্যে দ্বন্দ্বসহ নানান ঘটনায় ২০২৩ সাল জুড়ে আলোচনায় ছিলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। দেখে নেওয়া যাক এ বছর চবির আলোচিত সব ঘটনা।

চবি উপাচার্যের চার বছর

২০১৯ সালের ১৩ জুন থেকে উপ-উপাচার্য পদে থাকা অধ্যাপক শিরীণ আখতার উপাচার্য হিসেবে রুটিন দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ওই বছরের ৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান তিনি।

তিনিই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য। ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর চার বছর পূর্ণ হয়েছে অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের। সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্বাচনের পরপরই আসতে পারে নতুন উপাচার্য। তাই ইতিমধ্যে উপাচার্য হতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পদপ্রত্যাশী শিক্ষকরা। তাই নতুন বছরে আসতে যাচ্ছে নতুন প্রশাসনিক প্যানেল।

বারবার ঘোষণা দিয়েও সমাবর্তন আয়োজনে ব্যর্থ

দেখতে দেখতে চার বছর শেষ হয়েছে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গত চার বছরে অন্তত পাঁচবার সমাবর্তনের ঘোষণা দিলেও তা আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি, ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর, ২০২২ সালের ২৩ জুলাই, ২০২৩ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি এবং একই বছর আরও একবার সমাবর্তনের ঘোষণা দেন চবি উপাচার্য। সর্বশেষ গত ১৫ নভেম্বর গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে চবির পঞ্চম সমাবর্তন হতে পারে বলে জানান তিনি। ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪টি সমাবর্তন আয়োজন করতে পেরেছে চবি কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই অসন্তোষ লক্ষ্য করা যায়।

প্রক্টরসহ ১৮ পদ থেকে ২১ শিক্ষকের পদত্যাগ

২০২৩ সালের ১২ ও ১৩ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, বিভিন্ন হলের আবাসিক প্রভোস্ট, শিক্ষকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পদে থাকা ২১ জন একযোগে পদত্যাগ করেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেও মূলত উপাচার্যের সঙ্গে বিরোধের জেরে পদত্যাগ করেন তারা।  

শাটলট্রেন দুর্ঘটনা, ক্যাম্পাসজুড়ে তাণ্ডব

গত ৯ সেপ্টেম্বর চবির শাটল ট্রেনের ছাদে চড়ে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় হেলে পড়া গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ ঘটনার পর ক্যাম্পাসের উপাচার্যের বাসভবন, পরিবহন দপ্তরে থাকা প্রায় ৬৫টি বাসসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় শিক্ষার্থীরা। যা ছিলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন ভাঙচুরের ঘটনা। পরে এ ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এক হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি দুটি মামলা দায়ের করে কর্তৃপক্ষ। নাম উল্লেখ করা ১৪ আসামির মধ্যে ১২ জনই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সিক্সটি নাইন, সিএফসি ও বিজয় গ্রুপের সক্রিয় সদস্য।

চারুকলার শিক্ষার্থীদের ৬ মাসব্যাপী আন্দোলন

চট্টগ্রাম নগরে অবস্থিত চারুকলা ইন্সটিটিউটকে শহর থেকে ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের দাবিতে ২০২২ সালের ২ নভেম্বর থেকে ছয় মাসব্যাপী আন্দোলন করেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে সংস্কার কাজের জন্য ফেব্রুয়ারিতে চারুকলা এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর আরও দুই দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। পরে দীর্ঘ ৬ মাস আন্দোলন শেষে ক্লাসে ফিরতে বাধ্য হন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে একাধিকবার ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন চারুকলার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।  

এক ভবন উদ্বোধনে ব্যয় ৪৪ লাখ টাকা

চবির মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের নতুন একাডেমিক ভবন উদ্বোধনে ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ের ঘটনায় তুমুল আলোচনা সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।  

নজিরবিহীন সাংবাদিক নির্যাতন ও হেনস্তা 

২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত দুইজন সাংবাদিককে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করেছে ছাত্রলীগ। এদের মধ্যে রয়েছে দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিনিধি এবং ঢাকা স্টেট অনলাইন পোর্টালের একজন প্রতিনিধি। এছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে একজন নারী সংবাদকর্মী ও একাধিক গণমাধ্যমকর্মীকে হেনস্তা করেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এসব ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। যদিও দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। উল্টো সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় দুই ছাত্রলীগকর্মীকে ছয় মাস বহিষ্কার করা হলেও কয়েক মাস পরে মানবিক কারণ দেখিয়ে জড়িতদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া একটি সাংবাদিক হামলা ও দুইটি হেনস্তার ঘটনায় এখনও বিচার হয়নি।  

