চট্টগ্রাম: বিলবোর্ড উচ্ছেদ নিয়ে সিটি মেয়রের ফিরতি যোগাযোগের অপেক্ষায় আছেন সিএমপি কমিশনার মো.আব্দুল জলিল মন্ডল।
শনিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিলবোর্ড উচ্ছেদ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য দেন সিএমপি কমিশনার।
বিলবোর্ড উচ্ছেদ বন্ধ কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিলবোর্ড উচ্ছেদ আমার কাজ নয়। এটা যাদের কাজ তারা করবে।
বিলবোর্ড উচ্ছেদ আবার শুরু হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মাননীয় মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছেন, নীতিমালা ভঙ্গ করে যেসব বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে সিটি কর্পোরেশন সেগুলোর তালিকা করছে। তালিকা তৈরির কাজ শেষে হলে সিএমপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
তিনি বলেন, নীতিমালা ভঙ্গ করে বিলবোর্ড স্থাপন মানে অবৈধ। সুতারং এগুলো থাকতে পারবেনা। আমি সিটি কর্পোরেশন থেকে কখন আবার যোগাযোগ করে সেটার অপেক্ষায় আছি।
মেয়র তাকে ফোন করেছেন কিনা-এর জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, উনি তো সিনিয়র। উনি কেন ফোন করবেন ? আমরাই উনাকে ফোন করি। উনার পক্ষ থেকে কেউ কেউ ফোন করেন।
![](files/December_2014/December_13/Ctg_inner_banglanews24_804088720.jpg)
চট্টগ্রাম নগরীতে বিলবোর্ড স্থাপন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা আছে। মাসখানেক আগে চট্টগ্রাম সফরে এসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যত্রতত্র বিলবোর্ড নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মন্ত্রী এজন্য সিটি কর্পোরেশনকেও দায়ি করেন।
নগরীতে বিলবোর্ড ব্যবসার অন্যতম নিয়ন্ত্রক নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। নগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং যুবদলের অনেক নেতাও এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মূলত তাদের রাজনৈতিক দাপটের কাছে অসহায় সিটি কর্পোরেশন অতীতে বারবার উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েও পরে পিছিয়ে গেছে।
এ অবস্থায় কমিশনার হিসেবে যোগদানের পর বিলবোর্ড উচ্ছেদে এগিয়ে আসেন আব্দুল জলিল মন্ডল। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ৪২২টি অবৈধ বিলবোর্ডের একটি তালিকা নগর পুলিশকে দেয়া হয়।
ওই তালিকা ধরে গত ১৬ নভেম্বর থেকে বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযানে নামে নগর পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশন। শুরুতেই নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিলবোর্ড বাধার মুখেও উপড়ে ফেলে নগর পুলিশ যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছে, আবার এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আরশাদুল আলম বাচ্চুর বিলবোর্ড উচ্ছেদ করতে না পেরে সমালোচনাও কুড়িয়েছে।
তবে মাত্র ৩১টি বিলবোর্ড উচ্ছেদের পর অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি নগরীর বাকলিয়া থানায় ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানে বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে অসহায়ত্বের কথাও শোনা গেছে পুলিশ কমিশনারের মুখে।
নগরীর বিভিন্ন আবাসিক ভবন, মার্কেট, শপিংমলের সামনে অবৈধ স্ল্যাব বানিয়ে নালা-নর্দমায় স্বাভাবিক পানি নিস্কাশন প্রক্রিয়া বন্ধ করে ফেলার বিরুদ্ধে শনিবার বিকেল থেকে অভিযান শুরু করেছে নগর পুলিশ। মূলত এ অভিযানের বিষয়ে জানাতেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিএমপি।
সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশ কমিশনার বলেন, শপিংমল, মার্কেট, ভবনের সামনে অবৈধভাবে আইন ভঙ্গ করে অনেকে নালার উপর স্ল্যাব বসিয়েছে। এতে নালা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে ময়লা-আবর্জনা যেতে পারছেনা। আমরা এলাকায় এলাকায় যাব। সেখানে তাদের দরজায় টোকা দিয়ে বলব, আপনার নালা পরিস্কার করুন।
তিনি বলেন, আমরা এক সপ্তাহ সময় দেব। যদি এক সপ্তাহ পর গিয়ে দেখি নালা পরিস্কার করা হয়নি তখন মামলা করে দেব।
তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি ছাড়াই অনেকে স্ল্যাব বসিয়েয়েছেন। আমরা চাইলে সেটার জন্যও আইন প্রয়োগ করতে পারি। কিন্তু সেটা আমাদের কাজ নয়। আমরা শুধু নালা পরিস্কার রাখার বিষয়ে কাজ করব।
সিএমপি কমিশনার বলেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে যদি আমরা নগরীর সব নালা, ড্রেন পরিস্কার করে ফেলতে পারি তাহলে মার্চ-এপ্রিলে বৃষ্টি শুরুর পর আর জলাবদ্ধতা হবেনা। বৃষ্টি হলে নালা দিয়ে সব ময়লা গড়িয়ে সাগরে গিয়ে পড়বে।
তিনি জানান, নালা পরিস্কারের জন্য পিএইচপি ফ্যামিলি এবং চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকে ৩০ জন করে ৬০ জন শ্রমিক দেয়া হচ্ছে। তারা সপ্তাহে একদিন কাজ করবে।
এছাড়া শ্রমিক সরবরাহের জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার।
নগর পুলিশের উপ কমিশনার, অতিরিক্ত উপ কমিশনার, সহকারি কমিশনার, ওসি থেকে শুরু করে মোবাইল টিমের পুলিশ সদস্যরাও নালা পরিস্কারে কাজ করবে বলে জানান সিএমপি কমিশনার।
সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার, অতিরিক্ত কমিশনার (অর্থ, প্রশাসন ও ট্রাফিক) একেএম শহীদুর রহমান, উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) মাসুদ-উল-হাসান, উপ-কমিশনার (সদর) ফারুক আহমেদ, উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা) কুসুম দেওয়ান, উপ-কমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ এবং উপ-কমিশনার (পশ্চিম) সঞ্জয় কুণ্ডু উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩,২০১৪