ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ব্রান্ডনিউ গান শোনালেন নচিকেতা

‘বাংলাদেশে এসে বাইরে এসেছি মনে হয় না’

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
‘বাংলাদেশে এসে বাইরে এসেছি মনে হয় না’ ছবি: সোহেল সরওয়ার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: জীবনমুখী গানে শ্রোতা-হৃদয় জয় করা নচিকেতা সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘বাংলাদেশে এসে বাইরে এসেছি মনে হয় না। আমি বাংলাদেশেরই ছেলে।



চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বুধবার রাতে হাজারো দর্শকের সামনে অকপটে এ স্বীকারোক্তি দেন। মুহুর্মুর্হু করতালি দিয়ে পৌষের কনকনে শীত, কুয়াশা উপেক্ষা করে আসা ভক্তরা আপন করে নেন প্রিয় শিল্পীকে।


প্রথম সারিতে বসে নচিকেতার গান উপভোগ করেছিলেন কবিপত্নী সুস্মিতা চৌধুরী। তিনি বলেন, নচিকেতা নিজে লেখেন, নিজে সুর করেন। তার গানে স্বকীয়তা যেমন আছে তেমনি গানের বাণীতে সমাজের অসংগতি নিয়ে স্যাটায়ার থাকে, অসংগতিগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। ডাক্তার, মন্ত্রী, পুলিশ নিয়ে সাধারণ মানুষের যে অভিজ্ঞতা তা-ই উঠে আসে তার গানে। আবার গানের সুরে আছে বৈচিত্র্য, ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুনলেও একঘেয়ে লাগে না।

‘কবির সুমন নচিকেতা সম্পর্কে একজায়গায় বলেছিলেন, মঞ্চের ওপর নচিকেতা যেন দুরন্ত শিশু। নচিকেতাকে চোখের সামনে দেখতে দেখতে সে কথাটিই সত্যি মনে হলো। ’ যোগ করলেন সুস্মিতা।  

অনুষ্ঠান শেষে নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী বাংলানিউজকে বললেন, নচিকেতার গান শুধু বিনোদনের উপলক্ষ নয়। তার বৃদ্ধাশ্রম যখন শুনি হৃদয় উথালপাথাল হয়। এত দরদ, এত আবেগ আমাকে বিস্মিত করে। আবার যখন নীলাঞ্জনা কিংবা তার প্রেমের গান সেটি যেকোনো বয়সী দর্শক-শ্রোতাকে নস্টালজিক করবেই। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষ নিয়ে, জীবন নিয়ে, সমাজ-বাস্তবতা নিয়ে সারাক্ষণ গান করার যে ক্ষমতা ঈশ্বর নচিকেতাকে দিয়েছেন তার তুলনা নাই।    

বিমানবন্দর থেকে দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে এসে মঞ্চে উঠেই গাইতে শুরু করলেন ‘শুধু জীবনের কথা বলাই জীবন’। এরপর গান লেখার গল্প, শ্রোতাদের সঙ্গে খুনসুটি, বাস্তব জীবনের নানান অভিজ্ঞতার ফাঁকে ফাঁকে তার কালজয়ী সব গান শোনান।

এর মধ্যে ছিল ‘বিতর্কিত’ প্রেমের গান ‘সে ছিল তখন উনিশ, আমি তখন ছত্রিশ, প্রেমে পড়তে লাগে না বয়স, প্রেমে থাকে না উনিশ বিশ’ যেমন ছিল তেমনি ‘যখন সময় থমকে দাঁড়ায়’, ‘দেখে যা অনির্বাণ’, ‘বৃদ্ধাশ্রম’, ‘ও ডাক্তার’, ‘রাজশ্রী তোমার জন্য’, ‘সোনালি প্রান্তরে’, ‘আজ থেকে এক হাজার শীত বসন্ত শেষে’, ‘যদি ভালোবাসো কোনো একজনকে’, ‘আমার সোনা চাঁদের কণা আর কি কি বলবো, ডাক্তার উকিল তো নয় তোকে মন্ত্রী বানাবো’ ইত্যাদিও ছিল।  

