ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দুদকের তদন্ত

স্বর্ণ চোরাচালানে কাস্টমস-সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তা

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৭
স্বর্ণ চোরাচালানে কাস্টমস-সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তা  চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর (ফাইল ফটো)

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে কাস্টমস, বিমান ও সিভিল এভিয়েশন কর্মচারি এবং আনসার সদস্যদের একটি সিন্ডিকেটের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।  ২০১৩ সালে স্বর্ণের একটি চালান আটকের ঘটনা অনুসন্ধানে নেমে দুদক বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে। 

স্বর্ণ চোরাচালান ঠেকানোর জন্য যাদের বিমানবন্দরে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তারাই একপর্যায়ে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ে, এমন তথ্য উঠে এসেছে দুদকের তদন্তে।  কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) আনিসুর রহমান এবং সিভিল এভিয়েশনের আলোচিত কর্মচারি মোমেন মকসুদ এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা বলেও তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে দুদক।

জানতে চাইলে দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহকারী পরিচালক এইচ এম আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, কাস্টমস, সিভিল এভিয়েশন, বিমানসহ দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের একটি সিন্ডিকেট চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণের বার চোরাচালানে সহায়তা করত।   এরা মূল চোরাচালানিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে স্বর্ণের বার আনা এবং বিমানবন্দর পার করে দেয়ার কাজ করত।

 

২০১৩ সালের ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক যাত্রীর লাগেজ তল্লাশি করে ২৫টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।   মধ্যপ্রাচ্যের দোহা থেকে দুবাই হয়ে আসা এয়ার এরাবিয়া ফ্লাইটের এক যাত্রী লাগেজটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে এসেছিলেন।  

এসময় বিমানবন্দরে কাস্টমসের এআরও আনিসুর রহমান এবং মোমেন মকসুদ বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন বিভাগের ব্যবস্থাপকের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।   মোমেন মকসুদের বিরুদ্ধে ওই লাগেজের মালিককে গ্রেফতার এড়িয়ে  নিরাপদে বিমানবন্দর পার করে দেবার অভিযোগ উঠেছিল।  

স্বর্ণের বার আটকের ঘটনায় নগরীর পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছিল।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, স্বর্ণের চালানটি দেশে আনার জন্য বিমানবন্দরে দায়িত্বরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জড়িত আছে এমন অভিযোগ উঠার পর অনুসন্ধানে নামে দুদক।  

প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্যতা পেয়ে দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহকারী পরিচালক রহমতউল্লাহ বাদি হয়ে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ৩ জনের বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।  

দুই বছর গভীরভাবে তদন্তের পর চলতি বছরের ২ জানুয়ারি (সোমবার) তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহকারী পরিচালক এইচ এম আক্তারুজ্জামান আদালতে মামলার অভিযোগপত্র জমা করেন।   এতে ৭ জনকে আসামি করা হয়।

আসামিরা হলেন, কাস্টমসের এআরও আনিসুর রহমান, সিভিল এভিয়েশনের কর্মচারী মোমেন মকসুদ, আনসারের এপিসি ইলিয়াস, আনসার সদস্য মাহফুজার ও শাহিন, বিমানের ট্রাফিক হেল্পার নুরুদ্দন এবং লাগেজের মালিক আলাউদ্দিন।  

আলাউদ্দিন ছাড়া বাকি সবাই ঘটনার সময় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ছিলেন।   আলাউদ্দিন দেশে ফিরলে তাকে আটক করা হয়েছিল।  বর্তমানে আলাউদ্দিন জেলে আছে।

কাস্টমসের এআরও আনিসুর রহমান চট্টগ্রাম থেকে বদলি হয়েছেন।   মোমেন মকসুদ বর্তমানে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি হিসেবে কর্মরত আছেন।

সূত্রমতে, দুদক তদন্তে পেয়েছে ২৫টি স্বর্ণের বারের চালানটি আলাউদ্দিনসহ মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করা একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশ করে আনার সঙ্গে আনিসুর রহমান ও মোমেন মকসুদ জড়িত।   বাকিরা সবাই তাদের হয়ে কাজ করেছে।  

তবে স্বর্ণের বারগুলো ধরা পড়ে যাওয়ায় দায়িত্বশীল সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জড়িত থাকার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ২১৮, ৪০৯, ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।   মোট ১৩ জনকে মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে।  

দুদকের আদালত পরিদর্শক মো.এমরান হোসেন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, অভিযোগপত্রটি এখনও আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি।   রোববার সেটি আদালতে দাখিল করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৬

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।