ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নাসিমন ভবনের চার দেয়ালে বন্দি নগর বিএনপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭
নাসিমন ভবনের চার দেয়ালে বন্দি নগর বিএনপি চট্টগ্রামে বিএনপির কার্যালয়। ছবি: সোহেল সরওয়ার/বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বছরের আলোচিত বিষয় ছিল নগরীর হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি। বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে সাধারণজনগণ বিএনপির কাছ থেকে বড় ধরনের ভূমিকা আশা করেছিল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ ইস্যুকে কাজে লাগাতে পারেনি বিএনপি।

অথচ দলের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে শেষ সময়ে জনগণের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যান সদ্য প্রয়াত নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

বিষয়টি উপলদ্ধি করে খোদ বিএনপি নেতা-কর্মীরাই বলছেন, জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে কাজে লাগাতে পারছে না বিএনপি।

একইভাবে চাল-পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে জনজীবনে চরম ভোগান্তি নামলেও বিএনপি ভূমিকা রাখতে পারেনি। এতে বিএনপি কর্মী-সমর্থকরা অনেকটা বিরক্ত।

তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলছেন, সাংগঠনিক ভিত মজবুত না থাকায় নগর বিএনপি সরকার বিরোধী কিংবা জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো ইস্যুতে আন্দোলনে নামতে পারছে না। তারা বলছেন, সাংগঠনিক ভীত শক্ত থাকলে পুলিশি বাধা অতিক্রম করে আন্দোলন সংগ্রাম সফল করতে পারতো।

নগর বিএনপি নেতারা বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়ার কারণে জোরালো আন্দোলন করতে না পারলেও কেন্দ্রঘোষিত সব কর্মসূচিই পালন করেছেন। হোল্ডিং ট্যাক্স বিরোধী কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। তবে সরকারের হামলা-মামলা ও পুলিশি হয়রানির কারণে অনেক সময় বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর নগর বিএনপির কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। কমিটি গঠন ইতিবাচক হলেও এর পরিধি বাড়ার কারণে অনেকে অপ্রত্যাশিত পদ পেয়েছেন। ফলে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল নগর বিএনপির কার্যক্রম। আবার এসব কর্মসূচি পালন করতে হয়েছে নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের মধ্যেই। অর্থাৎ রাজপথ কাঁপানো আন্দোলনের দিকে যেতে পারেনি বিএনপি।

বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, নগর বিএনপির কমিটি গঠন করলেও অঙ্গ সংগঠনকে সক্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকরতে পারেনি। ফলে নগর বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল এমন কি নগর ছাত্রদলও ছিল অনেকটা নিষ্ক্রিয়। এসব কারণেই বিএনপি রাজপথে নামতে পারেনি।

তারা বলছেন, সব থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে পারেনি। এতে তৃণমূল পর্যায়ে দল সংগঠিত হয়নি। একারণে আগে যে কোনো কর্মসূচি ওয়ার্ড পর্যায়ে হলেও এখন হচ্ছে না।

জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকলেও আগে নগর বিএনপি নেতারা বিশাল বহর নিয়ে ৭ নভেম্বরসহ বিভিন্ন দিবসে রাঙ্গুনিয়ায় জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিতে যেত। অথচ বর্তমান কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরও সেখানে যাননি। বিপ্লব উদ্যানে ফুল দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছেন।

সাংগঠনিকভাবে দক্ষ না হওয়ার কারণে মাঠের পরিবর্তে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার আর ফেসবুকে রাজনীতি চর্চা হচ্ছে উল্লেখ করে নগর বিএনপির একজন নেতা বাংলানিউজকে বলেন, রাজনীতি এখন রাজপথ থেকে দেয়ালে উঠে গেছে। ফলে আন্দোলন সংগ্রাম সফল হচ্ছে না।

বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বাংলানিউজকে বলেন, এ বছরের বড় সফলতা পূর্ণাঙ্গ কমিটি। নির্যাতন-নিপীড়নের পরও সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল। সাধ্য অনুযায়ী আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেছে।

সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করেছেন দাবি করে নগর বিএনপির সভাপতি ডা.শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আগের রাজনীতি আর এখনের রাজনীতির চিত্র ভিন্ন। আগে বিরোধী দল আন্দোলন সংগ্রাম করতে পেরেছে। তখন পুলিশ সর্বোচ্চ লাঠি চার্জ করেছে। কিন্তু এখন গুলি করছে। ফলে জীবনের ভয় তো সবার আছে। এরপরও মাঠে ছিল বিএনপি। ’

তিনি বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন করছি। এরপরও আমাদের কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কারণ সরকার জানে তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই।

নগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, সরকারের দমন-নিপীড়নের পরও বিএনপি জনগণের কাছে গেছে। তাই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, শতভাগ না হলেও ৮০ ভাগ সফল। শত বাধার মধ্যেও নগর বিএনপি সব কর্মসূচি পালন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭
এমইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।