ঢাকা, সোমবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মহিউদ্দিনের গলায় ‘পলাতক’ মামুনের ফুলের মালা

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৪
মহিউদ্দিনের গলায় ‘পলাতক’ মামুনের ফুলের মালা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার কাছে র‌্যাবের পক্ষ থেকে দেয়া ৪১ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকার একজন চট্টগ্রামের মামুনুর রশিদ মামুন। র‌্যাবের ভাষ্যমতে মামুন পালিয়ে আছেন ভারতের ত্রিপুরায়।

র‌্যাবের খাতায় পলাতক এই মামুনকে সোমবার সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর গলায় ফুলের মালা দিতে দেখা গেছে।

এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ৭০ তম জন্মদিন ছিল সোমবার।
জন্মদিনে ‘রাজনৈতিক গুরু’র গলায় ফুলের মালা দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন একসময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী মামুনুর রশিদ মামুন। আশির দশকে চট্টগ্রাম নগর ‍ছাত্রলীগের একাংশের প্রভাবশালী নিয়ন্ত্রক মামুন যুবলীগ হয়ে এখন ব্যবহার করেন আওয়ামী লীগের পরিচয়।

জন্মদিনের সকালটা বাসায় কাটিয়ে সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আসেন নগরীর জিইসি মোড়ে নির্মাণাধীন প্রিমিয়‍ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সেখানে একটি কক্ষে নগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে আসা নেতাকর্মীরা ফুল, কেক, মিষ্টি নিয়ে এসে মহিউদ্দিনকে শুভেচ্ছা জানান।

দুপুর ১টা ২০মিনিটে শ’খানেক কর্মী নিয়ে মামুনুর রশিদ মামুন ঢোকেন ওই কক্ষে। এসময় অন্যান্য নেতাকর্মীরা বেরিয়ে যান। মহিউদ্দিন তখন ছিলেন ওয়াশ রুমে। এসময় মামুনকে একটি চেয়ারে বসে মোবাইলে একজনের সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলতে শোনা যায়। দশ মিনিট পর মহিউদ্দিন বের হলে মামুন তাকে দাড়িয়ে সালাম দেন। তবে মহিউদ্দিন কোন জবাব দেননি।

এরপর মামুন ও তার অনুসারীরা মিলে মহিউদ্দিনের গলায় বড় ফুলের মালা পরিয়ে দেন। শ্লোগান দিতে থাকেন কর্মীরা। মামুনের আনা বিশাল কেক কাটেন মহিউদ্দিন। এসময় মামুন বলেন, মহিউদ্দিন ভাই দীর্ঘজীবি হোক। এরপর জিইসি বয়েজ ক্লাব, পূর্ব নাসিরাবাদ ইউনিট আওয়ামী লীগ ও শুলকবহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ব্যানারেও মহিউদ্দিনকে ফুল দেন মামুন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামুনুর রশিদ মামুন বাংলানিউজকে বলেন, আমি মহিউদ্দিন ভাইয়ের ৩০ বছরের কর্মী। আমি কোনদিন মহিউদ্দিন ভাইয়ের বাইরে যেতে পারবনা। আমার উপর অনেক ঝড় গেছে। কিন্তু দল বদল করিনি, নেতাও বদল করিনি। চট্টগ্রামে আমার মুরব্বি মহিউদ্দিন। তার সঙ্গে প্রতিদিন আমার হাই, হ্যালো হয়। মাঝে মাঝে বাসায়ও যায়। কয়েকদিন না গেলে আবার মহিউদ্দিন ভাই লোকজন দিয়ে ফোন করান।

জন্মদিনের ব্যস্ততার এক পর্যায়ে মহিউদ্দিনের কাছে মামুনের উপস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি চুপ থাকেন। পরে তিনি জন্মদিনের মিলাদে যোগ দিতে সেখানে চলে যান।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ সফররত ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার টিমের কাছে ৪১ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা দেয়া হয়। র‌্যাব সদরদপ্তরের পক্ষ থেকে দেয়া তালিকায় চট্টগ্রামের সাত সন্ত্রাসীর নাম আছে। এরা হল, মামুনুর রশিদ মামুন, সুনীল দে, রাজিব দত্ত রিংকু, এইচ এম আবু তৈয়ব, মোর্শেদ খান, নূরুল আলম ওরফে এতিম আলম এবং সাজ্জাদ খান।

