ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বসে আছে বাংলার দূত

কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতায় বাড়ছে লোকসানের বোঝা

মো.মহিউদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৪
কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতায় বাড়ছে লোকসানের বোঝা

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন ‘বাংলার দূত’ জাহাজটি চার্টার অফ (ভাড়া বন্ধ) হয়েছে গত বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে।

বিগত পাঁচ মাস বসে থাকায় জাহাজটির জন্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে।

গত তিন বছরে জাহাজটির জন্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এভাবে বসিয়ে রাখলে জাহাজটির পেছনে প্রতি মাসে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।


অথচ জাহাজটি বসিয়ে না রেখে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে অতিরিক্ত ব্যয় সংকোচনের পাশপাশি বিএসসি আর্থিকভাবে লাভবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ফলে লোকসানের বোঝা বেড়েই চলেছে রাষ্ট্রয়াত্ত্ব এই প্রতিষ্ঠানের।

বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্যিক জাহাজের ভাড়া হ্রাস পেলেও জ্বালানী খরচ বৃদ্ধি ‍পাওয়াতে (ভয়েস কস্টিং) ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাওয়াতে জাহাজটি সচল করে সমুদ্রে চলাচল উপযোগী করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জাহাজটি মেরামত না করে বিক্রি করে দ্রুত নতুন জাহাজ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলার দূত জাহাজটির ক্লাস না থাকায় (আন্তর্জাতিক নৌ-বাণিজ্যের বিধি মোতাবেক সমুদ্রে চলাচলের অনুপযোগী) গত বছরের নভেম্বর মাসে জাহাজটি চার্টার অফ করা হয়।

জাহাজটির ক্লাস সার্টিফিকেট নিতে হলে আরো প্রায় ৪০টি বিভিন্ন ধরণের সনদ নবায়ন করতে হবে। এরপর জাহাজটির সমুদ্রে চলাচলের জন্য অনুমোদন দেওয়া হবে। এতে অন্তত ৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু এতো টাকা ব্যয় করার ক্ষমতা বর্তমানে বিএসসি কর্তৃপক্ষের নেই।

কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জাহাজটির বর্তমান বয়স ২৬ বছর। অথচ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ২৫ বছরের বেশি বয়সের কোন জাহাজ সমুদ্রে চলাচল করতে পারে না। ফলে জাহাজটির সার্টিফিকেট নবায়ন ও মেরামত কাজে ৭ কোটি টাকা ব্যয় করেও কোন লাভ হবে না।

সূত্র জানায়, গত তিন বছর আগে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় করে জাহাজটি মেরামত করে সমুদ্রে চলাচলের জন্য উপযোগী করে তোলা হয়। কিন্তু এতেও কোন লাভ হয়নি। ফলে এখন আবারো জাহাজটির পেছনে অর্থ ব্যায় না করে এটি দ্রুত বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেই সংস্থা লাভবান হবে। পাশাপাশি নতুন জাহাজ ক্রয়েরও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

চীনের তৈরি ‘বাংলার দূত’ জাহাজটি ১৯৮৮ সালে বিএসসির বহরে যোগ হয়। জাহাজটির বিভিন্ন ত্রুটির কারণে আশপাশের কয়েকটি দেশ ছাড়া অন্য কোন বন্দরে যেতে পারছে না বিগত কয়েক বছর ধরে। বেশ কয়েক বছর বসে থাকার পর জাহাজটি মেরামত করে সেনা কল্যাণ সংস্থাকে চুক্তি ভিত্তিক ভাড়া দেয়। কিন্তু অলাভজনক হওয়াতে ফেরত দেয় সংস্থাটিও।  

সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থ বছরে ৫ কোটি, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ১ কোটি ১৫ লাখ লোকসান দিতে হয়েছে। এছাড়া ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে প্রায় ৮ কোটি লোকসান গুনতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (জিএম, চার্টারিং) নিজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বিএসসির বহরে বর্তমানে যেসব জাহাজ আছে সেগুলোর গড় বয়স ৩২ বছর। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ২৫ বছরের ‍অধিক কোন জাহাজ বাণিজ্যিকভাবে জাহাজে চলাচল করতে পারে না। এছাড়া উন্নত বিশ্বে ২০ বছরের জাহাজও বন্দরে ভিড়তে দিচ্ছে না। ফলে জাহাজটি দীর্ঘদিন বসে ছিল।

তিনি জানান, এরপর জাহাজটি সেনা কল্যাণ সংস্থাকে চুক্তি ভিত্তিক ভাড়া দেওয়া হলেও তারা সেটি ফেরত দেয়। এরপর এক বছরের জন্য সিঙ্গাপুরের নবপ্যাক শিপিং কোম্পানী ভাড়া নেয়। চুক্তির মেয়াদ শেষে গত বছরের নভেম্বর মাসে জাহাজটি চার্টার অফ হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।