ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

এক চক্করেই মনের কষ্ট উসুল!

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
এক চক্করেই মনের কষ্ট উসুল! ছবি: সোহেল সরওয়ার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে চলছে বিজয় মেলা। এখানে আসা দর্শনার্থীরা যে যার মত ঘুরছেন, জিনিসপত্র পছন্দ করছেন।

কিন্তু ঠিক এক জায়গাতে এসে যেন সব স্রোত থমকে দাঁড়াচ্ছে।   কারণ ওখানটাতেই বসেছে নাগরদোলা।


মেলায় আসলেন, একবার ঐতিহ্যর স্বাদ নিবেন না-তা কি হয়? তাইতো দর্শনার্থীরা ঝটপট টিকেট কেটে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন লাইনে। সবার মাঝে হাপিত্যেস কখন উঠে পড়বেন নাগরদোলাতে। একবার চক্কর খেতে পারলেই যেন মনের সব কষ্ট উসুল!

নাগরদোলা নিয়ে দর্শনার্থীদের এমন আগ্রহ চোখে পড়ছে মাসব্যাপী এ বিজয় মেলায়।

ব্যবসায়ী সরওয়ার আলম পুরো পরিবার নিয়ে চড়লেন নাগারদোলায়। নাগরদোলা থেকে নেমে সরওয়ার আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘নাগরদোলা দেখলেই আমি সেই ছোট্টবেলায় ফিরে যাই। সেই দল বেঁধে গ্রামীণ মেলাতে অনেক রাত পর্যন্ত নাগরদোলায় চড়া।   নাগরদোলা চড়ার সময় ঠিক ‍উপরে উঠে নিচে নামার সময় বুকের ভেতর যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতো ছোটবেলায়, তা আজও হল।   এর মধ্যে এক ধরনের নস্টালজিক আনন্দ আছে। ’

এই প্রথমবারের মত নাগরদোলায় চড়েছেন নগরীর একটি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ শাওন। সে বাংলানিউজকে বলে, বইয়ে কত পড়েছি নাগরদোলায় চড়ার মজা। আজ বাস্তবে চড়ে বুঝতে পারলাম কেন সবাই নাগরদোলায় চড়তে চায়। নাগরদোলায় চড়ে উপরে ‍ওঠার সময় মনে হয় যেন আকাশে উড়ছি।   সে এক অন্যরকম অনুভূতি। ’

এখন আগেরমত মেলাতে নাগরদোলা দেখা যায় না। আগে যেখানে মেলাগুলোতে ৮ থেকে ১০টি নাগরদোলা চোখে পড়তো, বর্তমানে তা কয়েকটিতে এসে ঠেকেছে। তাই মেলায় আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং স্ট্যাডিজ বিভাগের এমবিএ’র শিক্ষার্থী সাঈদা সরোয়ার নীশার কণ্ঠে ঝরে আক্ষেপ।

তিনি বলেন ‘আমাদের ঐতিহ্যর অংশ হয়ে আছে নাগরদোলা। কিন্তু সেই ঐতিহ্য যেন ধীরে ধীরে হারাতে বসেছে। আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখার স্বার্থে এ নাগরদোলাকে যেন বাঁচিয়ে রাখা হয়। ’

শুধু কি বাঙালিই মজেছে নাগরদোলাতে।   মোটেও না। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের প্রথম বর্ষের জনা দশেক শিক্ষার্থী মেলায় এসেছেন নাগরদোলায় চক্কর খাবেন বলে। এদের মধ্যে নয়জনই ভিনদেশি।   তারা তাদের বাঙ্গালি বন্ধু সামিহার সঙ্গে মেলায় এসেছেন নাগরদোলায় চক্কর খাবেন বলে। বালাদেশে এসেছেন দুই সপ্তাহও হলো না।   কিন্তু এর মধ্যেই বাংলাদেশের ঐতিহ্যে মুগ্ধ তারা।  

তবে কি শুধু নাগরদোলাই বুঁদ? ঠিক তা নয়, তাদের মুগ্ধতা বিজয় মেলার প্রতিও।   তাই তাদের যথেষ্ট আগ্রহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে।  

ভিয়েতনাম থেকে পড়তে আসা হান, কান ও চাউয়ের কথাতেই উঠে আসে তা।   তারা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে বলেন, ‘আমরা এদেশে এসেছি দুই সপ্তাহের মত হবে।   বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টা এখনও পুরোপুরি জানি না।   তবে বাংলাদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে এ বিষয়ে যতটুকু জেনেছি স্বাধীনতা এদেশের মানুষ অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করেছেন। ’

এমন সময় পাশে দাঁড়ানো তাদের বাংলাদেশি বন্ধু সামিহা বলে উঠেন, ‘কয়েকদিন আগেও আরেকবার এই মেলায় এসেছিল তারা। ওই সময় আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল কি উপলক্ষে এই মেলা। বাংলাদেশের বিজয় দিবসের মাসকে ঘিরেই এই মেলা-এটি জানানোর পর তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে চায়। আমরা তাদের এ বিষয়ে জানাই। ’

এবারের বিজয় মেলায় তিনটি নাগরদোলা বসেছে।   মেলাস্থলের একেবারে দক্ষিণে পাশাপাশি এদের অবস্থান। এর মধ্যে দুটি এসেছে দিনাজপুর থেকে।   আরেকটি স্থানীয়।

দিনাজপুর থেকে নাগরদোলা নিয়ে মেলায় এসেছেন এনামুল হক ও মোহাম্মদ হানিফ। তারা হাতের সাহায্য নাগরদোলা ঘুরাচ্ছিলেন।   মাত্রই নাগরোদালার ২০ চক্কর দেওয়া শেষ করলেন।

এমন সময় কথা হয় তাদের দুজনের সঙ্গে।   তারা জানান, সারাবছরই বিভিন্ন মেলায় নাগরদোলা নিয়ে যান তারা।   দারুণ আগ্রহ থাকে সবার, বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের। প্রতি ২০ চক্কর দেওয়ার বিনিময়ে ৩০ টাকা করে রাখছেন তারা। তবে টাকাটাই তাদের কাছে মূল বিষয় নয়, মানুষদের খুশি করাতেই যেন যত আনন্দ তাদের।

কথা বলতে বলতে আবারও ভরে উঠে নাগরদোলার বসার আসন। ডাক পড়ে এনামুল আর হানিফের।   তারা ‘হেঁইও, হেঁইও’ বলে নাগরদোলা ঘুরাতেই ভেসে আসে যাত্রীদের তুমুল হাসি-হই হুল্লোড়।

মন ভালো করে দেয়ার এ আনন্দটা যেন একদম নিঁখাদ, বড় খাঁটি...

বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
টিএইচ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।