রেড ভেলভেট আয়োজিত ‘নচিকেতা লাইভ ইন চিটাগাং’র দর্শক-শ্রোতারা বাড়তি পেয়েছেন প্রিয়শিল্পীর কণ্ঠে ভিন্ন আঙ্গিকে গাওয়া রবির গান ‘আমার পরান যাহা চায়’ এবং নচিকেতার ব্রান্ডনিউ গান ‘আমার ইচ্ছে করে আকাশ বাড়ির ছাদ, ভেঙে বৃষ্টি আসুক, ভাসুক অবসাদ’।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশে নচিকেতার গান তো হাত বাড়ালেই শুনতে পান শ্রোতারা। লাইভ কনসার্টের আকর্ষণীয় দিক হলো পরিবেশনায় নাটকীয়তা ‍উপভোগ। মজার মজার সব গল্প, যা শুনে হেসে গড়াগড়ি খায় দর্শক। কখনো আবার চোখ ভিজে যায়। ’ বললেন দেড় বছরের শিশু কোলে নিয় সপরিবারে গান দেখতে আসা গৃহিণী রাবেয়া বসরী।

নচিকেতার সংগীতায়োজনে অংশ নিতে কলকাতা থেকে উড়ে এসেছিলেন প্রসেনজিৎ (তবলা), দেবব্রত (গিটার) ও জয় (কিবোর্ড)। রম্যকথায় তাদের পরিচিত করে দেন গানের বরপুত্র নচিকেতা।

নচিকেতার আগে গান শোনান চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ তারকা চৈতী মুৎসুদ্দী। ‘সব কটা জানালা’ দিয়ে শুরু করেন চৈতী। এরপর একে একে শোনালেন ‘অনেক বৃষ্টি ঝরে’, ‘এ দুনিয়া এখন তো আর’, ‘আর যেন নেই কোন ভাবনা’, ‘এই মন জোছনা’, ‘রোজ রোজ আকাশ’ ও ‘যারে যারে উড়ে যারে পাখি’। চৈতীর সঙ্গে ছিলেন তবলায় লিটন মিত্র, কি-বোর্ডে সৃজন রায়, অক্টোপ্যাডে জুয়েল দাশ, লিড গিটারে রাজিব ঘোষ, বেজ গিটারে সজল সরকার।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সোমনাথ হালদার বলেন, ‘এ ধরনের আয়োজনের জন্য রেড ভেলভেটকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। নচিকেতাকে সবাই ভালোবাসেন। তাই আমার কথা নয়, সময়টা শিল্পীকেই দিয়ে দিতে চাই। ’ 

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য শাহআমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন আসতে যানজটের কারণে নচিকেতার দুই ঘণ্টা সময় লাগার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘নচিকেতা বরেণ্য শিল্পী। তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশে গান শোনাতে আসার জন্য। ভারতীয় সংগীত বাঙালি সংস্কৃতির ধারা। আশাকরি, এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকবে। ’  

অনুষ্ঠানে অনলাইন নিউজ পার্টনার হিসেবে ছিল দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। টাইটেল স্পন্সর ছিল রয়েল টাইগার। পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল বেঙ্গল ‘আস্থা শতভাগ’, বাবুর্চি ডট কম এবং ইগলু আইসক্রিম।

নচিকেতা শেষ করেন সেই ‘নীলাঞ্জনা’ দিয়ে। কিন্তু মঞ্চ ছাড়েন অসাধারণ নাটকীয়তায়। নচিকেতা ‍গাড়িতে উঠে গেছেন, কিন্তু দর্শক-শ্রোতারা আসন ছাড়েননি। গানের সুরে বুঁদ ভক্তরা মনে করেছিলেন চা বিরতির মতো আবার হয়তো আসবেন নচিকেতা। টনক নড়লো উপস্থাপিকা তিশার ঘোষণায়। তখন ঘড়ির কাঁটা ১১টা ছুঁই ছুঁই।    

** জীবনমুখী গানে মাতিয়ে রেখেছেন নচিকেতা
** ‘জীবনের কথা বলাই জীবন’ গাইছেন নচিকেতা
** নচিকেতার অপেক্ষায় হাজারো দর্শক

বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।