শিক্ষক সমিতি ও উপাচার্যের বিরোধ প্রকাশ্যে

বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির দ্বিমত সত্ত্বেও বাংলা বিভাগে ৭ জন ও আইন বিভাগের ২ জন নতুন শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্যের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়াতে দেখা যায় চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমানকে। এ ঘটনায় গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে কয়েক দফা উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যেরের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।  

ফারসি বিভাগের সভাপতির বিতর্কিত পদোন্নতি

নিজের গবেষণা নিজেই মূল্যায়ন করে পদোন্নতির অভিযোগ ওঠে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সভাপতি আছমা আক্তারের বিরুদ্ধে। পিএইচডি, এমফিল কিংবা গবেষণা প্রবন্ধগুলো পদোন্নতির জন্য যাচাই-বাছাই করা হয় বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সভায়। অথচ সে সভায় ছিলেন না পরিকল্পনা কমিটির বেশিরভাগ সদস্য। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশেই পদোন্নতি পান তিনি। যা নিয়ে পরবর্তীতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন আছমা আক্তার। এ ঘটনায় সংবাদ পরিবেশন করায় গণমাধ্যমকর্মীকে ‘আমার হাসবেন্ড ল’য়ার, আমার স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানো না’ বলে হুমকিও দেন তিনি।

সহকারী প্রক্টরের স্ত্রীর নিয়োগ কাণ্ড

তথ্য জালিয়াতির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়ার স্ত্রী অভি বড়ুয়ার শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করা হয় চবির ৫৪৪তম সিন্ডিকেট সভায়। এর আগে আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর তার বিরুদ্ধে তথ্য জালিয়াতির অভিযোগ তোলে বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটি। এদিকে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করা হলেও দেড় মাস পরেই বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের রিসার্চ ফেলোর ঊর্ধ্বতন সহকারী হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।  

নকলে ধরা পড়া শিক্ষার্থীকে শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ

২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ৪০৪ ও ৪০৬ নাম্বার কোর্সের টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় নকল করে শিক্ষকদের হাতে ধরা পড়েন অমর বণিক। তা সত্বেও গত ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে অমর বণিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে অবশ্য সিন্ডিকেট সভায় এ নিয়োগ বাতিল করা হয়।

নকল করে বহিষ্কার, তথ্য গোপন করে শিক্ষক, পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন

শিক্ষক হওয়ার দীর্ঘদিন পর সহপাঠীদের মাধ্যমে জানা গেলো চতুর্থ বর্ষের ৪০৮ নম্বর কোর্সে নকল করে বহিষ্কার হয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক সুলতানা সুকন্যা বাশার। এছাড়া শিক্ষক হওয়ার সময় গোপন করেছিলেন পাসের সনের আসল তথ্য। সুকন্যা বাশার ২০১৩ সালে চবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পান। ওই নিয়োগের আবেদন পত্রে কয়েকটি তথ্য জালিয়াতি করে হন প্রভাষক। তার অনার্স-মাস্টার্স দুটোর পাসের সন ২০০৮ সালে হলেও তিনি অনার্স ২০০৭ এবং মাস্টার্স ২০০৮ সাল উল্লেখ করেন আবেদনপত্রে। গত ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪৫তম সিন্ডিকেট সভায় পদোন্নতি বোর্ডের অসন্তোষ থাকায় শর্তসাপেক্ষে তাকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। যদিও পদোন্নতি বোর্ডের একজন সদস্য সুকন্যা বাশার ‘কিভাবে শিক্ষক হলেন’, এ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

ছাত্রলীগ সভাপতির ‘পা’ টিপানোর দৃশ্য ভাইরাল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের ৩১১ নম্বর কক্ষে শুয়ে মোবাইলে টিকটক দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল। আর তার পা টিপে দিচ্ছেন সংগঠনটির উপ-কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক শামীম আজাদ এবং সংগঠনের উপ-ক্রীড়া সম্পাদক শফিউল ইসলাম। গত ২০ মার্চ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবিটি ভাইরাল হলে দেশব্যাপী তুমুল আলোচিত হয় বিষয়টি।

