ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধী ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ’

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২১
‘বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধী ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ’ বক্তব্য দেন ভারতের সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী। 

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধী ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।  

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধীর ১০৫তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি আলহাজ আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন ভারতের সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী।  

প্রধান অতিথি বলেন, ৭১ সালে পাকিস্তানি শক্তিশালী সেনাবাহিনী নিরস্ত্র সাধারণ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ভিতু বাঙালি বলতেন। সেই ভিতু বাঙালি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চরম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ৭১ সালে আমাদের অস্ত্র ছিল না, কিন্তু ছিল অটুট মনোবল।

মেয়র বলেন, নেপোলিয়ন যথার্থই বলেছেন, যে দলের নেতা ভেড়া, কিন্ত সৈন্যরা সব সিংহ হলেও যুদ্ধে তারা জয়লাভ করতে পারে না। তবে দলনেতা সিংহ এবং সদস্যরা ভেড়া হলেও তাদের জয় নিশ্চিত। আমাদের সিংহ পুরুষ বাঙালি জাতির হাজার বছরের স্বাধীনতার স্বপ্ন লালিত স্বাধীনতার কাণ্ডারি বঙ্গবন্ধু সিংহ হয়েই আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন বলেই মাত্র নয় মাসে দেশ স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য নেতৃত্বকে শাণিত করেছেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বাঙালির পরম বন্ধু ইন্দিরা গান্ধী। তিনি যদি ১ কোটির বেশি বাঙালিকে আশ্রয় না দিতেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ না দিতেন, প্রবাসী সরকার গঠনের সুযোগ করে না দিতেন, তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আরও অনেক বেশি রক্ত প্রবাহিত হতো।

তিনি বলেন, শুধু স্বাধীনতাযুদ্ধে সহযোগিতা নয় স্বাধীনতার পর পাকিস্তান কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তা না হলে আমরা হয়তো আমাদের এ মহান নেতাকে ফিরে পেতাম না। প্রকৃত বন্ধুত্বের প্রমাণ হয় সুখে দুঃখে রাজার আলয়ে। ভারত আমাদের চুক্তিকৃত বন্ধু নয়, দুর্দিনে বন্ধুত্বের প্রমাণ দিয়ে চির আপন হয়েছেন।

প্রধান আলোচক অনিন্দ্য ব্যানার্জী বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। তারা শুরু করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। কোটি  মানুষ প্রাণের ভয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় নেন। তখন ইন্দিরা সরকার তাদের খাদ্য ও জীবনের নিরাপত্তা দেয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরের আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকার তখন পাকিস্তানি বাহিনীর ক্রমাগত আক্রমণে সরকার পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়লে এগিয়ে আসেন ইন্দিরা গান্ধী।

তিনি ভারতের কলকাতায় অবস্থান করে অস্থায়ীভাবে সরকার পরিচালনার সব ব্যবস্থা করে দেন। কলকাতা অবস্থান করেই প্রবাসী সরকার পৃথিবীব্যাপী স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তোলে। শুধু তাই নয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র গঠন করে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি সংবাদ, গান, আবৃত্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণার ব্যবস্থা করেন শ্রীমতি গান্ধী। এই সময় দিল্লিতে দিনব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব বাংলাদেশের আয়োজনের ব্যবস্থা করেন তিনি। এই সম্মেলনে ৮০ দেশের ৭০০ জনপ্রতিনিধি অংশ নেন। পরবর্তীতে তিনি বিশ্ব জনমত গঠন ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন দেশে চিঠি পাঠান। তিনি ৭১ সালে পূর্ববঙ্গ থেকে আশ্রয় নেওয়া বাঙালিদের ভারতে আশ্রয় দিয়ে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে সব সমস্যা মোকাবেলা করে তিনিই স্বীকৃতি দেন বাংলাদেশকে।  

আলহাজ আলী আব্বাস বলেন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। ক্লাবের নিত্যকাজের বাইরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে উজ্জীবিত করতে প্রচার করে থাকে।  

তিনি আগামীতে চট্টগ্রামে প্রেসক্লাবে ইন্দিরা গান্ধী কর্নার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা বিষয়টি সাধারণ সভায় উপস্থাপন করে সদস্যদের সম্মতি পেলেই তা বাস্তবায়ন করবো। চট্টগ্রাম শহরে একটি ইন্দিরা গান্ধী স্কয়ার বা কর্নার করার জন্য তিনি সিটি মেয়রকে অনুরোধ জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।