ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পুলিশের ড্রেস পরে নিরীহ ছাত্রদের ওপর আক্রমণ: নৌ প্রতিমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২৪
পুলিশের ড্রেস পরে নিরীহ ছাত্রদের ওপর আক্রমণ: নৌ প্রতিমন্ত্রী ...

চট্টগ্রাম: পুলিশের ড্রেস পরে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরেও সেদিন নিরীহ ছাত্রদের আক্রমণ করে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না। এখানে শ্রমিক যারা আছেন, অনেক দাবি আছে।

আমরা পাঁচ দফা দাবিতে স্কপের আন্দোলন করেছিলাম। সব রাজনৈতিক দল মিলে শ্রমিকদের ওই আন্দোলনে শরিক হয়েছিল। ছাত্রাবস্থায় আপনাদের দাবির প্রতি সমর্থন দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই শ্রমিক আন্দোলন চট্টগ্রাম বন্দর জ্বালিয়ে দেয়নি। সেই শ্রমিক আন্দোলন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়নি, পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করেনি। কখনো সেই দূতাবাসগুলোতে আক্রমণ করেনি। সেটা একটা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ছিল।  

আমরা ছাত্র ছিলাম। আমাদের দাবি ছিল প্রতিবছরে বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে হবে। তখন তিন বছরেও একটি বিসিএস পাওয়া যেত না। তিন বছরের অনার্স ছয় বছর লাগত। আমাদের দাবি ছিল ২৭ বছর থেকে ৩০ বছর চাকরির বয়স করতে হবে। আমরা সচিবালয় ভবন, শিক্ষা ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করেছি। কিন্তু কখনও ভেতরে ঢুকে আক্রমণ করিনি, ধ্বংস করিনি। ছাত্ররা আন্দোলন করবে। তারুণ্যই তো প্রতিবাদী হবে।  ভুল ত্রুটি, ভালো-মন্দ যা-ই থাক, তরুণদের একটি বোঝাপড়া আছে। সেই বুঝ দিয়ে তারা মাঠে নেমেছে এবং আন্দোলন করেছে। যদিও তাদের দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে হাইকোর্টের রায়ের ওপর আপিল করে সরকার।

২০১৮ সালে সরকারই তো এ কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছিল। সেটা আবার হাইকোর্ট বাতিলের রায় দিয়েছিল। আপিল বিভাগ সেটার ওপর আবার স্থিতাবস্থা দেয়। যেহেতু বারবার এরকম হচ্ছে, তাই ছাত্ররা দাবি করেছিল সংস্কার করে একটি আইনি কাঠামো করে দেওয়ার। আমাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের ঘাটতি হয়তো ছিল। প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে ছিলেন। সফর সংক্ষিপ্ত করে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেন। দুই মন্ত্রীর উদ্যোগে যখন ছাত্রদের সঙ্গে সরকারের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ তৈরি হয়েছে, তখনই আমরা দেখলাম ঢাকা শহরে অগ্নিসন্ত্রাস, তাণ্ডব ও জঙ্গি হামলা। কারণ যদি ছাত্ররা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে না, তারা তাড়াহুড়ো করে ঢাকা শহরে বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করা হলো। এমনকি পুলিশের ড্রেস পরে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরেও সেদিন নিরীহ ছাত্রদের আক্রমণ করে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।

মেট্রোরেল পুড়িয়ে দিল। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, যেটি আমাদের গর্ব ও অহংকার, দেশের সক্ষমতার প্রতীক। সেই সেতু ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হলো। ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণে সমগ্র পৃথিবী আপনাদের হাতের মুঠোয়। দুর্যোগ ভবনে আগুন দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের সার্ভার স্টেশন পুড়িয়ে দেওয়া হলো। আমিও জানতাম না দুর্যোগ ভবনে সার্ভার স্টেশন। সমগ্র পৃথিবীর সঙ্গে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশে আগে থেকে সংবাদের কনটেন্ট তৈরি করে বিদেশি গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হলো। বাংলাদেশকে একটি পরিত্যক্ত দেশ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হলো।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট লেগেছে। তারা কী চায় বাংলাদেশে? এ চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন হয়েছে তারা কী চায় না। চট্টগ্রামের টানেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন হয়েছে, বে টার্মিনাল, ঢাকা চট্টগ্রাম ফোর লেন সিক্স লেন হবে, ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হাইস্পিড ট্রেনের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এটা তারা চায় না। আগে বাংলাদেশকে মিসকিনের দেশ হিসেবে পরিচিত করে দেওয়া হতো। দারিদ্র্য জয় করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। এটা তাদের পছন্দ নয়। তারা বাংলাদেশকে দরিদ্র করতে চায়, ভিখারির দেশে পরিণত করতে চায়, এটিই তাদের স্বপ্ন। সরকার ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কী বলেছে, আমরা তিনবেলা খাই। দরকার হলে দুই বেলা খাবো, এক বেলার খাবার রোহিঙ্গাদের জন্য দিয়ে দেব। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ, দিনাজপুরের মানুষ পর্যন্ত পাশে তাদের দাঁড়িয়েছিল। মানবিক রাষ্ট্রের পরিচয় পেয়েছিলাম আমরা। কয়েক দিনের ধ্বংসযজ্ঞ দিয়ে বাংলাদেশের মতো মানবিক রাষ্ট্রকে গত কয়েকদিনের হত্যাযজ্ঞের মধ্যে দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে দেওয়া হলো।