তালিকায় পলাতক অথচ চট্টগ্রামে মামুনুর রশিদ মামুনের অবস্থান, কিভাবে সম্ভব জানতে চাওয়া হয় র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের পরিচালক লে.কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদের কাছে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তালিকাটা সদর দপ্তর থেকে দেয়া হয়েছে। তালিকায় মামুনুর রশিদ মামুন নামে একজন আছেন সেটা সত্যি। তবে তালিকার মামুন আর চট্টগ্রামের মামুনুর রশিদ মামুন একই ব্যক্তি কিনা তা আমরা যাচাই বাছাই করে দেখছি।  

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামুনুর রশিদ মামুন বাংলানিউজকে বলেন, র‌্যাব ভুল করে তালিকায় আমার নাম দিয়েছে। মহিউদ্দিন ভাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দিয়েছেন। সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীকেও মহিউদ্দিন ভাই আমার বিষয়ে বলেছেন। মহিউদ্দিন ভাই এবং নাছির ভাই (নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন) মিলে আমার একটা বায়োডাটা র‌্যাবের কাছে পাঠিয়েছেন।

নগর পুলিশের বিশেষ শাখার তৈরি করা সন্ত্রাসী তালিকায় খুলশী থানার এক নম্বর সন্ত্রাসী হিসেবে আছে মামুনের নাম। তবে মামুনের বিষয়ে মুখ খুলতে চাননা নগর পুলিশের কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, মামুনের নাম এখনও সন্ত্রাসী তালিকায় আছে। তার বিরুদ্ধে ২১টি মামলা ছিল। এখন অবশ্য মাত্র একটি মামলা বিচারাধীন আছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। গত ১৫ বছরে চট্টগ্রামের কোন থানায় তার বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। এজন্য তার নাম হয়ত ভবিষ্যতে তালিকা থেকে বাদ যাবে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট মো.আইয়ূব খান বাংলানিউজকে জানান, ১৯৮৯ সালের ৪ মে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় আবু তাহের নামে একজনকে গুলি করে খুন করার ঘটনায় মামুনের বিরুদ্ধে একটি মামলা বিচারাধীন আছে। তবে হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার কার্যক্রম স্থগিত আছে।

৭৫’ পরবর্তী সামরিক সরকারের আমলে চট্টগ্রাম নগরীতে ছাত্রলীগের রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখতে মামুনুর রশিদ মামুনের ভূমিকা ছিল। নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের বড় একটি অংশ ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। শুরু থেকেই ছিলেন মহিউদ্দিনের ভাবশিষ্য।

দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেসময় চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দু’টি ধারা ছিল। একটির নেতৃত্ব দিতেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, আরেকটির নেতৃত্বে ছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তখনকার ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিন (নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) ও মামুনুর রশিদ মামুন উভয়ই ছিলেন মহিউদ্দিনের সঙ্গে। আর আক্তারুজ্জামান বাবু’র সঙ্গে ছিলেন বাকশালপন্থীরা।

১৯৮২ সালে ছাত্রলীগের মধ্যে ভাঙনের পর আক্তারুজ্জামান বাবু’র অনুসারী অধিকাংশ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ থেকে দূরে সরে যান। তখন আ জ ম নাছির উদ্দিনকে কাছে টেনে নেন আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। আর নাছিরের উত্থান ঠেকাতে মহিউদ্দিন মামুনকে সামনে ঠেলে দেন। শুরু হয় নাছির-মামুন আধিপত্যের লড়াইয়ের রাজনীতি।

মূলত মহিউদ্দিনের প্রশ্রয়ে আশির দশকের শুরু থেকে প্রায় দুই যুগ দাপটের সঙ্গে চট্টগ্রামে অবস্থান করেন মামুন। এসময় মামুনের বিরুদ্ধে নিজ দলের নেতাকর্মী হত্যা, সহকারি পুলিশ কমিশনার বশিরউল্লাহ হত্যা, অবাধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে। একসময় আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন মামুন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামুনের দাপট আরও বেড়ে যায়।

