চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে তাপস সরকার নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো তিনজন। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আলাউদ্দিন আলম, উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন রিমন ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জহির উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, সংঘর্ষে আহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। নিহত তাপস সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের (২০১৩-২০১৪) ছাত্র।
তাপস সরকারের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ থানার বিষ্ণুপুর এলাকায়। তার বাবার নাম বাবুল সরকার। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তাপস তৃতীয়।
বড় ভাইয়ের কর্মসূত্রে তাপসের পরিবারের সকলেই নেত্রকোনা সদরের সাতপাই এলাকায় থাকেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন তার মামাতো ভাই সুব্রত ভৌমিক।
![CU_Clash_02_banglanews24 CU_Clash_02_banglanews24](files/December_2014/December_14/CU_Clash_02_banglanews24_845972606.jpg)
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রোববার সকাল সাড়ে এগারটার দিকে শাহ আমানত হলের সামনে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার(সিএফসি) ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস(ভিএক্স) এর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাপস সিএফসির কর্মী।
সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া চবি ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন দু’টিই নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী।
এদিকে ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পসে উত্তেজনা দেখা দেয়। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।
ঘটনাস্থল থেকে আমাদের চবি করেসপন্ডেন্ট বিপ্লব পার্থ জানান, দেশিয় অস্ত্র নিয়ে ভিএক্সের কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের সামনে এবং সিএফসির কর্মীরা শাহ আমানত হলের সামনে অবস্থান করছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে জড়ো হয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ মো.ইসমাইল বাংলানিউজকে বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ তাপসের মৃত্যুর পর উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
![CU_Clash_01_banglanews24 CU_Clash_01_banglanews24](files/December_2014/December_14/CU_Clash_01_banglanews24__5__670769388.jpg)
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে,শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবি চত্ত্বরে রোববার সকালে ফুল দিতে যায়। এ সময় সিএফসি ও ভিএক্সের কর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে সকাল ১১টায় শাহ আমানত হলের সামনে ভিএক্সের কর্মীরা সিএফসির কর্মীদেরকে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে দুই উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে সিএফসি কর্মী তাপসসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ সভাপতি অমিত কুমার বসুর অভিযোগ, ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার হওয়া কর্মী আশরাফুজ্জামান আশা, জালাল, আরিফ, রুবেল, শফিক ও শুভ’র নের্তৃত্বে হামলা হয়।
তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবি দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবি চত্ত্বরে ফুল দেওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। শাহ আমানত হলের সামনে ফের বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন গুলি করলে তাপসসহ তিনজন আহত হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের চমেক আনা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাপসের মৃত্যু হয়।
নিহতের লাশ নেত্রকোনায় তার পরিবারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ।
হত্যাকারীদের বিচারের দাবি মহিউদ্দিনের:
দুপুর আড়াইটার দিকে হাসপাতাল মর্গে নিহত তাপসের লাশ দেখতে যান নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
এসময় এ হত্যাকাণ্ডের জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘একটি চক্র আমার ছেলেদের নষ্ট করতে চক্রান্তে নেমেছে। সেই চক্রান্তের অংশ হিসেবেই এ হত্যাকাণ্ড। অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পবিত্র জায়গায় হত্যাযজ্ঞ থামানো যাবে না। ’
** শাহ জালাল হলে তল্লাশি, আটক ২৭
** চবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় সিন্ডিকেটের জরুরী বৈঠক
বাংলাদেশ সময়:১২৪৭ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৪