ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে চট্টগ্রামে গণশুনানি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২১
মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে চট্টগ্রামে গণশুনানি বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশনের গণশুনানি

চট্টগ্রাম: একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের উদ্যোগে গঠিত ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’র তদন্ত ও গণশুনানি নগরের চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

রোববার (১৪ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গণশুনানিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন ভুক্তভোগী ও সচেতন নাগরিকেরা।

 

গণকমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে গণশুনানিতে অংশ নেন আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, সাবেক আইজিপি নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার, গণকমিশনের সদস্যসচিব ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, গণকমিশন সচিবালয়ের সমন্বয়কারী কাজী মুকুল এবং সচিবালয়ের সদস্য সাংবাদিক শওকত বাঙালি প্রমুখ।

তদন্ত ও গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, নির্মূল কমিটি চট্টগ্রামের সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. আলাউদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি দীপঙ্কর চৌধুরী কাজল, কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক অলিদ চৌধুরী, হাবিব উল্লাহ চৌধুরী ভাস্কর, আবু সাদাত মো. সায়েম, আবদুল মান্নান শিমুল, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সুচিত্রা গুহ টুম্পা, সহ-প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক রুবেল চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাজীব চৌধুরী, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক রুবেল আহমেদ বাবু, কার্যনির্বাহী সদস্য এম হামিদ হোছাইন, মো. আলমগীর, আখতার হোসেন, কানিজ ফাতেমা সমাজকর্মী মওলানা হাসান রফিক, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিনসহ চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিশিষ্টজনেরা।

গণশুনানিতে ১৩ জন সাক্ষী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের নারকীয় তাণ্ডব এবং সারাদেশে পূজা মণ্ডপে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী হামলার মৌখিক সাক্ষ্য দেন। লিখিতভাবে সাক্ষ্য দেন ৪২ জন। সাক্ষ্য প্রদানকারীদের মধ্যে ছিলেন শিববাড়ি শ্রীশ্রী শ্মশানেশ্বর শিব বিহঙ্গ মন্দির কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার মজুমদার (৭০), কর্ণফুলী পূজা উদযাপন কমিটির সহসভাপতি সজল কুমার দাস (৩৫), সাবেক কর্ণফুলী পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য দেবরাজ রতন (৩৮), অমিত কুমার হোড় (৬৫), দুলাল কান্তি মুহুরী (৭৪), নাপোড়া শেখের খীল কালীবাড়ি পূজা উদযাপন পরিষদের রাজিব কান্তি গুহ (৪২), নাপোড়ার সুপল মিত্র (৩৪), বিকাশ দাস (১৮), পেকুয়া সুশীল পাড়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কুমার কাঞ্চন মনি (৩৯), চট্টগ্রামের জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল পালিত, শ্যামল কান্তি দাস, সীতাকুণ্ড জেলেপাড়ার দক্ষিণা রঞ্জন দাস, বাঁশখালী উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. চন্দন দত্ত প্রমুখ।  

কর্ণফুলী পূজা উদযাপন কমিটির সহসভাপতি সজল কুমার দাস বলেন, ‘অষ্টমীর দিন ১৩ অক্টোবর ২০২১ বিকাল ৫টায় ১৫/১৬ বছরের একদল কিশোর এসে পূজা মণ্ডপে গান বাজনা বন্ধ করে দিতে বলে। এরপর আমরা গান বন্ধ করে পূজা করি। এরপর ইউএনওকে অবহিত করা হলে তিনি পরিদর্শন করে যান। রাতে একদল মানুষ এসে পূজা মণ্ডপ ও প্রতিমা ভাঙচুর করে।  

তিনি বলেন, ‘এলাকার বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মীদের ভয়ে আশেপাশে কেউ এই ঘটনার জন্য পুলিশের কাছে মামলা করার সাহস পায়নি। বিএনপি জামায়াতের লোকেরা ‘জয় বাংলা’ নামে সাইনবোর্ড ব্যবহার করে। তারা জামায়াতের কর্মী। আমি বাদী হয়ে মামলা করলে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত না তাদের গ্রেফতার করা হয় অথচ প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়নি। আমরা এখন ২২০ পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

কর্ণফুলী পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য দেবরাজ রতন বলেন, ‘এবারও প্রতিমা নিয়ে দামুপুকুর পাড় আসলে হামলা হয়। আমরা প্রতিবাদ শুরু করলে আমাদের ওপর আক্রমণ শুরু করে। যারা হামলা করে তাদের পুলিশ আজও গ্রেফতার করেনি।

অমিত কুমার হোড় বলেন, ‘শিববাড়ি মন্দির যিনি ভাঙেন তিনি যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় রয়েছেন। তার নাম আবুল কাশেম ও তার ছেলে নাছির উদ্দীন বাহাদুর। তাদের নেতৃত্বে অতীতেও একবার মন্দির ভাঙচুর হয়। এ বিষয়ে একটি মামলা হলেও এখনও তার সুরাহা হয়নি। ১৯৭৮ সাল থেকে আমরা পূজা উদযাপন করছি। পূজা এলেই গণ্ডগোল শুরু হয়, এবারও হয়েছে। আমরা এর সুরাহা চাই।

নাপোড়া শেখেরখীল কালীবাড়ি পূজা উদযাপন পরিষদের রাজিব কান্তি গুহ বলেন, গত ১৩ অক্টোবর রাত ৯টা বিভিন্ন জায়গা থেকে একত্রিত হয়ে হাজার হাজার লোক স্লোগান দিয়ে আমাদের মন্দিরে হামলা করতে এলে আমরা মন্দিরের ভেতরে অবস্থান নিই। মন্দিরের পাশে বাজার থেকে হামলাকারীদের প্রতিহত করতে গেলে তারা আমাদের ওপর ইট, পাটকেল ছুড়তে থাকে। এই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে লাইভে আমাদের একজন ধারণ করে। পরবর্তীতে আমরা লাইভ ভিডিওতে দেখতে পাই পুলিশ আমাদের মন্দিরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে এবং দুর্বৃত্তরা মন্দিরের গেট ভাঙছে। আমাদের লোকেরা আহত হচ্ছে, অথচ পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।

বাঁশখালীর সুপল মিত্র বলেন, ‘নবমীর দিন রাত ১০টায় কালীবাড়ির সামনে ৫ হাজার লোক স্লোগান দিয়ে হামলা করতে আসে। তাদের ভেতর কিছু পরিচিত মুখ ছিল। আর কিছু মানুষ শার্ট, পাঞ্জাবি এসব পরে মুখ ঢেকে থাকায় আমরা চিনতে পারিনি। তাদের ইট-পাটকেলের আঘাতে আমিসহ ৩৫ জন আহত হই। ধর মার বলে আক্রমণ করে তারা অধিকাংশ হিন্দুদের ঘর জ্বালিয়ে দেয়। আমরা কারও কাছ থেকে সহযোগিতা পাইনি এবং সবাই আতঙ্কে আছি।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২১
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।