২০০০ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ড থেকে মামুন কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে মামুন দৈনিক পূর্বকোণ অফিসে ঢুকে তিন সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করেন। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে তার মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকেন মহিউদ্দিন। তবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মহিউদ্দিন সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে করে আদালতে আত্মসমর্পণের জন্য পাঠান। এসময় প্রায় দু’বছর জেল খেটে ২০০৩ সালের আগস্টে তিনি মুক্ত হন।

র‌্যাব, পুলিশ সূত্র ও মামুনের ঘনিষ্ঠজনদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালে র‌্যাব গঠনের পর মামুন ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘদিন ভারতের কোলকাতায় অবস্থানের পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামুন ফেনী দিয়ে চট্টগ্রামে প্রবেশ করেন। প্রথমদিকে মামুন চট্টগ্রামে থাকতেন না। তিনি দীর্ঘদিন ফেনীতে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করেন। পরে সেসময়ের চট্টগ্রামের একজন মন্ত্রীর আশ্বাসে নগরীতে ফিরে এসে খুলশিতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান শুরু করেন। ২০১২ সালের ২৩ আগস্ট চট্টগ্রাম ক্লাবে সঙ্গীতশিল্পী রবি চৌধুরীকে লাঞ্চিত করে ফের আলোচনায় আসেন।

নগরীতে ফিরে মামুন আর মহিউদ্দিনের রাজনীতিতে ফিরেননি। ত‍ৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা.আফছারুল আমিনের অনুসারী হিসেবে নতুন পরিচিতি পান মামুন। চট্টগ্রামে থাকলেও প্রায় ৫ বছর মহিউদ্দিনের বাসায় ঢুকতে পারেননি মামুন।

২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আফছারুল আমিনের আর মন্ত্রীসভায় জায়গা হয়নি। মামুনও আফছারুল আমিনকে বাদ দিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে সম্পর্কন্নোয়নের চেষ্টা চালান। গত মার্চে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে তার বাসায় নিয়ে যান নগর আওয়ামী লীগের দুই সহ-সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও নইমউদ্দিন চৌধুরীকে যারা নাছিরপন্থী হিসেবে পরিচিত। সেখানে তারা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কেক কাটেন। সম্প্রতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে অতিথি করে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন মামুন। গত ঈদুল আযহার সময় আ জ ম নাছির উদ্দিনের বাসায় গিয়ে মামুন তার পায়ে ধরে সালাম করেন বলে দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

তবে শেষ পর্যন্ত সোমবার মামুনুর রশিদ মামুনকে আবার দেখা গেছে একসময়ের রাজনীতির গুরু মহিউদ্দিনের কাছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, মামুন চেয়েছিলেন নাছির ভাইয়ের সম্পর্ক গড়ে নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হতে। কিন্তু র‌্যাবের তালিকায় নাম আসার পর তিনি আবারও মহিউদ্দিন ভাইয়ের কাছে আসতে চাচ্ছেন। মহিউদ্দিন ভাই তাকে দেখলে বিরক্ত হন। নাছির ভাইও সম্ভবত তাকে জায়গা দিতে চাচ্ছেন না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামুনুর রশিদ মামুন বাংলানি‌উজকে বলেন, মহিউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে আমার কোন দূরত্ব নেই। অনেকে তাকে আমার নামে ভুল বুঝাতে গিয়ে ধমক খেয়েছেন। মহিউদ্দিন ভাই ভেবেছিলেন আমি উনার উপর অভিমান করেছি। পরে বুঝেছেন আমি এখনও মহিউদ্দিন ভাইয়ের রাজনীতিই করি। মহিউদ্দিন ভাই আবার আমাকে কাছে টেনে নিয়েছেন। বিজয় মেলার কমিটিতে ঢুকিয়েছেন।  

তবে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের একজন সংগঠক বাংলানিউজকে বলেন, মামুনুর রশিদ মামুন পরিষদের অফিসে আসেন। তবে পরিষদের কোন পদে তিনি নেই।

আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাছির ভাইয়ের সঙ্গে আমার একসময় বিরোধ ছিল। এখন সেসব কিছু নেই। নেত্রী তাকে নগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি বানিয়েছেন। আমি কী বিরোধ রেখে পারব। নাছির ভাইয়ের সঙ্গে আমার এখন খুব ভাল সম্পর্ক।

এ বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকবার আ জ ম নাছির উদ্দিনের মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর  ০১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।