ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

৯ বছর পর খুনের রহস্য উন্মোচন, আসামির জবানবন্দি

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১
৯ বছর পর খুনের রহস্য উন্মোচন, আসামির জবানবন্দি

চট্টগ্রাম: নগরের ডবলমুরিং থানার স্টেশন কলোনির এলাকার বহুল আলোচিত মো. রফিকুল ইসলাম জুয়েল হত্যাকাণ্ডের রহস্য প্রায় সাড়ে নয় বছর পর উদঘাটিত হয়েছে। ডবলমুরিং থানা পুলিশ ও চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রায় ৭ বছর তদন্ত করেও যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।

তা করলেও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্টো। চাঞ্চল্যকর এই খুনের মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয় সংস্থাটি।

মো. রফিকুল ইসলাম জুয়েল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন মো. রাসেল প্রকাশ রাশেদ (৩১)। রাসেল কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার ছাতিরচর এলাকার হোসেন প্রকাশ হসু মেম্বারের বাড়ির ফজর আলীর ছেলে। তিনি ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রফিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।  

নিহত মো. রফিকুল ইসলাম লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার ভোলাহাট মোল্লাবাড়ীর মৃত সামছুল হকের ছেলে ছিলেন।  

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. মেজবাহ উদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, চাঞ্চল্যকর মো. রফিকুল ইসলাম জুয়েল হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় রাসেলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি যাচাই-বাছাই চলছে। রাসেলকে একমাত্র আসামি করে চার্জশিট দেওয়ার প্রস্তুতিও চলছে বলে জানান তিনি।

কী ঘটেছিল সেদিন:
মামলার কাগজপত্র ও পিবিআইয়ের তথ্য বলছে, নগরের ডবলমুরিং থানার স্টেশন কলোনির মো. রফিক ও মো. রাসেল প্রকাশ রাশেদ একই এলাকায় বসবাস করতেন। তারা দু’জনই একত্রে বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। গত ২০১২ সালের   ২৪ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে ভ্যানগাড়ির উপর.রফিকুল ও রাসেল এক সঙ্গে জুয়া খেলা খেলছিল। জুয়া খেলায় মোবাইল ও নগদ টাকা হারানোর নিয়ে দুই জনের মধ্যে তর্কাতর্কি ও এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এতে রফিক ছুরি বের করলে রাসেল তা কেড়ে নিয়ে নেন এবং রফিককে ছুরিকাঘাত করেন। ঘটনার কোন প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না। ছুরিকাঘাতে আহত রফিককে এলাকার বাসিন্দারা উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনায় রফিকের ভাই রুবায়েত হোসেন বাদি হয়ে ডবলমুরিং থানায় ২০১২ সালের ২৫ মার্চ মামলা করেন। মামলা নম্বর-৩৮।  

মামলার তদন্ত: 
 ডবলমুরিং থানা পুলিশ গত ২০১২ সালের ২৫ মার্চ থেকে ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত প্রায় এক বছর মামলাটি তদন্ত করেন। রাসেলের বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা পেলেও সঠিক ঠিকানা না পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। পরে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পুলিশ। আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা শাখাকে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। মহানগর গোয়েন্দা শাখা ২০১৪ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছর আট মাস মামলাটি অধিকতর তদন্ত করলে ঘটনার সত্যতা পান। কিন্তু তারাও আসামির প্রকৃত ঠিকানা না জানায় তাকে গ্রেফতার করতে পারে নি। তারাও তদন্ত শেষে পুনরায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন আদালতে। মামলার বাদি রুবায়েত হোসেন চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন দাখিল করেন। বাদির আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোকে মামলাটির তদন্তের নির্দেশ দেন। গত ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ পরিদর্শক মো. মেজবাহ উদ্দিন খান। তদন্তকারি কর্মকর্তা সোর্স ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পলাতক রাসেল সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। রাসেলকে গ্রেফতার করার জন্য পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর একটি বিশেষ টিম, পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের একটি বিশেষ টিম এবং পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলা ইউনিটের একটি বিশেষ টিম আসামির অবস্থান শনাক্ত করে। আসামিকে গ্রেফতার করতে কিশোরগঞ্জে এবং ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়। পিবিআই রাসেলের খালাত ভাইসহ একাধিক আত্মীয় স্বজনকে তার অবস্থান সর্ম্পকে জানার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করে। বিভিন্ন টিমের অভিযানের ফলে নিরুপায় হয়ে দীর্ঘ ৯ বছরের অধিককাল আত্মগোপনে থাকা রাসেল গত ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পন করলে আদালত রাসেলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে পিবিআই তদন্তকারী কর্মকর্তা গত ২৫ আগস্ট রাসেলকে ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে রাসেল হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেন। পরে সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রাসেল।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১
এমআই/টিসি 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad