ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ছয় মাস বেতন পাচ্ছেন না কাফকো’র অস্থায়ী নিরাপত্তাকর্মীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৪
ছয় মাস বেতন পাচ্ছেন না কাফকো’র অস্থায়ী নিরাপত্তাকর্মীরা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ছয় মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন কর্ণফুলী সার কারখানার (কাফকো) অস্থায়ী নিরাপত্তাকর্মীরা। এছাড়া কারখানাটিতে শ্রম আইন মানা হচ্ছেনা বলেও অভিযোগ তুলেছেন তারা।



শনিবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তারা।

নিরাপত্তাকর্মীদের ন্যায্য মজুরি ও শ্রম আইন অনুযায়ী প্রাপ্য সকল সুযোগ অবিলম্বে প্রদান করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কাফকো নিরাপত্তাকর্মী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংস্থাটির সভাপতি মো. হোসেনুজ্জামান চৌধুরী।

লিখিত বক্তব্যে হোসেনুজ্জামান চৌধুরী বলেন,‘কাফকো’র সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আমরা ১৫২জন কর্মচারী, সবোর্চ্চ ২২ বছর থেকে সর্বনিম্ন ২ বছর ধরে চাকুরি করে আসছি। নিরাপত্তা কর্মীদের কারখানা প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে কন্ট্রাকটরের মাধ্যমে বেতন দেওয়া হতো। পরবর্তী পর্যায়ে বেতন-ভাতা, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা, বোনাস, চাকুরি স্থায়ীকরণ ইত্যাদি নিয়ে ঠিকাদারের সাথে শ্রমিক ও কাফকো কর্তৃপক্ষের বিরোধ হলে কাফকো কর্তৃপক্ষের পরামর্শে নিরাপত্তাকর্মী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড কাফকো নামে সংগঠনটি গঠন করা হয়। এই সমিতির মাধ্যমে কাফকো কর্তৃপক্ষের ২ বছর পরপর চুক্তির মাধ্যমে নিরাপত্তাকর্মীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যকবার দাবি উত্থাপনের সময় আমাদের চাকুরি স্থায়ীকরণের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বার বার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও আমাদের এই অত্যন্ত ন্যায় সংগত মানবিক দাবিটি গ্রহণ করেননি। ফলে আমরা দীর্ঘদিন চাকুরি করা সত্ত্বেও বোনাস, সাপ্তাহিক ছুটি, শ্রম আইন অনুযায়ী অন্যান্য ছুটি, ওভারটাইমসহ সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছি। অর্থাৎ ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ এই ভিত্তিতে বছরের পর বছর কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ’

হোসেনুজ্জামান বলেন, ‘গত অক্টোবরে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। গত ৩০ জানুয়ারী চুক্তি নবায়নের মাধ্যমে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য নতুন দাবি উত্থাপন করি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বিগত ৬মাস ধরে কর্তৃপক্ষ চুক্তি নবায়ন না করায় নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। ফলে ৬ মাস ধরে বেতন-ভাতা ‍তুলতে না পারায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে নিরাপত্তাকর্মীরা। এই সময়ে আমাদের একজন শ্রমিক আজিজুর রহমান, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত অবস্থায় মহিষের গুঁতায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান, দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ায় অসুস্থ হয়ে অনাহারে, অর্ধাহারে, বিনা চিকিৎসায় আমাদের সহকর্মী আজম খান, সহকর্মী আবুল কাশেমের স্ত্রী, সহকর্মী ইউসুফের পিতা মৃত্যুবরণ করেন। ’

সমিতির সভাপতি বলেন, ‘‌এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নিয়মিত কর্মচারী ও কর্মকর্তারা বছরে মাথাপিছু সর্বনিম্ন ৭ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১২ লাখ টাকা লভ্যাংশ পান। এই লভ্যাংশ তাদের মাসিক বেতনের অতিরিক্ত অথচ বিরাট লাভজনক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ শিল্পটির নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত শ্রমিকরা শুধুমাত্র ‘কনসোলিডেটেড পে’তে চাকুরি করতে বাধ্য হয়। এতে প্রমাণিত হয় এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্প নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী মানুষগুলোকে কোনো মানবিক মর্যাদা দেওয়া হয় না। তাদের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয় না। অথচ শ্রম আইনের ৩(ক) ধারার সুষ্পষ্টভাবে বলা আছে-ঠিকাদার সংস্থা দ্বারা সরবরাহকৃত শ্রমিকগণ শ্রম আইনের অন্তর্ভুক্ত হইবেন। অর্থাৎ শ্রম আইন অনুযায়ী সকল সুযোগ-সুবিধা  ভোগ করিবেন। কিন্তু  কাফকো কর্তৃপক্ষ শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করে নিতান্ত অমানবিকভাবে নিরাপত্তা কর্মচারীদের সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছেন। ’

তিনি বলেন,‘বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন ও কাফকো কর্তৃপক্ষের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নিরাপত্তাকর্মীদের ১৩ হাজার টাকা মাসিক বেতন নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়।   দুঃখের বিষয় হচ্ছে যেখানে কাফকোর কর্মচারীরা লভ্যাংশসহ সর্বনিম্ন বেতন পান ৩০ হাজার টাকা, সেখানে ২২বছর চাকুরিরত একজন নিরাপত্তাকর্মী মাসিক বেতন ১৩ হাজার টাকা দিতেও কাফকো কর্তৃপক্ষ নারাজ। বিষয়টি অমানবিক, শ্রম আইন পরিপন্থি। ’

অবিলম্বে নিরাপত্তাকর্মীদের যোগদানের সময় থেকে স্থায়ী নিয়োগ, সুপারিশকৃত বেতন ধার্য করে দ্রুত বেতন পরিশোধ এবং শ্রম আইন অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটিসহ বেতন অন্যান্য সকল ছুটি, বোনাস প্রদানের দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনদিনের কর্মসুচি ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল ১১টায় কালো ব্যাজ ধারণ ও জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান। ১৫ এপ্রিল কাফকো হাউজিং গেইটে মানববন্ধন, ১৬ ও ১৭ এপ্রিল সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সপরিবার অবস্থান ধর্মঘট।  

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আনোয়ারা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এম এ হান্নান চৌধুরী মঞ্জু, আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নওয়াব আলী, চট্টগ্রাম শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক তপন দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী চৌধুরী, নিরাপত্তাকর্মী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহির আহমদ, কোষাধ্যক্ষ মিল্টন সিংহ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৬ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।