চট্টগ্রাম: বঙ্গোপসাগরে ফিশিং ট্রলার ডুবির সঙ্গে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাওয়া বসুন্ধরা-৮ জাহাজটির সংঘর্ষ হয়নি বলে জানিয়েছেন জাহাজটির ক্যাপ্টেন ও ক্রুরা।
ওইদিন গভীর রাতে কিভাবে ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখতে নৌ-বাণিজ্য অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতর ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাহাজটির পিএন্ডআই ক্লাবের স্থানীয় প্রতিনিধি ইন্টারপোর্ট মেরিটাইম লিমিডেট’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের।
বসুন্ধরা-৮ এর ধাক্কায় ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে তা প্রমাণ হলে মালিকপক্ষ যাবতীয় ক্ষতিপূরণ দিবে বলেও জানান তিনি।
গত শুক্রবার ভোররাতে সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ-পশ্চিম ৩০ নটিক্যাল মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরে একটি জাহাজের ধাক্কায় ২৯ জন মাঝিমল্লাসহ এফভি বন্ধন নামে একটি মাছ ধরার ট্রলারডু্বির ঘটনা ঘটেছে। দুইজন জীবিত ও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৬জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের বলেন, কোন জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ফিশিং ট্রলারটি ডুবেছে তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি। অনুমান করেই বসুন্ধরা-৮ জাহাজটির কথা বলা হচ্ছে। এরপরও যাওয়ার পথে এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা তা জানাতে জাহাজের ক্যাপ্টেনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। জাহাজের ক্যাপ্টেন ও ক্রুরা জানিয়েছেন জাহাজটির সঙ্গে এরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি।
![](files/December_2014/December_01/Bashundhora_2_banglanews24_694704437.jpg)
ঘটনার পর নৌ-বাহিনীর সদস্যরা বসুন্ধরা-৮ জাহাজে গিয়ে সার্ভে করে সংঘর্ষের কোন আলামত না পাওয়ায় জাহাজটিকে চলে যাওয়ার অনুমতি দেয় জানিয়ে জাহাজের প্রতিনিধি বলেন, ট্রলার ডুবির পরই নৌ-বাহিনীকে জানানো হয় বসুন্ধরা-৮ জাহাজটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে। এরপরই নৌ-বাহিনী জাহাজটিকে অবস্থান করার নির্দেশ দেন।
শুক্রবার বিকেলে তারা জাহাজে উঠে তদন্ত করেন। সংঘর্ষের কোন আলামত না পেয়ে গন্ত্যব্যে রওয়ানার অনুমতি দেন। বিষয়টি ক্যাপ্টেন জাহাজ পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। এরপর সিম্পনি শিপ ম্যানেজম্যান্ট’র জেনারেল ম্যানেজার ফের বিষয়টি খতিয়ে দেখা এবং জাহাজের জিপিএস লগ ও ভিডিআর ডাটা সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। ফের তদন্ত করে এ ধরণের কোন প্রমাণ পায়নি বলে জানান জাহাজের ক্যাপ্টেন।
তিনি বলেন, বসুন্ধরা-৮ জাহাজটি যদি ধাক্কা দিত বা ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষ হতো তার প্রমাণ থাকতো। কিন্তু নৌ-বাহিনী সার্ভে করেও কোন প্রমাণ পাননি।
বসুন্ধরা-৮ এর সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে কিনা তা পুনরায় তদন্ত করতে নৌ-বাণিজ্য অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতর ও জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফিশিংকে অনুরোধ করা হয়েছে।
ওই পথে চলাচল করেছে আরো ৪ জাহাজ:
ট্রলার ডুবির ঘটনার দিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বসুন্ধরা-৮ জাহাজটি ছেড়ে গেছে এই তথ্যের ভিত্তিতে জাহাজটিকে দায়ী করা হচ্ছে উল্লেখ করে মহিউদ্দিন আবদুল কাদের বলেন, ঘটনার রাতে ওই রুটে আরো চারটি জাহাজ চলাচল করেছিল। তাই কেবল এই জাহাজটিকে দায়ী করা যায় না।
বসুন্ধরা-৮ জাহাজের নাম প্রচার হওয়া একটি ভৌতিক বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্রলারের ২৯জন সবাই ডুবে যায়। দুইজনকে জীবিত উদ্ধারের একদিন পর চট্টগ্রামে আসেন। কিন্তু তার আগেই বসুন্ধরা-৮ জাহাজের নাম প্রচার হয়। অথচ জাহাজটি কে বা কারা দেখেছে তার সঠিক কোন তথ্য নেই।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী ওইদিন রাতে এক্সপ্রেস লোটস, ক্যামিল্লা, কোটা ওয়ারিছ ও কার ক্যারিয়ার ওসান ব্লু ওই রুটে চলাচল করেছিল। প্রকৃত পক্ষে কোন জাহাজের সঙ্গে ঘটনা ঘটেছিল তা তদন্ত করে সঠিক তথ্য বের করা প্রয়োজন।
![](files/Bashundhora_1_banglanews24_510384368.jpg)
বেঙ্গল ফিশারিজের লুকোচুরি:
এদিকে বেঙ্গল ফিশারিজ লিমিটেড পরিচালনাধীন ডুবে যাওয়া ট্রলারের ক্রুদের তথ্য নিয়ে লুকোচুরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের।
তিনি বলেন, ওই ট্রলারের ক্রুদের নামের তালিকা চেয়েছি। তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছি। কিন্তু তারা কোন সহযোগিতা করছে না। এমনকি যে দুইজন ক্রুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে তাদের সাথে কথা বলারও সুযোগ দিচ্ছে না।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বেঙ্গল ফিশারিজের সহকারী ব্যবস্থাপক (অপারেশন) কাজী কামরুল আমীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান। ট্রলারের ক্রুদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে তাদের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রমাণ সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ দিতে আমরা প্রস্তুত। কিন্তু তা নেওয়ার জন্য তাদের কোন তৎপরতা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৪