ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

ঘটনা ধামাচাপা দিতেই দু’সার্জেণ্টকে নির্যাতন

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৪
ঘটনা ধামাচাপা দিতেই দু’সার্জেণ্টকে নির্যাতন

চট্টগ্রাম: দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতেই ঘটনাস্থলের চাক্ষুস সাক্ষী সার্জেণ্ট আলাউদ্দিন ও সার্জেণ্ট হেলাল উদ্দিনকে অস্ত্র মামলায় জড়িয়ে তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণে এভাবেই বিষয়টি উঠে এসেছে।



মঙ্গলবার রায় প্রদানকারী চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এস এম মুজিবুর রহমান পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেন।

ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী মো.ওমর ফুয়াদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘মহামান্য আদালত পূর্ণাঙ্গ রায়ের নথিতে স্বাক্ষর করেছেন।
এখন পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়ে দেয়া হবে। ’

পর্যবেক্ষণে আদালত উল্লেখ করেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ঘটনার প্রায় এক বছর পর ঘটনাস্থলের চাক্ষুস সাক্ষী সার্জেণ্ট আলাউদ্দিন এবং সার্জেণ্ট হেলাল উদ্দিনকে অস্ত্র মামলায় জড়িয়ে শারিরীক ও মানসিকভাবে তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছেন বলে তারা আদালতে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

তাদের এই মামলার একে-৪৭ টাইপের অস্ত্র চুরি করে হেফাজতে রাখা ও বিক্রি করার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এই মামলার আলামতের মধ্যে একে-৪৭ টাইপের কোন অস্ত্রই ছিলনা।

তাদের বিরুদ্ধে আনীত উক্ত অস্ত্র মামলায় হাজতে থাকাকালে প্রথম দফায় তাদের এই ট্রাইব্যুনালে এনে এই মামলার ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে সাক্ষ্য দেয়ার আরেকটি নজিরবিহীন ঘটনার সূত্রপাতও তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করেছেন বলে নির্যাতিত ও সংক্ষুব্ধ সাক্ষীরা তাদের সাক্ষ্যে উল্লেখ করেছেন।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, তাদের মত চাক্ষুস সাক্ষীর উপর অমানুষিক নির্যাতন করা, ঘটনার পর পরই তারই অধীনস্থ এনএসআই সদস্যদের ঘটনার সাথে জড়িত না করা, ঘটনাস্থলে আটক ৫ জনকে ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া, অস্ত্র পরিদর্শনের পর পুলিশ কমিশনারের কক্ষে মিটিং করে পুলিশ কমিশনার ও ডিসি পোর্টকে স্পর্শকাতর ঘটনা বিধায় প্রকৃত ঘটনা উন্মোচিত হওয়ার আশংকায় সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকার প্রদান করতে নিষেধ করা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির তদন্ত রিপোর্টে এনএসআই-এর সম্পৃক্ততার বিষয়টি উল্লেখ না করার জন্য নির্দেশ দেয়ায় স্পষ্টত: বুঝা যায় যে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এই মামলার ঘটনার সাথে পুরোপুরি জড়িত ছিলেন।

গত ৩০ জানুয়ারি দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় চোরাচালান (বিশেষ ক্ষমতা আইনে) ও অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া পৃথক দুটি মামলার রায় দেন বিচারক।

চোরাচালান মামলার রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদন্ড দেন আদালত। একই রায়ে তাদের পাঁচ লক্ষ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।

একই ঘটনায় অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় একই আসামীদের ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১৯ (সি) ও ১৯ (এফ) ধারায় সাত বছর কারাদন্ড দেন বিচারক। উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন। এছাড়া তাদের হাজতবাসের মেয়াদ দণ্ড থেকে বাদ যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রায়ে।

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা সিইউএফএল জেটিঘাটে দশ ট্রাক অস্ত্রের চালানটি ধরা পড়ে।


‘বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তা’
উলফাকে শক্তিশালী করতেই দশ ট্রাক অস্ত্র
খালেদার নীরবতা রহস্যজনক

বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad