ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম কলেজে প্রাণের উচ্ছ্বাস 

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২২
চট্টগ্রাম কলেজে প্রাণের উচ্ছ্বাস 

চট্টগ্রাম: কেউ এসেছেন চল্লিশ বছর পর। আবার কেউ ত্রিশ বছর, কেউ কেউ বিশ বছর পর।

কিন্তু তাদের উচ্ছ্বাস দেখে মনে হবে তারা এখনও চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী। নেচে গেয়ে ফিরে গিয়েছিলেন বিশ বছর আগের ছাত্র জীবনে।
 

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় চট্টগ্রাম কলেজ প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পুনর্মিলনী উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালির আয়োজন করা হয়। তবে দুপুর গড়াতেই কলেজ ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের স্মৃতিবিজড়িত কলেজের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে দেখেছেন তারা। পুরো কলেজজুড়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদাচারণা।  

‘কলেজ করিডোরের হারানো দিনে এসো ফিরি উৎসবের রঙে’ এ স্লোগানে নবীন-প্রবীণ সবাই যেন যৌবন ফিরে পেয়েছিলেন। উচ্ছ্বাসে মেতেছিলেন ক্যাম্পাস প্রাঙ্গনে।

অনেক দিন পর পুরোনো বন্ধুকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত ছিলেন অনেকেই। শুধু এ দিনটি উপলক্ষেই বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছেন কলেজে।  

৭৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম বাবু বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন পর প্রাণের ক্যাম্পাসে এসেছি। দেখা হয়েছে অনেক পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে। জমিয়ে আড্ডা দিয়েছি। এসেছি সেই দুপুর থেকে।  

১০৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হই। আজ থেকে ৪৬ বছর আগে। এর আগেও এসেছি অনেক বার। বার বার ফিরে আসতে মন চায় প্রাণের ক্যাম্পাসে। অনুষ্ঠান আয়োজনের খবর শুনেই মনের মধ্যে এক অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করে। তাই এবারও মিস করিনি। ছুটে এসেছি। সবার সঙ্গে দেখা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে। অনেক ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে যেন ছাত্র জীবনে ফিরে গেছি।

৮১ তম ব্যাচের ইয়াছমিন লাকি বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের পুনর্মিলনীর কথা শুনে চলে এসেছি। অনেক দিন পর পুরোনো সব বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। পুরোনো অনেক স্মৃতি মনে পড়েছে। দুঃখ কষ্ট ভাগাভাগি করেছি দীর্ঘদিন পর।

৮৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিক বিভাগের অধ্যাপক ড. সহিদ উল্যাহ বাংলানিউজকে বলেন, পুনর্মিলনী উপলক্ষে এসে মনে হচ্ছে, আবার ওই সময়ে ফিরে গেছি। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

১০৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাউজান আসনের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, কলেজের সবার সঙ্গে দেখা হবে তাই সব কাজ রেখে চলে এসেছি। খুব ভালো লাগছে সবার সঙ্গে দেখা হয়ে। অনেক বছর হলো কলেজ ছেড়ে গিয়েছি। এই এলাকায় আসলেও কলেজে আর আসা হয় না। তবে পুনর্মিলনী উপলক্ষে এসে খুব ভালো লাগছে। অনেক বন্ধুবান্ধবকে একসঙ্গে পেয়েছি। আরও একবার জমিয়ে আড্ডা দেওয়া হলো।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালির মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ঐতিহাবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পুনর্মিলন-২০২২ এর দুই দিনব্যাপী আয়োজন। বহুদিন পর সতীর্থদের সাথে মিলিত হয়ে নাচে-গানে মাতোয়ারা নানা বয়সের প্রাক্তনীরা শামিল হন র‌্যালিতে। কলেজের রেড বিল্ডিং চত্বরে আবার যেন বসেছিল পুরনো দিনের আড্ডা। নির্ধারিত সময়ের আগেই জড়ো হন সবাই। তারপর বন্ধুদের সাথে নিয়ে র্যা লিতে অংশ নেন। র্যা লিটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়।  

এবারের পুনর্মিলনী আয়োজন বিষয়ে আহ্বায়ক প্রকৌশলী আলী আহমদ বলেন, এই পুনর্মিলনীর মাধ্যমে আমরা আবার সংগঠিত হতে চাই। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম কলেজের উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে চান। এবারের পুনর্মিলনী থেকে অর্থ সাশ্রয় করে আমরা একটি তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। পুনর্মিলনীর পরে সবার মতামতের ভিত্তিতে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শুক্রবার সকালে নগরের নেভি কনভেনশন সেন্টারে শুরু হবে পুনর্মিলনীর দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। পুনর্মিলনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে সকাল ৯টায়। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, জাতীয় সঙ্গীত ও প্রয়াত সতীর্থদের স্মরণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে অনুষ্ঠান। এরপর আহ্বায়ক প্রকৌশলী আলী আহমদ এবং সদস্য সচিব এস এম আবু তৈয়ব বক্তব্য রাখবেন। তারপর প্রধান সমন্বয়কারীর শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে হবে মরহুম অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ স্মরণে স্মারক বক্তৃতা। এরপর স্মৃতিচারণ পর্ব। স্বর্ণালী অতীতকে স্মরণ করবেন চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর থাকছে প্রাক্তনদের নিয়ে ক্যাম্পাস বিজড়িত স্মৃতিমূলক অনুষ্ঠান। কৌতুক পরিবেশন, কুইজ প্রতিযোগিতা, কবিতা পাঠ ও গল্প বলা, কলেজ বন্ধুদের পরিবেশনায় গানের অনুষ্ঠান থাকছে বিকেলের আয়োজনে। সন্ধ্যায় হবে অতিথি শিল্পীদের পরিবেশনায় গানের অনু্ষ্ঠান। সবশেষে প্রীতিভোজ ও র্যা ফেল ড্র’র মধ্য দিয়ে শেষ হবে দিনব্যাপী আনন্দ আয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, ১২ মে, ২০২২
বিই/টিসি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।