চট্টগ্রাম: দশ ট্রাক অস্ত্র মামলাকে সাধারণ অস্ত্র মামলার মত বিবেচনা করার কোন সুযোগ নেই এবং সরকারী মদদ ছাড়া এত অস্ত্র আনা সম্ভব নয় বলে পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, কোনরূপ সাক্ষ্য প্রমাণ, বিশ্লেষণ ছাড়াই যে কোন লোকই এটা বিশ্বাস করবে যে, এত বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ কোনরূপ বাধাবিঘ্ন ছাড়া ভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে সরকারী মদদ ব্যতীত আনয়ণ করা কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার রায় প্রদানকারী চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এস এম মুজিবুর রহমান পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেন।
ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী মো.ওমর ফুয়াদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘মহামান্য আদালত পূর্ণাঙ্গ রায়ের নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। এখন পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়ে দেয়া হবে। ’
পর্যবেক্ষণে আদালত উল্লেখ করেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব ওমর ফারুকের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংগৃহীত সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনাপূর্বক আসামী হাফিজুর রহমান, দীন মোহাম্মদ ও হাজী আবদুস সোবহান মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছেন বলে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। বিস্ময়করভাবে অন্যান্য আসামীদের কথা বাদ দিলেও ঘটনার মূল হোতা উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়ার নামটিও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন যে কোন ব্যক্তির কাছে এটা বিশ্বাসযোগ্য হবেনা যে, মাত্র তিনজন ব্যক্তি চীনের তৈরি কয়েক হাজার কোটি টাকা মূল্যের মামলার অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ বাংলাদেশের বাইরে থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন এলাকায় বিদেশি জলসীমায় এনে সেখান থেকে নৌবাহিনী-কোস্টগার্ডসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সিইউএফএল জেটিঘাটে এনে ট্রাকে তুলতে সক্ষম হবে।
গত ৩০ জানুয়ারি দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় চোরাচালান (বিশেষ ক্ষমতা আইনে) ও অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া পৃথক দুটি মামলার রায় দেন বিচারক।
চোরাচালান মামলার রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদন্ড দেন আদালত। একই রায়ে তাদের পাঁচ লক্ষ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
একই ঘটনায় অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় একই আসামীদের ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১৯ (সি) ও ১৯ (এফ) ধারায় সাত বছর কারাদন্ড দেন বিচারক। উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন। এছাড়া তাদের হাজতবাসের মেয়াদ দণ্ড থেকে বাদ যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রায়ে।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা সিইউএফএল জেটিঘাটে দশ ট্রাক অস্ত্রের চালানটি ধরা পড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪,২০১৪