ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দাপট দেখাত ফোরকান-কামরুল, মানতে পারেনি সহযোগীরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৪
দাপট দেখাত ফোরকান-কামরুল, মানতে পারেনি সহযোগীরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া দু’বন্ধু কামরুল ইসলাম ও ফোরকান উদ্দিন সংঘবদ্ধ মোবাইল চোর চক্রের সদস্য। এ চক্রে কমপক্ষে আরও ৮ থেকে ১০ জন সদস্য আছে।



ফোরকান পুলিশের সোর্স হিসেবেও কাজ করত। সম্প্রতি ফোরকান পলিটেকনিক এলাকার মোবাইল চোর বাঁছাকে ডেকে বলে, জিইসি-ষোলশহর এলাকায় মোবাইল চুরি করতে হলে তাকে টাকার ভাগ দিতে হবে।
অন্যথায় বাঁছাকে থানায় ধরিয়ে দেয়া হবে।

ফোরকানের হুমকিতে মোবাইল চোর চক্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বিভক্তির সৃষ্টি হয়। বাঁছাসহ ক্ষুব্ধ মোবাইল চোর চক্রের সদস্যরা ফোরকান ও তার বন্ধু কামরুলকে ডেকে নিয়ে কৌশলে খুন করে।   

গ্রেপ্তারের পর জাহাঙ্গীরের বক্তব্য এবং তদন্তে পুলিশ নৃশংস এ খুনের ঘটনার নেপথ্যের এসব তথ্য পেয়েছে।

খুলশী থানার ওসি মাঈনউদ্দিন ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, মূলত আধিপত্য এবং মোবাইল চুরি ও টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে খুন হয়েছে ফোরকান ও কামরুল। জাহাঙ্গীরকে আটকের পর পুরো কিলার গ্রুপকে আমরা চিহ্নিত করেছি। দ্রুত তাদের সবাইকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব বলে আশা করছি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খুনের শিকার ফোরকানসহ এ মামলার আসামীরা সবাই খুলশী থানা পুলিশের তালিকাভুক্ত ‘মোবাইল কামলা’ বা ‘মোবাইল পকেটমার’। কামরুল এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে তাদের কাছ থেকে মোবাইল চুরির টাকার ভাগ নিত। মাঝে মাঝে বড় ধরনের মোবাইল চুরির কাজে কামরুলও অংশ নিত।

সূত্র জানায়, পুলিশের সোর্স হওয়ায় ফোরকান সবসময় তাদের গ্রুপের মধ্যে দাপট দেখাত। ছাত্রলীগের পরিচয়ে কামরুলও দাপট দেখাত। কিছুদিন আগে গ্রুপের এক সদস্যকে ফোরকান ইয়াবাসহ পাঁচলাইশ থানায় ধরিয়ে দেয়। এরপর বাঁছাকে ডেকে এনে তার (ফোরকান)  এলাকায় মোবাইল চুরি করা এবং টাকার ভাগ দেয়া নিয়ে শাসানো হয়। এতে গ্রুপের অন্য সদস্যরা তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়।

সূত্রমতে, ঘটনার দিন গভীর রাতে ফোরকান ও কামরুলকে কয়েকটি মোবাইল চুরির টাকার ভাগ দেয়া হবে বলে ফোন করে ডেকে আনা হয়। তারা ষোলশহর দু’নম্বর গেইটের কাছে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের পাশে লোহার পাত দিয়ে ঘেরা একটি জায়গায় তাদের নিয়মিত আড্ডাস্থলে বসে। এসময় কামরুল ও ফোরকান ছাড়া আরও ৮ জন ছিল।

প্রথমে কামরুল ও ফোরকানকে ইয়াবা খাইয়ে নেশাগ্রস্ত করা হয়। এরপর দু’জনের হাত রশি দিয়ে পেছন দিকে বাঁধা হয়। গলায়ও রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়। এরপর ইট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে, হাত ও পায়ের রগ কেটে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। পরে দু’জনকে সেফটিক ট্যাংকে ঢুকিয়ে চলে যায় ঘাতকরা।

এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ নম্বর আসামী জাহাঙ্গীরকে মঙ্গলবার নগরীর পলিটেকনিক এলাকা থেকে আটক করে খুলশী থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে জাহাঙ্গীর ঘটনার বিষয়ে পুলিশের কাছে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে।

জাহাঙ্গীর নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার হরিণকাটা গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে।

এছাড়া এজাহারভুক্ত তিন নম্বর আসামী শাহআলমসহ (২০) আরও তিনজনকে খাগড়াছড়ি থেকে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এদের মধ্যে বাকি দু’জনকে সন্দেহাভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে।

তিনজনকে আটকের পর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন  এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে বলে নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (উত্তর) মো.কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, শাহআলম এজাহারভুক্ত আসামী এবং খুন হওয়া দু’জনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাকি দু’জনকে কিছু তথ্যের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে। তবে তারা একেক সময় একেক কথা বলে বিভ্রান্ত করছে। তাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসার পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এর আগে সোমবার (১৭ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে নগরীর খুলশী থানার ষোলশহর দু’নম্বর গেইট এলাকায় একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে দু’বন্ধু কামরুল ও ফোরকানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা উভয়ই নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।

কামরুল ইসলাম এমইএস কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আর ফোরকান সিইপিজেডে একটি কারখানায় কর্মরত ছিল।

এ ঘটনায় কামরুল ইসলামের বাবা আব্দুল হাকিম বাদি হয়ে ৯ জনকে আসামী করে দণ্ডবিধির ৩০২, ২০১ ও ৩৪ ধারায় খুলশী থানায় একটি খুনের মামলা দায়ের করেন।

আসামীরা হল, বাঁছা প্রকাশ সুন্দরলাল বাঁছা প্রকাশ ব্লেট বাঁছা, সাহেদ, শাহআলম, জীবন প্রকাশ কাশেম, জাহাঙ্গীর, লেদু, ভুট্টু, আকাশ এবং বাহার।

এছাড়া লাশ উদ্ধারের সময় নগরীর ষোলশহর এলাকায় ছাত্রলীগের ভাংচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা এক’শ থেকে দেড়’শ জনকে আসামী করে দণ্ডবিধির ১৪৩, ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৫২, ১৬৮, ৩৪১, ৩৫৩, ৪২৭ ও ৩৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন খুলশী থানার এস আই মো.রাসেল মিয়া।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।