বিভাগের অনিয়মের বিরুদ্ধে একাই আন্দোলনে শিক্ষার্থী

বিভাগের নানান অনিয়ম, অফিস স্টাফদের অপেশাদার এবং অসহযোগিতামূলক আচরণের বিরুদ্ধে পাঁচ দফা দাবিতে গত ১৭ ডিসেম্বর একাই আন্দোলনে নামেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী। এর প্রতিবাদে তিনি নিজের ভর্তি বাতিলেরও আবেদন করেন।

দুই শিক্ষার্থীর ‘ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড অর্জন’
 
সামাজিক কাজে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি বছর যুক্তরাজ্যের সম্মানজনক ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল হাসান (২৩) ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নিশাত সুলতানা চৌধুরী। এর মধ্যে আবদুল্লাহ সামাজিক সমতা নিশ্চিত করে বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন নিয়ে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া  নিশাত সুলতানা চৌধুরী ‘এক টাকায় শিক্ষা’ নামক অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানবাধিকার ইস্যুতে ভূমিকা রাখায় এ অ্যাওয়ার্ড পান।

প্রথমবারের মতো গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা

প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হয় গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রকাশনা মেলা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১টি বিভাগ, ২৪টি ল্যাবরেটরি ও ২০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র এবং চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটি (সিইউআরএইচএস) যৌথভাবে ‘চট্টগ্রাম রিসার্চ ফেস্টিভ্যাল’ শীর্ষক এই মেলার আয়োজন করে।  

দুই ছাত্রীর আত্মহত্যা

গত ৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের একটি কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে রোকেয়া খাতুন রুকু নামের ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার এক মাস পরেই স্থানীয় একটি মেস থেকে সুমি ত্রিপুরা নামে আরেক ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার সহপাঠীরা জানান, মৃতদেহের পাশে তেলাপোকা বা ইঁদুরের ওষুধ পাওয়া গেছে।

দফায় দফায় সংঘর্ষ

চলতি বছরে আধিপত্য বিস্তার, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে চবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপ-গ্রুপ। এবছর অন্তত ১১বার সংঘর্ষে জড়ায় সংগঠনটির অনুসারীরা। এতে সাধারণ শিক্ষার্থী, প্রক্টর সহ প্রায় দুই শতাধিক আহত হন। এছাড়া পান থেকে চুন খসলেই ক্যাম্পাসের মূল ফটকে তালা দিতে দেখা গেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের।

৪ বছর পর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই চবি ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণার পর ২০২২ সালের ৩১ জুলাই ৪২৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ কমিটিতে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৬-০৭ সেশনের রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি ও মার্কেটিং বিভাগের ২০১০-১১ সেশনের ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ক্যাম্পাসে দফায় দফায় সংঘর্ষ, সাংবাদিক মারধরসহ নানা অপকর্মের ঘটনায় ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ৪ বছর ৩ মাসের মাথায় চবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।  

ছাত্রলীগ নেতার অডিও ভাইরাল

গত ৩১ আগস্ট সন্ধ্যায় চবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসের একটি অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। অডিওতে ওই নেতাকে বলতে দেখা যায়, ‘রাজধানীতে ছাত্রলীগের সমাবেশে (১ সেপ্টেম্বর) না গেলে হল ছেড়ে চলে যেতে হবে’ নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি দেশব্যাপী আলোচিত হয়। পরবর্তীতে অডিও বার্তার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।

বিভিন্ন অনিয়মে বহিষ্কৃত ১৮ জন, ১৭ জনই ছাত্রলীগের

সাংবাদিক হেনস্তা, ছাত্রী হলে মারামারি, সংঘর্ষসহ ভিন্ন ৬ ঘটনায় ১৮ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃত ১৮ জনের মধ্যে ১৭ জনই শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপ-গ্রুপের নেতাকর্মী। এছাড়াও এসব ঘটনায় আরও ১০ জনকে সতর্ক করে প্রশাসন।  

৩০ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত দেশের সর্ববৃহৎ ২৩০০ একরের এ ক্যাম্পাস পার করেছে আরও একটি বছর। বিভিন্ন অর্জন আর অনিয়মে ২০২৩ সালে বারবার সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন বছরে পরিবর্তন হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ পুরো প্রশাসনিক পর্ষদ। তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা আরও একটি রোমাঞ্চকর বছরের।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২৪
এমএ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।