ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সংকেত দিয়েও কাজ হয়নি

গভীর ঘুমে চালক-সহকারী: প্ল্যাটফর্মে ট্রেন

মো.মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪
গভীর ঘুমে চালক-সহকারী: প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ছবি: উজ্জ্বল ধর/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: লাইনে ইঞ্জিন প্লেসম্যান্টের দায়িত্বে নিয়োজিত চালক ও সহকারী গভীর ঘুমে নিমজ্জিত থাকার কারণেই চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দায়িত্ব পালন করেননি পয়েন্টসম্যান।



ঘুমে থাকার কারণে স্টেশনের ক্যাবিন থেকে বার বার সংকেত দেওয়া হলেও শুনতে পাননি। ফলে দ্রুত গতিতে আসা ইঞ্জিন ও বগি প্ল্যাটফর্মের উপর উঠে যায়।
এতে ইঞ্জিনের চাকা দুমড়ে মুচড়ে যায়। ভেঙে যায় টিসি গেইটের গ্লাস।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়তলী ইয়ার্ড থেকে ফিট দিয়ে চট্টগ্রাম স্টেশনের ছয় নম্বর লাইনে প্লেসম্যান্ট করতে একটি বগি নিয়ে চট্টগ্রাম স্টেশনের দিকে রওয়ানা দেন সাব লোকো মাস্টার জহিরুল হক ও সহকারী লোকো মাস্টার এমরান হোসেন।

তারা জানান, স্টেশনে নির্দিষ্ট গতিতে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু শান্টিং ইঞ্জিনটি ইয়ার্ড থেকে যে গতিতে ছেড়ে এসেছিল সেই গতিতেই স্টেশনে প্রবেশ করছে দেখে স্টেশনের ক্যাবিনসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে একাধিকবার গতি কমানোর সংকেত দেওয়া হয়। কিন্তু গতি কমেনি। ফলে ইঞ্জিনটি ৬ নম্বর লাইন থেকে ক্রসওভার দিয়ে ৫ নম্বর লাইনের উপর দিয়ে বাফার স্যাংক ভেঙে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে উঠে যায়।

দুর্ঘটনার পর একটি উদ্ধারকারী ট্রেন এসে পৌনে ১১টায় উদ্ধার কাজ শুরু করে। ইঞ্জিনটিকে লাইনস্থ করে। মেরামত করা হয় রেল লাইন।

এদিকে এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। সদর দফতর থেকে করা চার সদস্যের কমিটি বুধবার বিকেলে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। তবে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক জানিয়েছেন তদন্ত কাজ শেষ না হওয়ায় বুধবার প্রতিবেদন জমা দিতে পারছেন না তারা।

অন্যদিকে বিভাগীয় পর্যায়ে করা তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। কমিটির প্রধান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা ফিরোজ ইফতেখার বাংলানিউজকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণ ও দায়ীদের সনাক্ত করতে কমিটি কাজ করছে।

বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

দুর্ঘটনার কারণ ও দায়ীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের তদন্ত কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তাই এ বিষয়ে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দীতে সাব লোকে মাস্টার ও সহকারী লোকো মাস্টারের ঘুমের বিষয়টি উঠে এসেছে। এছাড়া আরো বেশ কিছু জায়গায় অনিয়ম থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।  

তিনি বলেন,‘দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রত্যক্ষদর্শী এবং বিভিন্ন মোটিফ দেখে মনে হলো চালকরা ঘুমে টুমে ছিল। ’  

সূত্র জানায়, প্রায় সময় ইঞ্জিন চালু করে ঘুমিয়ে পড়েন চালক ও সহকারীরা। বিভিন্ন সময়ে তাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে, প্রমাণও পেয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। কেবল তারাই নয় ট্রেন চলাচলের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য শাখার লোকজনও নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেনা বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, স্টেশনের ইঞ্জিন নিয়ে আসার দায়িত্বে থাকেন একজন সাব লোকে মাস্টার ও একজন সহকারী লোকো মাস্টার। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে একজনই উপস্থিত থাকেন।

তারা বলছেন, চালকদের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি দেখা-শুনার দায়িত্বে থাকা লোকো ইন্সপেক্টর ও ম্যানটেইন্যান্স ইন্সপেক্টররা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। অথচ তাদের দায়িত্ব হলো চালকরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কিনা তা দেখা। আর তারাই দায়িত্ব পালন করেন না।

এদিকে ঢাকাগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগি প্ল্যাটফর্মের ঢুকে যাওয়ার ঘটনায় তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

দায়িত্ব অবহেলার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোজ ইফতেখার। তিনি জানান, ইঞ্জিনের সাব লোকো মাস্টার (এসএলএম) জহিরুল হক, সহকারী লোকো মাস্টার এমরান হোসেন ও পয়েন্টস ম্যান জাহাঙ্গীর আলম সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪

** প্ল্যাটফর্মে প্রভাতী: তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।