ঢাকা, বুধবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দেড়শ জনকে ‘রক্ষায়’ নৌ কমান্ডো সুমন

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৭
দেড়শ জনকে ‘রক্ষায়’ নৌ কমান্ডো সুমন মোহাম্মদ নুর উদ্দিন সুমন। ছবি:সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: মঙ্গলবার দুপুরে আকবর শাহ থানার পশ্চিম ফিরোজশাহ এলাকার গ্রিন টাওয়ার নামের নয় তলা যে ভবনে আগুন লেগেছিল তার অদূরেই মোহাম্মদ নুর উদ্দিন সুমনের বাসা। শীতকালীন ছুটির কারণে অবসরে থাকা নৌবাহিনীতে কর্মরত এই ত্রিশোর্ধ্ব মানুষটি তখন ঘরের কোনো এক কাজে মনোযোগ বাড়াচ্ছিলেন। এমন সময় কানে আসল বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজ।

অন্যদের মতো হন্তদন্ত সুমন কাজ ফেলে দৌঁড়ে আসেন আগুন লাগা ভবনটির সামনে। নিচ তলায় সৃষ্ট আগুনে তখন ওই ভবনে কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন।

ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে ভেসে আসছে আতঙ্কিত মানুষের কান্নার আওয়াজ। মোহাম্মদ নুর উদ্দিন সুমন বুদ্ধি আঁটলেন দ্রুত।
তিনি তড়িঘড়ি করে উঠে গেলেন ওই ভবনের পাশের নির্মাণাধীন আট তলা ভবনের ছাদে। ওই ভবনে থাকা নির্মাণাধীন সামগ্রী দিয়ে মইয়ের মতো করে আগুন লাগা ভবনের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করলেন। আগুন লাগা ভবনের ছাদে তখন দেড়শম তো মানুষ। আরও কয়েকজনকে নিয়ে সুমন নেমে পড়লেন আগুন লাগা ভবনের মানুষদের নিরাপদে নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে আসার কাজে।

সুমন অন্যদের সহায়তায় প্রায় দেড়শ মানুষকে নিরাপদে নিচে নামিয়ে আনেন। আগুনের প্রকোপ বড় হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণ আনতে পারায় হয়তো সুমনের এমন সাহসিকতা ওভাবে ফোকাস পাচ্ছে না। তবে কৃতজ্ঞ ভবনের বাসিন্দারা কৃতিত্ব দিতে ভুলেননি সুমনকে।

দীর্ঘ এক ঘণ্টা ধরে চূড়ান্ত ছোঁটাছুটির কারণে চেহেরাজুড়ে ক্লান্তির চাপ স্পষ্ট। মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে ওই বাড়ির সামনে তাকে যখন আবিষ্কার করা গেল-দেখা গেল তার পায়ে নেই স্যান্ডেল, গায়ের টি-শার্ট আর প্যান্টটাও ভিজে একাকার।

মোহাম্মদ নুর উদ্দিন সুমন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ১৫ দিনের শীতকালিন ছুটিতে বাসায় রয়েছি। মঙ্গলবার বাসার একটি কাজ করছিলাম-এসময় বিকট আওয়াজে কিছু একটি বিস্ফোরিত হতে শুনলাম। পরে দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে দেখলাম অদূরের একটি ভবনে আগুন লেগেছে। আগুনের কারণে ধোঁয়ার কারণে চারপাশটা অন্ধকার হয়ে গেছে। এসময় ভবনের বাসিন্দারা কান্নাকাটি করছিল খুব। আমি দ্রুত পাশের নির্মাণিধীন ভবনে উঠে ওই ভবনে থাকা কিছু নির্মাণসামগ্রী দিয়ে মইয়ের মতো করে আগুন লাগা ভবনের সাথে সংযুক্ত করি। পরে ভবনের ছাঁদে থাকা প্রায় দেড়শ মানুষকে আমি কয়েকজনের সহযোগিতায় নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে আসি। পরে তারা নিরাপদে নিচে নেমে যান। ’

‘পরে ঝুঁকি থাকা সত্বেও ভবনের প্রায় প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটে গিয়ে কোনো মানুষ আছে কিনা তা খোঁজ নিতে থাকি। এর মধ্যে তিন তলায় একজন বৃদ্ধাকে পেলাম। পরে তাকেও ছাদে তুলে পাশের নির্মাণাধীন ভবনে নিরাপদে নিয়ে আসি। ’ বলেন চট্টগ্রামের বিএনএস নির্ভীকে নৌ কমান্ডো হিসেবে কর্মরত নুর উদ্দিন সুমন।

তিনি আরও বলেন, ‘নৌবাহিনীতে কর্মরত থাকার সূত্রে আগুন লাগলে কিভাবে মানুষজনকে নিরাপদে নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে তার অভিজ্ঞতা আছে। এই অভিজ্ঞতাটাই কাজে লাগিয়েছি আমি। ’

নয় তলা বিশিষ্ট এ ভবনের ৫৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে। সবমিলিয়ে কয়েক’শ মানুষের বাস এই ভবনে। তাই আগুন ছড়িয়ে পড়লে বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারায় তেমন ক্ষতি হয়নি।

ভবনের ছয় তলার বাসিন্দা ইসতিফা জাহান শিলা নামের এক তরুণী বলেন, ‘মানুষটাকে আমরা চিনতাম না। তবে তিনি যেভাবে আমাদের নিরাপদে আনতে সহযোগিতা করেছেন-তা আমাদের সারাজীবন মনে থাকবে। তিনিসহ আমাদের নিরাপদে নিচে নামিয়ে আনতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা’

এখনও যে মানবিকতা শব্দটি বেঁচে আছে তাই যেনো দেখিয়ে দিলেন মোহাম্মদ নুর উদ্দিন সুমন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তিনি দেখিয়ে দিলেন।

আগুনে আতঙ্ক, সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল বাসিন্দাদের

বাংলাদেশ সময়: ২২০০, ৩ জানুয়ারি ২০১৭

টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।