ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জেএমবির এক মামলার তদন্ত শেষ, অভিযোগপত্র ‍জানুয়ারিতে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
জেএমবির এক মামলার তদন্ত শেষ, অভিযোগপত্র ‍জানুয়ারিতে

চট্টগ্রাম: নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় বহুল আলোচিত ‘কথিত পীর’ ল্যাংটা ফকির এবং খাদেম আব্দুল খাদেরকে খুনের মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে।   এখন অভিযোগপত্র প্রস্তুত করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) সন্তোষ কুমার চাকমা।



অভিযোগপত্রে খুনের দায় স্বীকার করা জেএমবি সদস্য মো.সুজন ওরফে বাবুকে আসামি করা হচ্ছে।   এছাড়া ১০ জনকে সাক্ষী করা হচ্ছে বলে নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।


জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করা হবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন এস আই সন্তোষ কুমার চাকমা।  

সাম্প্রতিক সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মোজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) উত্থান এবং বিভিন্ন সহিংস কর্মকান্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া কয়েকটি মামলার মধ্যে এই প্রথম কোন মামলার তদন্ত শেষ হয়ে অভিযোগপত্র দাখিলের পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এস আই সন্তোষ কুমার চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, কাফেরকে খুন করলে জান্নাতবাসী হওয়া যাবে এমন ধারণা থেকেই সুজন ল্যাংটা ফকিরকে খুন করে।   আর তাকে বাঁচাতে এসে খুন হয়েছে খাদেম আব্দুল কাদেরও।   অভিযোগপত্রে খুনের কারণ হিসেবে বিষয়টি উল্লেখ করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হচ্ছে ল্যাংটা ফকিরকে খুনের বিষয়ে জেএমবি’র কোন সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ছিলনা।   তবে জেএমবি তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণের সময় ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের যেসব ধারণা সদস্যদের দেয় তাতে হত্যাকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করা হয়।   জেএমবি’র আঞ্চলিক কমাণ্ডার ফারদিন ওরফে পিয়াস ইসলাম বিরোধীদের খুন করার জন্য সুজনকে উদ্বুদ্ধ করে।   কিন্তু ল্যাংটা ফকিরকে খুনের বিষয়ে জেএমবি’র সাংগঠনিক বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।   সুজন একাই সিদ্ধান্ত নিয়ে এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে।

সুজন ওরফে বাবু নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র সদস্য।   ৫ অক্টোবর তাকে কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।   ৭ অক্টোবর সুজন আদালতে ল্যাংটা ফকির খুনের ঘটনায় জবানবন্দি দেয়।

জবানবন্দিতে সুজন জানায়, ঘটনার এক বছর আগে সুজন  ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য চট্টগ্রামে এসেছিল।   একদিন খবর পায়- বায়েজিদ বোস্তামির শেরশাহ বাংলাবাজার এলাকায় ল্যাংটা ফকির নামে একজন কথিত পীর আছেন যিনি সবসময় মাজারে উলঙ্গ অবস্থায় থাকেন।   লোকজন গিয়ে তাকে সিজদা করে।   এটা ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যায় বলে তার মনে হয়।   ল্যাংটা ফকিরকে খুনের পরিকল্পনা নেয় সে।   পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন একটি দা নিয়ে মাজারে যায় সুজন।   এসময় ল্যাংটা ফকির ঘুমাচ্ছিলেন।   সুজন ঘুমন্ত অবস্থায় তার গলায় কোপ দেয়।   ঘটনা দেখে আরেকজন এগিয়ে আসে।   সুজন তাকেও গলায় কোপ দিয়ে খুন করে।   এরপর সুজন চলে যাবার সময় ৫-৭ জন লোক তাকে ধরার জন্য এগিয়ে আসে।   কয়েকটি ককটেল ফাটিয়ে সুজন পালিয়ে যায়।   পালিয়ে একদিন সুজন বায়েজিদ এলাকায় পাহাড়ে গিয়ে লুকিয়ে থাকে।   পরদিন আবারও অক্সিজেন এলাকায় নিজের বাসায় চলে যায়।

গ্রেফতারের পর সুজনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৬ অক্টোবর দুপুরে নগর গোয়েন্দা পুলিশ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা এবং তার মেস থেকে রক্তমাখা শার্টপ্যান্ট উদ্ধার করেছে।   দা এবং রক্তমাখা শার্টপ্যান্ট পুলিশ মামলার আলামত হিসেবে আদালতে জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এস আই সন্তোষ কুমার চাকমা।

** ভক্ত-মুরিদদের সিজদাই কাল হল ল্যাংটা ফকিরের

বাংলাদেশ সময়: ১১২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪,২০১৫
আরডিজি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।