ঢাকা, সোমবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কি শ্রী-রে বাবা!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৪
কি শ্রী-রে বাবা! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম থেকে: কি শ্রী-রে বাবা! ছড়িয়ে ছিটিয়ে নোংরা আবর্জনা, রাস্তার উপর এবড়ো থেবড়ো পড়ে আছে কংক্রিটের ব্লক (রোডডিভাইডার)। এই থাকলে কেউ দ্বিতীয়বার আসবে!

সেগুলো তুলে সোজা করা অথবা সিরিয়াল করে দেওয়ার মতো লোকোবলও বোধ হয় সিটি করপোরেশনের নেই।

শুধু দেয়াল লিখন দিয়েই শেষ করেছে দায়িত্ব। অবহেলা-অনাদরে এভাবেই যেনো ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বেশিরভাগ এলাকা।


মনোয়ার হোসেন, রোববার (১ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রামগামী (ঢাকা-চট্টগ্রাম) তুর্ণা এক্সপ্রেসেই পরিচয় তার সঙ্গে। কৌতুহল নিয়ে প্রায় ছয় বছর পর চট্টগ্রাম এসেছেন শীতকে সেলিব্রেট করতে।

ভাবছিলেন ভোরে ট্রেন থেকে নেমেই হয়তো দেখতে পাবেন সুন্দর, যানজটমুক্ত পরিষ্কার এক নগরী। কিন্তু ট্রেন থেকে নেমেই মন খারাপ হয়ে গেলো তার, নগরীর এ বেহাল দশায় আক্ষেপের ঝাঁজ তার কথায়। এর আগে এসেছিলেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ঘুরতে। এবার গন্তব্য রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাই লেক। দেশের বাইরে বলতে শুধু নেপাল গেছেন একবার। নিজের দেশটাকেই আগে ভালো করে ঘুরে-ফিরে দেখে নিতে চান। যে কারণে প্রতি শীতেই চেষ্টা থাকে কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাওয়ার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের গর্ব করার মতো অনেক কিছু আছে। কিন্তু আমরা সেগুলোকে তুলে ধরতে পারছি না। পর্যটন খাতের সম্ভাবনাকে ব্যবহার করতে পারলেই অনেকদূর এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। নেপাল পারলে আমরা কেন পারব না। আমাদের কি নেই? পাহাড়, সমুদ্র, বন, সমতল ভূমি, বিস্তৃর্ণ সবুজ ক্ষেত। কিন্তু এগুলোকে কাজে লাগাতে পারছি না।

চট্টগ্রাম নগরীর রাস্তার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, দেখেন কি অবস্থা। পর্যটন মৌসুম চলছে এখন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে। সবচেয়ে বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে। আর এই চট্টগ্রামেরই কিনা এমন দশা!

বেশ একটু ঝাঁঝালো কণ্ঠেই বলেন, কোনো পর্যটক এই দৃশ্য দেখে গেলে সে-কি দ্বিতীয়বার আসবে এখানে! অথবা তার বন্ধুকে এখানে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে! কখনই না। তাহলে আমরা পর্যটকদের কি মেসেজ দিচ্ছি।

এরপর নিউমার্কেট মোড়ে সড়ক দ্বীপটি দেখে আরও খানিকটা ক্ষেপে যান তিনি। সড়কদ্বীপের ম্যুরালগুলো ঢেকে গেছে বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডে। আর নিচে পলিথিন, বিস্কুট ও চটলেটের মোড়ক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখানে সেখানে।

আর একটু সামনে জুবিলি রোড ধরে সামনে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে কত অবহেলা অনাদরে রয়েছে সড়কটি। ফুটপাত ও রোড ডিভাইডারে ময়লার স্তুপ। খানিকটা এগিয়ে গেলেই কানন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুলের প্রবেশ পথেই প্রধান সড়কে রয়েছে ইউটার্নের পয়েন্ট।

কিন্তু সেখানে ময়লা ফেলে ইউটার্নের পথ সঙ্কুচিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বেলা ৯টায় গিয়েও দেখা গেছে র‍াস্তার পাশে ময়লার স্তুপ।

