ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পূর্ণিমার আলোয় যাদের ভাগ্য বদল

উজ্জ্বল ধর, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪
পূর্ণিমার আলোয় যাদের ভাগ্য বদল ছবি: উজ্জল ধর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে: কাঁচস্বচ্ছ জলরাশি।   ছোট ছোট ঢেউ আঁছড়ে পড়ছে সৈকতের বালিতে।

  নারিকেল জিঞ্জিরার নারিকেল গাছের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ভরা পূর্ণিমার চাঁদ।   জ্যোৎস্নায় চিক চিক করছে নোনা জলের ঢেউ।
  হালকা কনকনে শীতে গায়ে গরম কাপড় জড়িয়ে ছোট নৌকা আর জাল নিয়ে অথৈই সাগরে ছুটছেন করিমুদ্দিনরা।

ঘড়ির সময় তখন রাত ১২টা।   ফেলে আসা জাল টেনে আনছে লিয়াকত, ফজল, শাহবুদ্দিনসহ আরো ২০ জেলে। তাদের সহযোগীতা করতে এগিয়ে এসেছে পরিবারের আরো কয়েকজন।

সাগরপাড়ে কথা হয় করিমুদ্দিনদের সঙ্গে।   আলাপে উঠে আসে তাদের অভাব অনটনের করুণ জীবনচিত্র। এককভাবে বড় জাল কেনার সামর্থ নেই কারোই।  

তাই ২০ জনের ২০টি জাল একসঙ্গে জোড়া লাগিয়ে তৈরি করে বড় জাল।   একত্রিত করা হয় কয়েকটি নৌকা।   এদের মধ্যে বয়োজোষ্ঠ যিনি তিনি হন দলপতি।   পূর্ণিমা রাতে দল বেঁধে মাছ ধরতে নেমে যায় অথৈই সাগরে ।

পঞ্চাশোর্ধ্ব করিমুদ্দিন তেমনি একটি দলের পতি।   তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সেন্টমার্টিনের এ নারিকেল জিঞ্জিরায় পূর্ণিমা রাতে মাছ ধরে যাচ্ছেন ।   আট সদস্যের পরিবারে ছেলে মেয়েরা স্কুলে না গেলেও যায় স্থানীয় নুরাণী মাদ্রাসায়।

দিনের আলোয় তাদের জালে মাছ তেমন ধরা পড়ে না।   যখন ভরা পূর্ণিমার চাঁদের আলো সাগরের কাঁচস্বচ্ছ জলরাশিতে গিয়ে আঁছড়ে পড়ে, তখনি পানির নীচে থাকা দল বেঁধে থাকা ছোট ছোট রুপালী মাছগুলো আরো চিক চিক করে উঠে।   এই দৃশ্য ধরা পড়ে অভিজ্ঞ করিমুদ্দিনদের চোখে।   আর তখনি করিমুদ্দিন দল নিয়ে জাল ফেলতে ছুটেন সে স্থানে।   শীতের মৌসুমে পূর্ণিমা রাতে ছোট ছোট রুপালী মাছগুলো গভীর সাগর থেকে উপকুলের একেবারে কাছাকাছি চলে আসে।   তখনি ভাগ্য বদলের যুদ্ধে নামেন করিমুদ্দিনরা ।

বর্ষা মৌসুমে উত্তাল সাগরে করিমুদ্দিনদরা এ ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে সাগরে ছুটে যেতে পারেন না, তাই দুঃখকষ্টের অন্ত থাকেনা।   মহাজন আর এনজিও র কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে চলে তাদের দিন।   অনেকে এ মৌসুমে দিন মজুরী কাজের সন্ধানে জন্মভূমি সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছেড়ে আসেন টেকনাফ বা কক্সবাজারে।

তাই বছর ঘুরে শীতের এ পূর্ণিমা রাতের অপেক্ষায় থাকেন দ্বীপের জেলেরা।   জালে ধরা পড়বে রুপালী মাছ।   শোধ হবে দেনা।   ঘুচবে কয়েক মাসের অভাব অনটন।  

আলাপচারিতাকালে করিমুদ্দিনের দল জাল টেনে তুলে আনে তীরে।   দেখা যায় ছোট ছোট কেচকি আর সাবিলা মাছের বিশাল সমাহার।   জালে ধরা পরে একটি লম্বা নারিকেল সুরমা মাছ।   জানতে চাইলে দলনেতা মাছটির দাম হাঁকান ৮০০ টাকা।   একদাম।   কোন দর কষাকষি চলবে না।   ধরা পড়া মাছের বৃহৎ অংশ দিয়ে শুটকী তৈরী করে বাড়ীর পর্দার আড়ালের নারীরা।

এর মধ্যে আবারো জাল ফেলার স্থান খুঁজতে থাকেন করিমুদ্দিনরা।   সাগরে নৌকা ছুটানোর নির্দেশ দেন লিয়াকতকে।   এভাবেই পূর্ণিমার একেকটি রাত হয়ে  উঠে সাগরকন্যার অভাবী মানুষগুলোর জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার অন্যতম হাতিয়ার।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।