চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে ঢিলেঢালাভাবে শেষ হয়েছে জামায়াতের ডাকা হরতাল। হরতাল ডাকলেও রাজপথে দেখা যায়নি জামায়াতের নেতাকর্মীদের।
রাজপথে পিকেটার না থাকায় নগরী কিংবা জেলার কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বরং হরতাল উপেক্ষা করে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের রাজপথে নির্বিঘ্নে চলাচল করেছে বিভিন্ন ধরনের গণপরিবহন।
সকালের শুরুতে ব্যক্তিগত যানবাহন কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা-ও প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গেছে। দিনভর পণ্যবোঝাই ট্রাকও চলাচল করতে দেখা গেছে।
তবে দূরপাল্লার যানবাহন কিছুটা কম ছিল। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবোঝাই পরিবহনও স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা কম বের হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
হরতালের মধ্যে নগরীতে স্বাভাবিক নিয়মে খুলেছে দোকানপাট, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিপণী বিতানগুলো। সরকারী-বেসরকারী অফিস, শিল্পকারখানা খোলা ছিল। সকাল থেকে প্রতিদিনের নিয়মে গণপরিবহন কিংবা রিক্সা-অটোরিক্সায় চড়ে শ্রমজীবী মানুষকে কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খোলা ছিল।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মনজুর মোর্শেদ বাংলানিউজকে বলেন, হরতালে চট্টগ্রাম নগরীর পরিস্থিতি একদম স্বাভাবিক ছিল। যানবাহন প্রতিদিন সকালে যেভাবে বের হয় সেভাবেই আজও (বৃহস্পতিবার) বের হয়েছে।
এদিকে ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী সকালে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ছেড়েছে তিনটি দূরপাল্লার ট্রেন। চট্টগ্রামে পৌঁছেছে দু’টি ট্রেন।
হরতাল ডেকে রাজপথে না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে নগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘খেলা চলছে তো, সেজন্য টাইট হরতাল করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে গেছে। আর সরকার তো আমাদের কর্মীর চাইতে দ্বিগুণ পুলিশ দিয়েছে রাস্তায়। এত বাধাবিপত্তির মধ্যেও মানুষ যেভাবে হরতাল পালন করেছে তার জন্য মোবারকবাদ জানাই। ’
তবে হরতালে নাশকতা মোকাবেলায় নগর জুড়ে সতর্ক অবস্থায় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বিভিন্ন পয়েণ্টে প্রায় দেড় হাজার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা) বাবুল আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুলিশের বাড়তি সতর্কতার কারণে নগরীতে কোথাও নাশকতা করতে পারেনি জামায়াত। ’
চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় দায়ের হওয়া চোরাচালান মামলায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার এ হরতাল আহ্বান করা হয়।
গত ৩০ জানুয়ারি দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় চোরাচালান (বিশেষ ক্ষমতা আইনে) ও অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া পৃথক দুটি মামলার রায় দেন বিচারক।
চোরাচালান মামলার রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদন্ড দেন আদালত। একই রায়ে তাদের পাঁচ লক্ষ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
একই ঘটনায় অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় একই আসামীদের ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১৯ (সি) ও ১৯ (এফ) ধারায় সাত বছর কারাদন্ড দেন বিচারক। উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন। এছাড়া তাদের হাজতবাসের মেয়াদ দণ্ড থেকে বাদ যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রায়ে।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা সিইউএফএল জেটিঘাটে দশ ট্রাক অস্ত্রের চালানটি ধরা পড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬,২০১৪
