ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন

পাঁচ ঘণ্টা শূন্য, তিন ঘণ্টায় ৮৬!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৪
পাঁচ ঘণ্টা শূন্য, তিন ঘণ্টায় ৮৬! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: নগর ভবনের চতুর্থ তলা। উচ্চমান সহকারির কক্ষ।

বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬ কোটি টাকার কাজের দরপত্র। ছাত্রলীগ কর্মীদের আনাগোনা।
কেউ বসে আছে কর্পোরেশনের কর্মকর্তার টেবিলের উপর। কেউ বাইরে। সাধারণ ঠিকাদাররা দরপত্র কিনতে গিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের বাধার সম্মুখিন হচ্ছেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৪টি সিডিউলের একটি দরপত্রও বিক্রি করেননি কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার এমন চিত্রই ছিলো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে।

বিষয়টি জানাজানি হলে মেয়রের হস্তক্ষেপে দুপুর ২টার পর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৮৬টি দরপত্র বিক্রি হয়। অভিযোগ রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের এক প্রভাবশালী কাউন্সিলর ও কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।

কর্পোরেশন সুত্রে জানা যায়, দেওয়ান বাজার, আন্দরকিল্লা, পূর্ব বাকলিয়া, জামালখান, উত্তর পতেঙ্গা ও উত্তর পাহাড়তলি ওয়ার্ডে নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ২৪টি সিডিউলে সাড়ে ৬ কোটি টাকার দরপত্র আহবান করে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ছিল দরপত্র বিক্রয়ের শেষ তারিখ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগর ভবনের চারতলায় জামালখান ও দেওয়ান বাজার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে আছে। চারতলার দরপত্র বিক্রির কক্ষটিতে কোনো ঠিকাদার ঢুকতেই বাধার সম্মুখিন হচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মী পা তুলে বসে আছে কর্মকর্তাদের টেবিলের উপর। কর্মকর্তারা চেয়ারে বসে কাজ করে যাচ্ছেন। এতে কারো এতটুকু বিকার নেই।

দুপুর দেড়টা পর্যন্ত দরপত্র বিক্রির দায়িত্বে থাকা কর্পোরেশনের উচ্চমান সহকারি রাজীব চক্রবর্তী অনুপস্থিত। দরপত্র বিক্রি করছেন তার পাশের আরেক কর্মচারী। নাম শের আলী। জানতে চাইলে শের আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত কেউ দরপত্র কিনতে আসেনি। ’

কর্মকর্তাদের টেবিলের উপর কারা বসে ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘আমি দেখিনি। ’

পরে সাংবাদিকরা মেয়রের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি রাজীব চক্রবর্তী ও শের আলীকে ডেকে সবার কাছে দরপত্র বিক্রির নির্দেশ দেন। এরপর দুপুর ২টার পর থেকে দরপত্র বিক্রি শুরু হয়। তবে তখনও কর্মকর্তাদের টেবিলের  উপর বসে পাহারায় থাকেন দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান মাহমুদ হাসনীর ছোট ভাই জামি।

একাধিক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন,‘কর্পোরেশনের কর্মকর্তা রাজীব ও শের আলী ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে দরপত্র বিক্রি করেনি। ওই কক্ষে যারা উপস্থিত ছিলো তারা কেউ ঠিকাদার নন। তাদের মাধ্যমে এক প্রভাবশালী কাউন্সিলর কাজগুলো হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ’

অভিযোগ অস্বীকার করে কর্পোরেশনের উচ্চমান সহকারি রাজীব চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন,‘প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কাজ থাকায় আমি ওখানে ছিলাম। দুপুরের পর থেকে ৮৬টি দরপত্র বিক্রি হয়েছে। এর আগে কেউ দরপত্র কিনতে না ‍আসায় বিক্রি হয়নি। ’

এ প্রসঙ্গে সিটি কর্পোরেশন মেয়র এম মনজুর আলম সাংবাদিকদের বলেন,‘উন্মুক্ত দরপত্র বিক্রি হবে। সিটি কর্পোরেশনে‍র উন্নয়ন কাজের দরপত্রে কোনো ধরণের রাজনৈতিক প্রভাব কাটানো চলবে না। কর্পোরেশনের কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

প্রসঙ্গত, এর আগেও কর্পোরেশনের উচ্চমান সহকারি রাজীব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে দরপত্র বিক্রি না করার অভিযোগ উঠেছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।