মির্জা ফখরুলের অভিনয়

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এত রক্তপাত, হতাহতের ঘটনা আমরা কখনও দেখিনি। একজন দারোয়ান তার ভবনের দরজা খুলে দেয়নি বলে পরে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এক নারী সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য গেছেন। তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এটা কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না। এ দৃশ্যটা আমরা দেখলাম। ১৯৭১ সালে আমরা ছোট ছিলাম। তখন রাজাকার-আলবদর-আলশামসের সাধারণ মানুষকে খুন করেছে, নারীদের ধর্ষণ ও লুটপাট করেছে, একই দৃশ্য আমরা দেখলাম গত কয়েকদিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায়। ছাত্রদের আন্দোলনের ওপর ভর করে তারা যেভাবে ধ্বংসলীলা চালালো। ছাত্ররা স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা এ ধ্বংসাত্মক কাজের সঙ্গে জড়িত নয়। এ দেশ দখল করতে বিদেশ থেকে উসকানি দেওয়া হয়েছে। সে উসকানিতে মির্জা ফখরুল বললো— এ আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি আছে, এ সরকার উৎখাত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কিন্তু এখন মির্জা ফখরুল বলছেন— এ আন্দোলনের সঙ্গে আমরা নেই, আমরা সমর্থন দিয়েছি, কিন্তু এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত হইনি। এটা কী বিশ্বাসযোগ্য কথা। এতবড় অভিনেতা আমি রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখিনি। আমরা সিনেমা, নাটক, যাত্রা, পথনাটক দেখেছি। অনেক অভিনেতার অভিনয় দেখে প্রশংসা করেছি। এখন মির্জা ফখরুলের অভিনয় দেখে প্রশংসা না করে পারা যায় না। আগেরদিন বলছে এ আন্দোলন শেষ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারের পতন হবে না। আবার পরের দিন বলছে এ আন্দোলনের সঙ্গে আমরা নেই, সমর্থন দিয়েছিলাম। এ দ্বিচারিতার রাজনীতি, এ ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বাংলাদেশে বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের গণমাধ্যম এত বেশি শক্তিশালী, এত বেশি বিস্তৃত হয়েছে কোনো সংবাদ এখন আর গোপন থাকে না। সব সংবাদই মানুষ কোনো না কোনো ভাবে পেয়ে যায়।

দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা, সার্বভৌমত্ব ধরে রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। আমার এ স্বল্প জীবনে অনেক জরুরি অবস্থা দেখেছি। জিয়াউর রহমান, এরশাদের সময় জরুরি অবস্থা দেখেছি। এক-এগারোর সরকারের সময় জরুরি অবস্থা দেখেছি। এবারের জরুরি অবস্থা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে আনন্দিত করেছে। এ কারফিউ জারির সঙ্গে সঙ্গে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে।  

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে আমি ধন্যবাদ জানাব না, কৃতজ্ঞতা জানাব। কারণ আপনারা বাংলাদেশের লাইফলাইন এ চট্টগ্রাম বন্দরকে এক মিনিটের জন্যও বিচ্ছিন্ন হতে দেননি। আমি জানি করোনা মহামারির সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর পরিবারের অর্ধশতাধিক মানুষ জীবন দিয়েছে। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও আপনারা বন্দর বন্ধ করেননি। এবার তেমনি একটি মানবসৃষ্ট মহামারি গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছিল। তবুও আপনারা আপনাদের সাহস, দেশপ্রেম ও ভালোবাসা দিয়ে অর্থনীতির কথা চিন্তা করে এ বন্দরকে আগলে রেখেছেন। এ বন্দরকে সচল রেখেছেন। আমি ধন্যবাদ জানাই, এ এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। আমি নৌবাহিনী প্রধানকেও ধন্যবাদ জানাই। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছেন, আজ তিনি মোংলা বন্দর পরিদর্শন করছেন। চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের লাইফ লাইন। সমগ্র পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয় চট্টগ্রাম দিয়ে। চট্টগ্রাম বন্দরের বড় বড় স্থাপনা নৌ প্রধান পরিদর্শন ও নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল, বন্দর কর্মচারী পরিষদের (সিবিএ) মো. নায়েবুল ইসলাম ফটিক প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২৪
এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।