ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

১১০ একরে ‘মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম’ প্রকল্প

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২১
১১০ একরে ‘মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম’ প্রকল্প ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ার আদলে নির্মিত হতে যাচ্ছে 'মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম'। ১১০ একর জায়গা নিয়ে নির্মিত হবে এসব অবকাঠামো।

‘পরীর পাহাড়’ খ্যাত ঐতিহ্যবাহী কোর্ট হিল রক্ষায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সরিয়ে নেওয়া হবে সেখানে। প্রায় ৪৪টি সরকারি অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হবে সেখান থেকে।

দেশের প্রথম সমন্বিত এ সরকারি গুচ্ছ অফিস নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কর্ণফুলী নদীর তীরে কালুরঘাট সেতুর এক কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির পাশের ৭৩ দশমিক ৪২ একর জমি চিহ্নিতকরণের কাজ শেষ করেছে জেলা প্রশাসন। নগরের চান্দগাঁও (বন্দর) মৌজার বিএস ১ নম্বর খাস খতিয়ানের বিএস ১২১ দাগের ৭৩ দশমিক ৪২ একর জায়গায় সরকারি সমন্বিত এ অফিস গড়ে উঠবে।

জানা গেছে, চলতি মাসের শেষদিকে এ প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই বৈঠকে প্রকল্পের নকশা ও ডিপিপিসহ আনুষঙ্গিক সব বিষয় আলোচনা ও চূড়ান্ত করা হবে। হামিদচরে বর্তমানে জেলা প্রশাসনের অধীন ৭৩ দশমিক ৪২ একর জমি রয়েছে। এর বাইরে আশপাশের জমিগুলো নিয়ে মামলা রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধান হলে প্রকল্পের মোট জমির পরিমাণ ১১০ একরে দাঁড়াবে।  

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে গড়ে উঠছে 'মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম' নামের এ প্রকল্প। এখানে ৪৪টি সরকারি দফতর ছাড়াও সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, সার্কিট হাউস, সরকারি ট্রেনিং সেন্টার, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার, শপিংমল, বহুতল কার পার্কিং, সরকারি স্কুল-কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, পরিবহন পুল, পেট্রল পাম্প, স্মৃতিসৌধ, নভোথিয়েটার ও মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা থাকবে। ১৫০ বছরের প্রাচীন কোর্ট হিলের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব রক্ষা সম্ভব হবে। সমগ্র পরীর পাহাড় খ্যাত ঐতিহ্যবাহী পাহাড়টি ঝুঁকিমুক্ত করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।  

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, পরীর পাহাড় খ্যাত কোর্ট হিলে থাকা সরকারি অফিসগুলো সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে ঐতিহাসিক পাহাড়টির সঙ্গে প্রাচীন স্থাপনাগুলোও রক্ষা পাবে। হামিদ চরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রাখতে ইতোমধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, নির্মিতব্য 'মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম' যাতায়াতের জন্য বর্তমানে দুটি সড়ক রয়েছে। তবে আগামী ৫০ বছরের নাগরিক সুবিধা মাথায় রেখে ভবিষ্যতের এই সমন্বিত সরকারি অফিস কমপ্লেক্সে যেতে মেরিন ড্রাইভ ও লিংক রোডসহ পাঁচ ধরনের বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা হবে।

নগরের চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামনুন আহমেদ অনিক বাংলানিউজকে বলেন, সমন্বিত অফিস কমপ্লেক্সটি হবে 'চট্টগ্রামের মিনি সেক্রেটারিয়েট'। সেখানে মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ার আদলে একটি আধুনিক নগর ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। যেখানে চট্টগ্রামের মানুষ এক ছাতার নিচে সব ধরনের সরকারি সেবা পাবেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা হয় জমি অধিগ্রহণ। কিন্তু এ প্রকল্পে সেই ঝামেলা নেই। সম্পূর্ণ খাসজমিতে হওয়ায়, এটি হবে সবচেয়ে সাশ্রয়ী একটি প্রকল্প। বর্তমানে প্রকল্পটি ডিপিপি প্রণয়নের পর্যায়ে আছে। প্রায় ৪৪টি সরকারি অফিস ইতোমধ্যে আমাদের কাছে সম্মতি জানিয়েছে ওই জায়গায় স্থানান্তরিত হবে।

তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত সরকারের বিভিন্ন ধরনের বিভাগ বাড়ছে। এ প্রকল্পের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, সে সব বিভাগকে নতুন অফিস করার জন্য সরকারকে আর অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে না।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, গণপূর্তমন্ত্রী মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে ইতোমধ্যে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।  

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পরীর পাহাড়ে আইনজীবী সমিতির নতুন দুটি ভবন নির্মাণ নিয়ে দুই মাস আগে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির দ্বন্দ্বের শুরু হয়। এরই মধ্যে পরীর পাহাড়ের ১৩০ বছরের পুরোনো দোতলা আদালত ভবনটিকে হেরিটেজ ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি পরীর প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা হিসেবে সংরক্ষণের প্রস্তাব বিবেচনার কথা জানিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।  

ইতোমধ্যে ওই পাহাড়ে নতুন স্থাপনা নির্মাণ না করতে এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে তাতে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই ওই পাহাড়ে থাকা চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি অফিস অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২১
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।