চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো যথাসময়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না। এতে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা অনাদায়ী থাকায় বিপাকে পড়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পিডিবির পাওনা ১৩১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। পিডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, মার্চ মাস পর্যন্ত হিসাব যোগ করলে বকেয়ার পরিমাণ দেড়শো কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
মূলত, বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বাজেট ঘাটতি কিংবা তহবিল সংকটের কারণে নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে পারে না। আবার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বকেয়া পরিশোধ করতে গিয়ে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধে সময় ক্ষেপণ হয়। এছাড়া বিল নিয়ে আপত্তির কারণে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মামলা থাকায় বকেয়া আদায়ে জটিলতার সৃষ্ঠি হয়েছে।
পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক (বাণিজ্যিক পরিচালন) নুরুল আলম বাংলানিউজকে জানান, পিডিবি বকেয়া আদায়ে নোটিশ ইস্যু, বৈঠকসহ বিভিন্ন নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে । তবে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই জুন মাসের শেষের দিকে বকেয়া পরিশোধ করে।
তিনি বলেন,‘এখন বিদ্যুৎ বিল তেমন একটা বকেয়া থাকে না, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বকেয়া বিলের সুদ পরিশোধ না করায় বকেয়ার পরিমাণটা বেড়ে যাচ্ছে। ’
বকেয়া বিলের চেয়ে সুদ বেশী
পিডিবির বকেয়া তালিকায় দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট পাওনায় বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের চেয়ে সার চার্জই (বকেয়া বিলের সুদ) বেশী।
ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ১৩১ কোটি ৬২ লাখ ৩ হাজার ৬৯৪ টাকা মোট বকেয়ার মধ্যে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ কেবল ৫৪ কোটি ৬৩ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৪ টাকা। বাকি ৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ৩১ হাজার ১০ টাকাই সার চার্জ, যা মোট বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের চেয়ে ২২ কোটি ৩০ লাখ ৫৮ হাজার ৩২৬ টাকা বেশী।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার সময় মতো অর্থ দিলে বিল পরিশোধে কালক্ষেপন হবার কথা নয়। পিডিবি বিষয়টাকে বিবেচনায় না নিয়েই অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের সিনিয়র সহকারি পরিচালক (জনসংযোগ) মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন,‘অতিরিক্ত টাকা দাবির বিষয়টি ভিত্তিহীন। বকেয়া পরিশোধ করে না বলেই সুদ জমে। আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত ছাড়া বকেয়া বিলের সুদ মওকুপের কোন সুযোগ নেই। ’
বকেয়া বেশী সিটি কর্পোরেশনের
বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় ২০১২ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন স্থাপনার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা ঘটেছিল। তবুও প্রতি বছর বকেয়া তালিকায় প্রথমেই নাম আসে স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানটির।
পিডিবির বকেয়া তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশী বিল বকেয়া রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কাছে পিডিবির পাওনা ৫৬ কোটি ২৭ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮৮ টাকা। তবে এ বকেয়ার মধ্যে ৪৫ কোটি ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৮৯ টাকায় বকেয়া বিলের সুদ।
বকেয়া পরিশোধ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমেদ বলেন,‘ফান্ড নেই তাই বিল পরিশোধ করা যায় না, অন্য কোন কারণ নেই। ’
চট্টগ্রামের পাঁচটি জোনের বকেয়া তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পর সবচেয়ে বেশী বকেয়া রয়েছে দুর্যোগ ও ত্রান বিভাগের। বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ২১ কোটি ৩৫ লাখ ৭৪ হাজার ৫৯ টাকা।
এছাড়া, উল্লেখাযোগ্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) কাছে ১১ কোটি ৯ লাখ ৬৫ হাজার ৩৭৬ টাকা, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন মসজিদ-মন্দিরের কাছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে ৫ কোটি ৯ লাখ ৭৬ হাজার ২০৮, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশনের কাছে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ১৬ হাজার ৪০, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কাছে ৩ কোটি ৯ লাখ ২১ হাজার ২৯৮, পুলিশের কাছে ২ কোটি ৮৬ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬, রেলওয়ের কাছে ২ কোটি ৪১ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫১ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার কাছে ২ কোটি ৪১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯ টাকা বকেয়া রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৪