ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ

প্রাণহানি হলেই কেবল তোড়জোড়

আবদুল্লাহ আল মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৪
প্রাণহানি হলেই কেবল তোড়জোড় ছবি: সোহেল সরওয়ার, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম: ২৪ এপ্রিল ২০১৩। রানা প্লাজা ধস।

প্রাণহানি ঘটে ১ হাজার ১৩৫জন শ্রমিকের। এরপরই দেশজুড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ ও অপসারণের তোড়জোড় শুরু হয়।
চট্টগ্রামেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ ও উচ্ছেদ নামে সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। একবছর না যেতেই আবারো স্থবির এ উচ্ছেদ কার্যক্রম।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের(সিডিএ) তালিকা অনুযায়ী নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ৭৩টি। ২০০৬ সালে চিহ্নিত করা হয় ৫৭টি। ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর এ তালিকায় যুক্ত হয় আরো ৬টি। সাভার  ট্রাজেডির আগ পর্যন্ত একটি ভবনও অপসারণ করেনি সিটি কর্পোরেশন। গত এক বছরে মাত্র একটি ভবন অপসারণ করতে পেরেছে তারা।

একদিকে নগর উন্নয়নের দায়িত্বে থাকা সিডিএ তালিকা তৈরি করেই দায় সারছে। অন্যদিকে কর্পোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানও চলছে ঢিমেতালে। যেন আরেকটি বড় মানবিক বিপর্যয়ের অপেক্ষায় দু’টি সংস্থা।

সিডিএ সুত্র জানায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ২০০৬ সালের শুরুর দিকে নগরীর ৫৭ টি ভবনের একটি তালিকা প্রণয়ন করে। সিটি কর্পোরেশনের ২০০৯ সালের ইমারত নিয়ন্ত্রণ উপধারা ১৭.১ অনুসারে নগরীতে ঝরাজীর্ণ ভবন অপসারণের দায়িত্ব করপোরেশনের। এই আইনের আলোকে ২০০৭ সালের ১১ ডিসেম্বর সিডিএ থেকে ৫৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের একটি তালিকা সিটি কর্পোরেশনে পাঠানো হয়। সাভার ট্রাজেডির পর এ তালিকায় যুক্ত হয় আরো ৬টি ভবন।

২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নগরীর পিকে সেন সড়কে বড়ুয়া ভবন অপসারণের মধ্যে দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে সিটি কর্পোরেশন। ৩০ সেপ্টেম্বর লালদিঘী পশ্চিম পাড়ের জেএম সেন এভিনিউ ভবনটি অপসারণ করা হয়। একই মাসে চন্দরপুরার পেশকার ভবন অপসারণ কাজ শুরু হয়।

জানা গেছে, নগরের সদরঘাট এলাকার পিকে সেন সড়কে বড়ুয়া ভবন ও চন্দনপুরার পেশকার ভবন অপসারণ করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও পরে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।
2014-April/
নগরীর অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বয়স ৫০ থেকে একশ’ বছর। তালিকায় দেড়শ’ বছরের পুরনো ভবনও রয়েছে। এর মধ্যে একটি বিদ্যালয় ভবন ছাড়াও আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে ১৫টি, সিনেমা হল একটি এবং সাতটি বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। বাকিগুলো আবাসিক ভবন। ওইসব আবসিক ভবনে প্রায় পাঁচ হাজার লোক বসবাস করেন।

২০১৩ সালের সাভার ট্রাজেডির পর এক সপ্তাহের মধ্যে ভবনগুলো অপসারণের নিদের্শ দেয় করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু একবছর পার হলেও মূলত একটি ভবন ছাড়া আর কোনো ভবন অপসারণ করতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সরোয়ার উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ভবন চিহ্নিত করে দেওয়া। অপসারণের দায়িত্ব কর্পোরেশনের। তারা যদি অপসারণ করতে না পারে আমরা অনুরোধ করতে পারি কোন তাগাদা তো আর দিতে পারি না। ’

কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া শিরিন বাংলানিউজকে বলেন,‘সিডিএ তালিকা তৈরি করে সিটি কর্পোরেশনে পাঠান। কর্পোরেশন এস্টেট বিভাগ থেকে ফাইল দেওয়া হলে আমি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করি। এ মুহূর্তে আমার কাছে ভবন অপসারণের কোনো ফাইল নেই। ’

কর্পোরেশনের সহকারি এস্টেট অফিসার এখলাস উদ্দিন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন,‘৬০টি ভবনের তালিকা রয়েছে। এরমধ্যে তিনটি অপসারণ করা হয়েছে। চারটি ভবন মালিকরা অপসারণ করেছে। বাকি ৫৩টি ভবন পর্যায়ক্রমে অপসারণ করা হবে। ’

তিনি বলেন,‘ভবনগুলো অপসারনের জন্য ভবনের মালিকদের ইতোমধ্যে একাধিকবার নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। কয়েকজন মালিক নিজ উদ্যোগে অপসারণ করেন, আবার কয়েকজন মালিক আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতে মামলার কারণে ভবন অপসারণে বিলম্ব হচ্ছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।