ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম বোর্ডে এইচএসসি প্রশ্নপত্রে ভুল!

মো.মহিউদ্দিন ও ইফতেখার ফয়সাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৪
চট্টগ্রাম বোর্ডে এইচএসসি প্রশ্নপত্রে ভুল!

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এইচএসসি বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় ভুল রয়েছে ৫ নম্বর মানের প্রশ্নে। এছাড়া প্রতিটি ১০ নম্বর মানের ২টি প্রশ্নে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের অনুপযোগী প্রশ্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।



১০০ নম্বর পূর্ণমানের প্রশ্নপত্রে ২৫ নম্বর নিয়েই এধরণের বিতর্ক সৃষ্ঠি হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এ প্রেক্ষিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে ওই ২৫ নম্বরের ক্ষেত্রে প্রশ্নের মান যাঁচাইয়ে শিথীল নীতি অনুসরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


এইএসসি’র মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে পূর্ণমানের ২৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে ভুল ও অপ্রাসঙ্গিক হওয়াকে শিক্ষাবোর্ডের ব্যর্থতা বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।

তারা বলছেন, প্রশ্নপত্রের ভুলের মধ্য দিয়ে শিক্ষাবোর্ডের অদক্ষতা ফুটে উঠেছে। এ ধরণের ভুলে একদিকে শিক্ষার্থীদের জীবনে যেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, অন্যদিকে মেধা যাঁচাইয়ে শিক্ষার্থীরা  বৈষম্যের শিকার হবেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক বাংলানিউজকে বলেন,‘দায়িত্ব জ্ঞানহীন শিক্ষক ও মডারেটরদের অযোগ্যতার কারণে একটা ১০০ নম্বরের পরীক্ষার ২৫ নম্বর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২৫ নম্বরেই যদি শিথিল নীতি অনুসরণ করা হয়, তবে মান যাঁচাই আর কোথায় হলো?’ 

গত ৬ এপ্রিল এইএসসি বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার খ সেটের প্রশ্নপত্রে দেখা যায়, ৪ নম্বর এর ‘ঙ’ নম্বর প্রশ্নে প্রত্যয়ের নামসহ ৬টি শব্দের প্রকৃতি-প্রত্যয় নির্ণয় করতে বলা হয়েছে। ৬ নম্বর মানের এ প্রশ্নের জন্য বিকল্পসহ মোট ৯টি শব্দ উপস্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫টি শব্দই প্রত্যয় নিষ্পন্ন নয়। শব্দগুলো হলো- নবান্ন, ঢাকেশ্বরী, হিমাচল, শীতার্ত এবং অন্যান্য।
hsc_1
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক বাংলানিউজকে বলেন,‘প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত এ পাঁচটি শব্দই সন্ধিজাত। এগুলোর প্রকৃতি-প্রত্যয় নির্ণয় করা যাবে না। ’

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পিযূষ দত্ত এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন,‘অপ্রত্যাশিতভাবে ভুল হয়েছে। তবে, প্রশ্নে ভুলগুলোর বাইরেও বিকল্প চারটি শব্দ রয়েছে। তারপরও যদি কোন শিক্ষার্থী সন্ধিজাত শব্দগুলো উত্তর দেয়, সে ক্ষেত্রে নম্বর পাবে। ’

ভুল প্রশ্নের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক এবং মডারেটরদের এ বিষয়ে জানতে চেয়ে কারণ দর্শাতে বলা হবে। তাদের জবাবের উপর ভিত্তি করে শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামীবার থেকে তাদের প্রশ্নপত্র প্রনয়ণের কাজ থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে। ’

স্মার্ট ফোন নিয়ে ‘আনস্মার্ট প্রশ্ন’

প্রশ্নপত্রের ৬ নম্বর প্রশ্নে, স্মার্ট ফোন ব্যবহার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পরামর্শ জানিয়ে ছোট ভাইকে পত্র লিখতে বলা হয়েছে। প্রশ্নটি নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষাবোর্ডে অভিযোগ করেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগই পৌঁছেনি। সেসব এলাকায় স্মার্ট ফোন দূরে থাক সাধারণ ফোন ব্যবহারই দুরুহ।

শিক্ষকদের এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই প্রশ্নের উত্তরে মান যাচাই শিথিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু, পরীক্ষকদের একাংশের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্মার্ট ফোন সম্পর্কে তারা নিজেরাই অবগত নন। এমন দাবির মুখে মান যাচাইয়ে শিথিলের নির্দেশনার পাশাপাশি স্মার্ট ফোনকে সংজ্ঞায়িত করে শিক্ষাবোর্ড থেকে পরীক্ষকদের একটি নোট পাঠানো হয়েছে।

পিযূষ দত্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, ,‘স্মার্ট ফোন নিয়ে অভিযোগ উঠেছে সত্যি, কিন্তু ডিজিটাল যুগে এ বিষয়ে কিছুটা তো জানতে হবে। তারপরও প্রধান পরীক্ষকদের এ বিষয়েও মান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে শিথিলতা অনুসরণ করা যায় কিনা ভেবে দেখতে বলা হয়েছে। পরীক্ষকরা এ বিষয়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিবেন। ’
hsc_2
এইচএসএসি পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রশ্নটা কতটা মানসম্মত হয়েছে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ হরিশংকর জলদাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্মার্ট ফোন জানতে চাওয়ার মধ্য দিয়ে বোঝা গেল এটি পুরোটাই একটা আনস্মার্ট প্রশ্ন। প্রশ্নটা এমন একজন অদক্ষ-অসুস্থ মানুষ করেছেন যিনি বাংলাদেশের ইতিহাস জানেন না, ভুগোল জানেন না। দেশের সব অঞ্চলে যেখানে বিদ্যুতই পৌছাইনি, যেখানে অনেক মানুষ ফোন ব্যবহার করতে পারে না সেখানে এ ধরণের প্রশ্ন অযৌক্তিক। অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তানও যারা পরীক্ষা দিয়েছে তারা এর উত্তর কিভাবে দিবেন বিষয়টা চিন্তা করা উচিত ছিল। ’

রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে

প্রশ্নপত্রের ৭ নম্বর প্রশ্নে পরীক্ষার্থীদের ‘ছাত্র রাজনীতির একাল ও সেকাল’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপনের জন্য প্রধান বক্তা হিসেবে একটি মঞ্চ ভাষণ প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। প্রশ্নটির যৌক্তিকতা নিয়েও অভিযোগ তুলেন পরীক্ষককরা।

এ প্রসঙ্গে পিযূষ দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ প্রশ্নের ক্ষেত্রেও কিছু প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছে। আমি সুপারিশ করেছি, মান যাচাইয়েও শিথিলতা অনুসরণ করা যায় কিনা সে বিষয়ে প্রধান পরীক্ষককরা সিদ্ধান্ত নিবেন। ’

হরিশংকর জলদাস এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন,‘অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন ছাত্র রাজনীতিতে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে, তখন এ ধরণের প্রশ্ন একেবারেই অনুপযোগী। আর পরীক্ষকদের সকলেই কোন না কোন রাজনৈতিক চেতনায় বিশ্বাসি, যার কারণে সত্যি লিখতে গেলে অনেকের গায়ে আঘাত আসবে। শিক্ষার্থীরা তো আর সব দিকে ব্যালান্স করে লিখতে পারবে না, যার কারণে মান যাচাইয়ে তারা বৈষম্যের শিকার হবে। ’

বাংলাদেশ সময়:২১৩০ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।