স্থানীয় সুজন মিয়া জানান, এখানে ডাস্টবিন নেই তাই এখানে ফেলা হয়। ১২ টার আগে ময়লাগুলো সরানো হয় না। কোনদিন ২টা পার হয়ে যায়। আবার কোনো কোনো সময় দুই, তিন দিন পর নিয়ে যাওয়া হয়।

রিক্সা এগিয়ে চলছিলো চট্টেশ্বরী অভিমুখে। কাজীর দেউড়ী মোড় ক্রস করার পর নতুন উপসর্গ যোগ হয় তাতে। ভাঙা রাস্তায় উড়ছে ধুলো। নাকে হাত না দিয়ে পার হওয়া কঠিন।

রাস্তার মাঝ বরাবর কেটে ওয়াসা পানির লাইন সংস্কার করেছে কয়েক মাস আগে। সেখানে শুধু বালু মিশ্রিত ইটের খোয়া ফেলানো হয়েছে। এই অবস্থা জেআই মাদ্রাসা সড়ক হয়ে গুলপাহাড় পর্যন্ত (কয়েক কিলোমিটার), জানালেন রিকশা চালক আনোয়ার মিয়া।

আনোয়ার বলেন,  ৪ মাস আগে কাজটি করা হয়েছে। তখন সাইনবোর্ডে লেখা ছিলো, ওয়াসার পানির লাইনের কাজ চলছে। সামরিক (সাময়িক) অসুবিধার জন্য দুঃখিত।   সামরিক মানে কি? মনে করেছিলাম এক সপ্তাহ পর ঠিক হয়ে যাবে। এই কি সামরিকের নমুনা।

চট্টেশ্বরী মোড় গিয়ে মনোয়ার হোসেনের মেজাজ যেনো বিগড়ে গেলো আরো কয়েক ধাপ। একাই বকছিলে। রাস্তার উপর কংক্রিটের অস্থায়ী ব্লক বসিয়ে রোড ডিভাইডার তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেই কংক্রিটের ব্লকগুলো এবড়ো থেবড়ো হয়ে পড়ে রাস্তাকে সংকুচিত করে রেখেছে।

মনোয়ার হোসেন বলেন, দেখেন ভাই। এগুলোতো একদিনে পড়ে যায়নি। কতদিন ধরে পড়ে আছে। কতগুলি ভেঙেও গেছে। ময়লা না হয় রাতে ফেলেছে জনগণ। কিন্তু রোড ডিভাইডার তৈরি করতে বসানো ব্লকগুলোর কি বেহাল অবস্থা। এগুলো এবড়ো থেবড়ো পড়ে আছে। এর দায় কার উপর চাপাবে সিটি করপোরেশন!

নগরীর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা রোড, ব্যাটারি গলি, জেআই মাদ্রাসা রোড, নূর আহমেদ রো্ড, কাপাসগোলা রোড, বাটালী গলিসহ অনেক রোডেই কংক্রিটের ভাসমান ডিভাইডার বসানো হয়েছে। সেগুলো উল্টে গিয়ে এলো-মেলো ভাবে পড়ে আছে। কোনটি আবার গাড়ির চাকায় পিষ্ঠ হয়ে আধা ভাঙ্গা হয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।  

শুধু যে শ্রী নষ্ট করেছে তা নয়। রোড ডিভাইডারের এবড়ো থেবড়ো পড়ে থাকায় যানবাহন সঠিকভাবে চলতে পারছে না। দিনের বেলা বেশিরভাগ সময়েই যানজট লেগে থাকছে। ব্যাটারি গলিতে গিয়ে দেখা গেছে ভয়ঙ্কর অবস্থা। সেখানে ব্লকগুলো এলামেলো পড়ে থাকায় ঠিকমতো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।

রাস্তায় কোথাও কোথাও পরিছন্ন কর্মীদের দেখা গেছে। কিন্তু খানিকটা গাছাড়া ভাব। ভাসা ভাসা ময়লা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ময়লা থেকেই যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন, ব্যবসায়ী ও রিকশা চালকরা জানিয়েছে, চৌধুরী সাব (সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী) কাজ করেছে। কড়া শাসনে রেখেছিলেন। এখনকার মেয়র খুবই নরম মানুষ। তাই এই গাছাড়া ভাব।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।