ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

৭০ হাজার রিকশার ২ লাখ চালক লাইসেন্স দিবে চসিক!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৪
৭০ হাজার রিকশার ২ লাখ চালক লাইসেন্স দিবে চসিক! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: বৈধ ৭০ হাজার রিকশার বিপরীতে ২লাখ রিকশা চালককে বিনামূল্যে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। মঙ্গলবার সকালে রিকশা মালিক পরিষদের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান মেয়র এম মনজুর আলম।



সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এমনিতে নগরজুড়ে চলছে রিকশার নৈরাজ্য। নতুন করে যুক্ত হয়েছে ব্যাটারি চালিত রিকশা।
নগরীতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত রিকশা চলাচলের কারণে যানজট ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। নতুন করে দু’লাখ রিকশা চালককে লাইসেন্স দেওয়া হলে এ নৈরাজ্য আরো বাড়বে।

মতবিনিময় সভায় মেয়র এম মনজুর আলম বলেন,‘গত ২৬ অক্টোবর নগরীর রিকশা চালক ও মালিকদের মাঝে সর্বমোট ৭০ হাজার রিকশা লাইসেন্স প্রদান করা হয় এবং এর বিপরীতে ২ লাখ রিকশা চালককে ফ্রি চালক লাইসেন্স প্রদান করা হবে। ’

তিনি বলেন,‘চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক শহর। এ শহরে জীবন জীবিকার সন্ধানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষ এসে থাকে। বর্তমানে এই শহরে ৫০ লাখ লোক বসবাস করে আসছে। বিগত সময়ের ৩৫ হাজার বিকশা দিয়ে এই নগরবাসীর চলাচল দুরূহ ব্যাপার। এরই আলোকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আরো ৩৫ হাজার নতুন রিকশা লাইসেন্স প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। ’

সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আহমদুল হক বাংলানিউজকে বলেন,‘প্রত্যেক রিকশা চালক স্ব স্ব ওয়ার্ড কার্যালয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে ছবি জমা দিলে তাদেরকে ফ্রি রিকশা চালক লাইসেন্স দেওয়া হবে। ’

সিটি করপোরেশন সুত্র জানায়, ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সিটি করপোরেশন ৩৫ হাজার  ১টি  রিকশার অনুমোদন দেয়। নগরীর ধারণ ক্ষমতার কথা চিন্তা করে এরপর অনুমোদন দেয়া বন্ধ ছিল। গত পাঁচ বছর ধরে বৈধ রিকশার লাইসেন্স নবায়নও বন্ধ ছিল। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ‘রিকশা চালক-মালিক’ নামের প্রায় ২০ থেকে ২৫টি সংগঠন। এসব সংগঠনের অবৈধ অনুমোদন নিয়ে করপোরেশনের ১৫৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় অবৈধভাবে চলাচল করছে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ রিকশা। ২৫ বছর ধরে অবৈধ অনুমোদন দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এসব সংগঠনের নেতারা।

এরপর গত কয়েক বছর ধরে লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নেয় করপোরেশন। রিকশা মালিক সংগঠনের মামলার কারণে কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। গত ২৪ অক্টোবর উচ্চ আদালত মামলা খারিজ করে দিলে তড়িগড়ি করে লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে করপোরেশন।

২৪ ঘন্টার নোটিসে গত ২৫ অক্টোবরের রাত ১২টা থেকে ২৬ অক্টোবর সকাল ৭ টার মধ্যে ৪১ টি ওয়ার্ডে নির্ধারিত ৪১টি মাঠে রিকশা জড়ো করতে করপোরেশনের পক্ষ থেকে রিকশা মালিকদের বলা হয়। ওইদিন সকাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে সিটি কর্পোরেশনের নিবন্ধিত ৩৫ হাজার ১টি রিকশার ২০০৯-১০ অর্থ বছর থেকে ২০১৩-১৪ পর্যন্ত ৫ বছরের লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রম শুরু করে। পরে রিকশা মালিকদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আরো দু’দিন সময় বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু তিনদিনে মাত্র ২৬ হাজার ২১টি রিকশা লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স নিয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৫৭৯ জন রিকশা মালিক।

এদিকে নগরীর আমবাগান, আইস ফ্যাক্টরি রোড, হালিশহর, চান্দগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রায় শতাধিক রিকশা তৈরির গ্যারেজ। এসব গ্যারেজে প্রতি মাসে নতুন করে তৈরি হচ্ছে প্রায় ৫’শতাধিক রিকশা। বিশেষ করে ব্যাটারি চালিত রিকশা তৈরির ধুম পড়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৩০- ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেই এ ব্যাটারি চালিত রিকশা তৈরি করা যায়। ব্যাটারি চালিত রিকশা মালিকরা দৈনিক ৪শ’ টাকা ভাড়া নেন। কম পূঁজি দিয়ে বেশি টাকা আয়ের আশায় এ অবৈধ রিকশায় চট্টগ্রাম নগরী ছেয়ে গেছে, এবং এসব রিকশা বিভিন্ন সংগঠনের নাম্বার প্লেট নিয়ে রাস্তায় নামছে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রিকশার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। যানজট নিরসনে এসব অবৈধ রিকশা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারী ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।