ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে শিশু গৃহকর্মীকে অমানুষিক নির্যাতন

আবদুল্লাহ আল মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৪
চট্টগ্রামে শিশু গৃহকর্মীকে অমানুষিক নির্যাতন ছবি: উজ্জ্বল ধর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: তামান্না। বয়স দশ।

গৃহকর্মী। হাসপাতালের বেডে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন নিষ্পাপ এ শিশুটি।
কচি মুখে গৃহকর্তীর পৈশাচিকতার চিহ্ন। আগুনে ছোট্ট দেহটির অধিকাংশই পুড়ে গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, সকালে পানি গরম না করায় শিশুটির গায়ে আগুন দিয়েছে গৃহকর্তী আয়েশা আকতার।

শুক্রবার সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার শুলকবহর পাখি ঘর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

শনিবার হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, গৃহকর্তী আয়েশা আক্তার শিশুটির বেডে বসে আছেন। তিনি যেমনটি ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন তাতেই সায় দিচ্ছেন তামান্না ও তার মা সালেহা বেগম। গৃহকর্তী আয়েশা আকতারের ভয়ে মা-মেয়ে দু’জনই জড়োসড়ো হয়ে আছেন। কৌশলে গৃহকর্তীকে সরিয়ে দেওয়ার পর কিভাবে শরীরে আগুন ধরেছে জানতে চাইলে মা-মেয়ে দু’জনই মুখে কুলুপ আটেন।

অভয় দেওয়া হলে ভীতু চোখে মায়ের দিকে তাকান তামান্না। মা সালেহা বেগম কি হয়েছে বলতে অনুরোধ করলে তামান্না বাংলানিউজকে বলেন,‘শুক্রবার সকালে পানি গরম না করায় আমাকে মারধর করে। পরে পানি গরম করার জন্য ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে চুলার দিকে এগিয়ে দিতেই আগুন আমার গায়ে লেগে যায়। এরপর কি হয়েছে আমি আর জানি না। ’

এতটুকুন বলতেই হাঁপিয়ে উঠেন শিশুটি। ভয়ার্ত চোখে বার কয়েক এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেন।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবদুল খালেক বাংলানিউজকে বলেন,‘পাশের সীটেই আমার এক স্বজন ছিল। মেয়েটি ও তার মা হাসপাতালে এসেই পানি গরম না করায় গৃহকর্তী গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলেছেন। কিন্তু পরে গৃহকর্তী ও তাদের স্বজনরা এসে ভয়ভীতি দেখানোর কারণে তারা এখন আর মুখ খুলছে না। ’ একই কথা বললেন বার্ন ইউনিটে ভর্তি অন্যান্য রোগীর স্বজনরাও।

আয়েশা আকতার। স্বামী মোশাররফ হোসাইন সিইপিজেডের ইয়ংওয়ানে হিসাব বিভাগে কাজ করেন বলে জানান। গৃহকর্মী তামান্না ও তার মা যাতে কারো কাছে অভিযোগ করতে না পারেন সে জন্য সবসময় পাহারায় রেখেছেন এ মহিলা ও তার স্বজনরা। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা না বলে সরে যান মোশাররফ হোসাইন।

আয়েশা আকতার বাংলানিউজকে বলেন,‘আমি তাকে পানি গরম করতে বলিনি। তবুও শুক্রবার সকালে নিজ থেকে সে পানি গরম করতে যায়। এসময় তার গায়ে আগুন লেগে যায়। পরে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে তাড়াতাড়ি গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলি। তারপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ’

অভিযোগ প্রসঙ্গে ‍জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ছোট মেয়ে কি কাজ করবে। আমি তাকে নিজের মেয়ের মতো দেখতাম। আমি কেন তাকে আগুন লাগিয়ে দেব। কাল থেকে মেয়েটির জন্য কয়েক হাজার টাকা খরচ করেছি। ’

সালেহা বেগম। স্বামী মমিন ভ্যান গাড়ি চালান। বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনায় হলেও থাকেন শুলকবহরের পাখিঘর এলাকায়। তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে তামান্না ২য়। বড় মেয়ে কাজ করেন একটি পোশাক কারখানায়। অভাব অনটনের সংসার। তাই গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে তামান্নাকে গৃহকর্মীর কাজে পাঠান।

সালেহা বেগম বাংলানিউজকে বলেন,‘মেয়েকে প্রায় সময় মারধর করতো আয়েশা আকতার। কয়েকদিন আগে মেয়েকে আনতে যাই। কিন্তু আমাকে আনতে না দিয়ে বলে কয়েকদিন পর বাসায় পাঠিয়ে দিবে। শুক্রবার বিকালে শুনি আমার মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ’

তিনি অভিযোগ করে বলেন,‘ঘরের সমস্ত কাজ আমার ছোট মেয়েটি দিয়ে করাতো তারা। এখন কি করবো। আমরা গরীব মানুষ চিকিৎসা করাবো কিভাবে জানি না। ’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মিশমা ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন,‘মেয়েটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারী ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।