ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

খাদে পড়ে সিএমপি, টেনে তোলে পিবিআই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
খাদে পড়ে সিএমপি, টেনে তোলে পিবিআই সিএমপি ও পিবিআই’র লোগো।

চট্টগ্রাম: গত নভেম্বরে নগরীর একটি বাসা থেকে নির্মম খুনের শিকার আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।  সহকর্মী খুনের ঘটনায় রাজপথে নামেন চট্টগ্রামের আইনজীবীরা।  আদালত বর্জনও শুরু করেন।  খুনের রহস্য উদঘাটন এবং আসামি ধরতে না পেরে বিপাকে পড়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।  

সেই পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।   দুদিনের মধ্যে বাপ্পীর স্ত্রী রাশেদাসহ হত্যায় জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

  খুনের নেপথ্য কাহিনী উন্মোচিত হয়।

সম্প্রতি নগরীর কর্ণফুলী থানার শাহ মিরপুর এলাকায় এক প্রবাসীর ঘরে চার নারী ধর্ষণের শিকার হয়।
  এই ঘটনা প্রকাশের পর চট্টগ্রাম জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।   মামলা নেওয়া-আসামি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে গাফিলতির জন্য তোপের মুখে কর্ণফুলী থানা।   এক পর্যায়ে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নেয় সিএমপি।  

এবারও এগিয়ে আসে পিবিআই।   ধর্ষণের ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করে পিবিআই সবার ক্ষোভের আগুনে পানি ঢেলে দেয়।

শুধু এই দু’টি নয়, বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর, বিশেষ করে সূত্রবিহীন ঘটনার পর বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যখনই বিপাকে পড়েছে সিএমপি, যখনই ভাবমূর্তির সংকট তৈরি হয়েছে, পিবিআই এগিয়ে এসে উদ্ধার করেছে।

পিবিআইয়ের হস্তক্ষেপে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার অগ্রগতির কথা স্বীকার করেছেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) সালেহ মোহাম্মদ তানভীরও।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পিবিআই একটা বিশেষায়িত সংস্থা।   তাদের কাজই মামলার তদন্ত করা।   আমাদের আরও অনেক কাজ আছে।   এরপরও আমরা সিএমপি-পিবিআই ভাগ করছি না।   সিএমপি করুক আর পিবিআই করুক, আমরা মনে করি এটা পুলিশের সাফল্য। ’ বলেন তানভীর।

গত বছরও নগরীতে সংঘটিত বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ঘটনা যেগুলোতে সিএমপির কর্মকর্তারা ব্যর্থ হয়েছেন, সেগুলোর রহস্য উদঘাটন করে আসামি গ্রেফতার করেছে পিবিআই।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে অসুস্থ মাকে দেখতে এসে খুন হন প্রবাসী নাছির উদ্দিন।   খুনির কোনো হদিস নেই।   প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষীও ছিল না।   থানার পুলিশের যখন কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগই নেই, তখন নাছিরের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া মোবাইলের সূত্র ধরে দুই ছিনতাইকারীকে আটক করতে সক্ষম হয় পিবিআই।

২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর নগরীর বন্দর থানা এলাকায় এক প্রবাসীকে ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করে ছিনতাই শেষে ছেড়ে দেয়া হয়।   বন্দর থানা কিছুদিন তদন্তের পর দায়িত্ব পড়ে পিবিআই মেট্রোর উপর।   ডিবি পুলিশ পরিচয়ধারী চার ডাকাতকে গ্রেফতার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি আদায়ে সক্ষম হয় পিবিআই।

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সুলতান আহম্মদ চৌধুরীর বড় ছেলে জালাল উদ্দিন সুলতানের মরদেহ উদ্ধার হয় ২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর নগরীর আগ্রাবাদে।   কারো সঙ্গে শত্রুতা ছিল না।   পরিবারও কাউকে সন্দেহ করতে পারছিল না।   শুরুতেই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো।   মাত্র ১৮ ঘণ্টার মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করে পিবিআই জানায়, পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে নির্মম খুনের শিকার হয়েছেন জালাল।

২০১৬ সালের ২৯ জানুয়ারি নগরীর বাকলিয়ায় খাল থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী যুবককে উদ্ধারের ঘটনার নেপথ্য কাহিনীও উদঘাটন করেছে পিবিআই।
চাঞ্চল্যকর এই মামলাগুলোর তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আছেন পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।  

দেড় বছর আগে সিএমপিতে কর্মরত থাকা সন্তোষ কুমার চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়েই কাজ করার চেষ্টা করছি।   যে কোন ঘটনা তদন্তের ক্ষেত্রে আমরা মানুষের চেয়েও প্রযুক্তিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।   প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের কারণেই সাফল্য আসছে।  

চাঞ্চল্যকর মামলা তদন্তে সিএমপির এই ব্যর্থতা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা আছে খোদ এই সংস্থায় কর্মরতদের মধ্যেও।   তাদের মতে, সিএমপিতে একসময় যেসব চৌকস ও পেশাদার কর্মকর্তা ছিলেন, যে কোন ঘটনায় যাদের ডাক পড়ত তাদের অনেককেই গত দেড় বছরে বদলি করা হয়েছে।   যারা এখনো আছেন তাদের প্রায় সবাইকেই ক্ষমতাহীন করে নতুন একটি বলয় তৈরি করা হয়েছে।   পেশাদার কর্মকর্তাদের বলয়ের বাইরে রেখে কোণঠাসা করা হয়েছে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, চৌকস-দক্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা এখনো সিএমপিতে টিকে আছেন, তাদের ডিবি অথবা এসবিতে পোস্টিং দিয়ে ক্ষমতাহীন করা হয়েছে।   আগে যে কোন স্পর্শকাতর ঘটনায় বিভিন্ন ইউনিট থেকে চৌকস কর্মকর্তাদের জড়ো করে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা দিকনির্দেশনা দিতেন।   কিন্তু সেই টিমওয়ার্কও এখন আর নেই।  

চৌকস ও পেশাদার কর্মকর্তার অভাবে সিএমপি ব্যর্থ কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বাংলানিউজকে বলেন, পিবিআই আমাদের অনেক মামলা ডিটেক্ট করছে।   এতে আমরা খুশি।   তার মানে এই না-যে আমরা একেবারে পড়ে গেছি।   আমরা কিন্তু ভুল পথে নেই।   আমাদের থানাগুলোতে এখন অনেক ভালো ভালো কাজ হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
আরডিজি/টিসি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।