ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর খুনের পেছনে ‘গামছা পার্টি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৪
চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর খুনের পেছনে ‘গামছা পার্টি’

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীতে পেশাদার ছিনতাইকারী গ্রুপ ‘গামছা পার্টি’র দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে। পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়ের মুখে কয়েক বছর নিস্ক্রিয় থাকলেও সম্প্রতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে গামছা পার্টির সদস্যরা।

 

 

নগরীতে ইতোমধ্যে যেসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশের সঙ্গে জড়িত আছে গামছা পার্টির সদস্যরা। পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে গামছা পার্টির ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।

 

সম্প্রতি নগরীর ইপিজেড থানার রুবি সিমেন্ট গেট এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় একটি লাশ উদ্ধারের ঘটনা তদন্তে গামছা পার্টির দৌরাত্ম্য শুরুর বিষয়টি জানতে পারেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এরপর সিআরবিতে এক পিডিবি কর্মকর্তা খুনের ঘটনায়ও এ চক্রের সদস্যদের সম্পৃক্ততার তথ্য পায় পুলিশ।

 

জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত নগর পুলিশের নিয়মিত অপরাধ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনারদের গামছা পার্টির সদস্যদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন পুলিশ কমিশনার।

 

বুধবার রাতে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-বন্দর) মোস্তাক আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম বন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গামছা পার্টির তিন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদিকে কোতয়ালী থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিমের নেতৃত্বে পুলিশ নগরীর লালখান বাজার এলাকা থেকে একই চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।

 

এডিসি মোস্তাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘গামছা পার্টির কিছুটা তৎপরতা শুরু হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। গামছা পার্টির বাকি সদস্যদের ধরতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছি। ’

 

পুলিশ সূত্রমতে, সম্প্রতি নগরীতে ছিনতাই করে বেড়ানো গামছা পার্টির সদস্যদের একটি তালিকা তৈরি করে নগর পুলিশ। এ পর্যন্ত পেশাদার ছিনতাইকারী এ গ্রুপটির সঙ্গে ৩২ জন জড়িত আছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।  

 

সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে ‍গামছা পার্টির তৎপরতা শুরুর পর তাদের হাতে চট্টগ্রাম নগরীতে ১১ জন নিহত হয়েছিল। একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে গামছা পার্টির অধিকাংশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এতে পেশাদার এ ছিনতাইকারী গ্রুপটির কর্মকাণ্ড অনেকাংশেই স্তিমিত হয়ে যায়।

 

তবে গত বছরের শেষদিকে কয়েক মাস রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান স্তিমিত হয়ে যাওয়ায় গামছা পার্টির আবারও উত্থান ঘটেছে বলে মনে করছেন নগর পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।

 

এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি ইপিজেড থানার সিমেন্ট ক্রসিং ও রুবি সিমেন্টে গেটের মাঝামাঝিতে একটি নির্জন স্থান থেকে গলায় গামছা বাঁধা ও চোখে মরিচ ছিটানো একটি লাশ উদ্ধার করে ‍পুলিশ। প্রথমে পুলিশ লাশের পরিচয় জানতে পারেনি।

 

১৬ জানুয়ারি বন্দর থানায় নাজিম উদ্দিন (৩৫) নামে এক রিক্সাচালক নিখোঁজ হবার বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করে তার ছোট ভাই। এরপর পুলিশ জানতে পারে, উদ্ধার করা লাশটি নাজিম উদ্দিনের।  

 

এডিসি মোস্তাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, গলায় গামছা বাঁধা দেখেই আমরা গ‍ামছা পার্টির বিষয়ে সন্দেহ করেছিলাম। পরে তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় তিন ছিনতাইকারীসহ মোট চারজনকে আটক করেছি। এরা হল, মিরাজ, শাহাদাৎ, বেলাল ও আবুল কালাম।

 

সূত্র জানায়, নিহত নাজিমের মোবাইলের সূত্র ধরে আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার তথ্যের ভিত্তিতে বাকি তিনজনকে বুধবার রাতে আটক করা হয়।

 

এডিসি মোস্তাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, শাহাদাৎ, মিরাজ ও বেলাল গামছা পার্টির সক্রিয় সদস্য। তিনজন নগরীর সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং যাবার কথা বলে ব্যাটারিচালিত রিক্সাটি ভাড়া করে। এরপর নির্জন স্থানে নিয়ে চালককে খুন করে রিক্সাটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে মোবাইলটি আবুল কালামের কাছে বিক্রি করে দেয়।  

 

এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি সিআরবি এলাকা থেকে এক পিডিবি কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। ওই ঘটনায় বুধবার রাতে লালখান বাজার থেকে ৬ জনকে আটক করা হয়।

 

কোতয়ালী থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘পিডিবি কর্মকর্তা খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। সে গামছা পার্টির সদস্যদের বিষয়ে তথ্য দেয়। তার তথ্যের ভিত্তিতে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। ’

 

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬,২০১৪ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।