ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম বন্দর

‘বস্’ মানে না কর্মচারী!

মো.মহিউদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৮ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৪
‘বস্’ মানে না কর্মচারী!

চট্টগ্রাম: শৃঙ্খলা ও চাকরি বিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দরে তা মানছেন না অধিকাংশ কর্মচারি।

অভিযোগ উঠেছে, নিয়ম না মানা এ সকল কর্মচারিদের অধিকাংশই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত।



বন্দর সূত্রগুলো বলছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মচারীরা অধিকাংশ সময়ই উর্ধতন কর্মকর্তাদের আদেশ অগ্রাহ্য করেন। দায়িত্ব পালনের চেয়ে অধিকাংশ সময় তারা মিছিল-মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন।


কর্মচারিদের এ ধরণের উদ্ধত আচরণের কথা স্বীকার করেছেন উর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা।

কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মচারিদের কাছে অনেকটায় অসহায় হয়ে পড়েছেন তাঁরা। কর্মচারিদের এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে ঘটছে হামলার মতো ঘটনাও।

কর্মকর্তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক ও সিবিএ নেতাদের তদবিরের কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারায় এ ধরণের ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে, অবস্থা এখন এমনই দাঁড়িয়েছে যে উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ সহ্য করা ছাড়া কর্মকর্তাদের কোন উপায় নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বন্দরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, কর্তব্যে অবহেলা এবং আচরণের সমস্যার কারণে চারবার গাড়ি চালক পরিবর্তন করতে হয়েছে। গাড়ি চালক তার ইচ্ছে মতো গাড়ি চালান। সকাল ৯টায় আসতে বললে আসেন ১০টায়। যখন তখন গাড়ি বন্ধ করে চলে যায়। কিছু বলতে গেলে নিজের সম্মানহানি। অবস্থা এমনই যে, আমরা আছি এক মহাবিপদে।

বন্দর সূত্র জানায়, সম্প্রতি বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশের সময় যান্ত্রিক বিভাগের এক ট্রলি চালকের কাছে পরিচয় পত্র দেখতে চান নিরাপত্তা বিভাগের এক কর্মকর্তা। এতে ওই কর্মচারীর সঙ্গে দায়িত্বরত কর্মকর্তার বাকবিতণ্ডা হয়। এতে ওই কর্মচারী ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় মেজবাহ উদ্দিন মোরশেদ নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে ফোন করে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসেন। মোরশেদ ১০-১২ জন কর্মী নিয়ে ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তার উপর হামলা চালান।

এ ঘটনায় বন্দর নিরাপত্তা পরিচালক লে.কর্নেল মোয়াজ্জেম হোসেনের নির্দেশে হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা মোরশেদকে আটক করলেও পরে রাজনৈতিক ও সিবিএ নেতাদের তদবিরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে যান্ত্রিক বিভাগের রাফি নামের ওই ট্রলি চালকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছে নিরাপত্তা বিভাগ।

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে যান্ত্রিক বিভাগের প্রধান খাইরুল মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার সঙ্গে ট্রলি চালকের অসৌজন্যমূলক আচরণের কথা শুনেছি। তবে এখনো পর্যয্ত লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে দোষী কর্মচারির বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, নিরাপত্তা পরিদর্শকের উপর হামলার ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা মোরশেদকে আটকের পর তাকে ছাড়াতে জোর তদবির করতে দেখা যায় বন্দরের সিবিএ নেতাদের। এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যও টেলিফোনে ঘটনার বিষয়ে খোঁজখবর নেন।

বন্দর সূত্র জানায়, বিগত মহাজোট সরকারের আমলে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। বিভিন্ন ধাপে এসব নিয়োগে মেধার চেয়ে রাজনীতিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

কর্মকর্তাদের অভিমত, রাজনৈতিক বিবেচনায় এধরণের নিয়োগ বন্ধ এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে শৃঙ্খলা হারাবে বন্দর।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৪ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।