ঢাকা, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘বাবুল আক্তার হোক, যে-ই হোক, তদন্ত করা হোক’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
‘বাবুল আক্তার হোক, যে-ই হোক, তদন্ত করা হোক’ মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। ছবি: সোহেল সরওয়ার-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মাহমুদা খানম মিতু হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বামী বাবুল আক্তারকে সন্দেহ করেন না মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।  তবে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার কোন তথ্য যদি পুলিশ পায় সেক্ষেত্রে তদন্ত করে দেখার অনুরোধ করেছেন তিনি।

চট্টগ্রাম: মাহমুদা খানম মিতু হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বামী বাবুল আক্তারকে সন্দেহ করেন না মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।   তবে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার কোন তথ্য যদি পুলিশ পায় সেক্ষেত্রে তদন্ত করে দেখার অনুরোধ করেছেন তিনি।

আর মোশাররফ হোসেনের ‍অনুরোধ মেনে বাবুল আক্তার কিংবা যে-ই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো.কামরুজ্জামান।

তদন্তকারী কর্মকর্তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর লালদীঘিতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে আসেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।

  সকাল ১০টা ৫০ মিনিট থেকে দুপুর ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত তাকে নিজের কক্ষে একটানা জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।  জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মোশাররফ।

হত্যাকান্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বাবুল আক্তারকে কোন সন্দেহ নেই।  কারও নাম বলিনি কিংবা কাউকে সন্দেহের কথা বলিনি।

‘আমি হত্যার নির্দেশদাতা এবং সহায়তাকারী যে-ই হোক, তার বিষয়ে তদন্ত করার জন্য বলেছি।   সেটা বাবুল আক্তার হোক কিংবা আমি নিজে হই কিংবা যে-ই হোক। ’ মিতু হত্যার বিষয়ে মোশাররফ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মো.কামরুজ্জামান।

 তিনি বলেন, খুনের মোটিভটা কি, কেন খুন করল একজন মেয়েমানুষকে, সে তো কোন চাকরি করত না।  আর কে এই খুনের ব্যাপারে সহযোগিতা করেছে, সেটা যে-ই হোক সেটা উদঘাটন করার জন্য অনুরোধ করেছি।   খুনের নির্দেশদাতা এবং সহাতাকারী কে এটা যেন বের করা হয়।

‘আর খুনের সঙ্গে বাবুল সাহেব কেন, যে সাহেবই জড়িত থাকুক না কেন সেটা তদন্ত করে দেখতে বলেছি। ’ বলেন মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, দুজন আসামি কালু এবং মুছা পলাতক আছে।  আমি অনুরোধ করেছি যেন এরা ধরা পড়ে।  তারপর কি তথ্য পাওয়া যায় সেটা দেখতে।

পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্ট বলেও জানিয়েছেন মোশারফ হোসেন।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মোশাররফ হোসেন চলে যাবার পর নিজ কার্যালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মোশাররফ সাহেব আমাকে কারও নাম উচ্চারণ করে সন্দেহের কথা বলেননি।   তবে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকলে বাবুল আক্তার শুধু কেন, যে-ই হোক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।   সে বাবুল আক্তার হোক কিংবা যে-ই হোক।

কামরুজ্জামান বলেন, পলাতকদের মধ্যে মুছা ও কালু, আমরা জেনেছি এরা বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে ‍কাজ করত।   বাবুল আক্তার নিজেও বলেছেন তার সোর্সের বিষয়টি।  তারপরও আমরা সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখছি।

সকালে সিএমপিতে যাবার সময় মোশাররফ হোসেন সঙ্গে নেন প্রতিবেশি আব্দুর রহিমকে।   জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুজন একসাথে সিএমপি ত্যাগ করেন।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় মোশাররফ হোসেন কয়েকবার কান্না করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারও সিএমপিতে এসে তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন।  স্ত্রী খুনের মামলার বাদি হিসেবে ওইদিন বাবুল আক্তার সিএমপিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের কার্যালয়ে হাজির হয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন।

গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর ও আর নিজাম রোডে দুর্বৃত্তদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন সদর দপ্তরে কর্মরত তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম ‍মিতু।   এ ঘটনায় বাবুল আক্তার নিজে বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

হত্যাকান্ডের পর গত ২৪ জুন রাতে বাবুল আক্তারকে রাজধানীতে তার শ্বশুরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে টানা ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।   মামলার বাদিকে আসামির মতো তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করায় হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়ে দেশজুড়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুল আক্তারকে ইঙ্গিত করে খবর প্রকাশ হয়।

মিতু হত্যা মামলায় এই পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই মামলার দুজন আসামি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে।   দুজন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছে, মুছার নির্দেশে এবং তদারকিতে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে।

সিএমপির গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বরত অবস্থায় পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার হয়েছিলেন বাবুল আক্তার।   হত্যাকান্ডের আগের দিন তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশ সুপার পদে যোগ দিতে ঢাকায় গিয়েছিলেন। স্ত্রী হত্যার পর বাবুল আক্তার ঘটনা পরিক্রমায় চাকরিতে ইস্তফা দেন।   বর্তমানে তিনি একটি হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬

আরডিজি/আইএসএ/টিসি

**মিতু হত্যা, এবার বাবা মোশাররফকে জিজ্ঞাসাবাদ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।