ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প: আড়াই বছরে অগ্রগতি মাত্র ১৬ শতাংশ

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১১ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২২
চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প: আড়াই বছরে অগ্রগতি মাত্র ১৬ শতাংশ ...

চট্টগ্রাম: নগরের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে চট্টগ্রাম ওয়াসার অধীনে বাস্তবায়িত হচ্ছে পয়োনিষ্কাশন ও স্যুয়ারেজ প্রকল্প। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডকে ৬টি জোনে ভাগ করা হয়েছে।

 

বর্তমানে চলছে প্রথম জোনের কাজ। ২০১৯ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের আড়াই বছরে অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।

 

দুই বছরের করোনা মহামারী এ প্রকল্পের ধীরগতির কারণ- বলছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা। ২০২৩ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা আরও বাড়ানো হবে বলে জানান তারা।  

প্রকল্প বাস্তবায়নে নগরীকে ছয়টি জোন বা ক্যাশমেন্টে ভাগ করা এরিয়াগুলো হলো- ক্যাশমেন্ট-১ নগরের হালিশহর এরিয়া, ক্যাশমেন্ট-২ কালুরঘাট, ক্যাশমেন্ট-৩ ফতেয়াবাদ এরিয়া, ক্যাশমেন্ট-৪ পূর্ব বাকলিয়া, ক্যাশমেন্ট-৫ উত্তর কাট্টলি, ক্যাশমেন্ট-৬ পতেঙ্গা এরিয়া। এসব ক্যাশমেন্টের মধ্যে বর্তমানে কাজ চলছে ক্যাশমেন্ট-১ বা হালিশহর এরিয়ার কাজ।

ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের নভেম্বরে ক্যাশমেন্ট-১ এর কাজ শুরু হয়। প্রায় ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ৫০ কোটি টাকা দিচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং বাকি টাকা দিবে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। মালেশিয়াভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এরিনকো এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।

ক্যাশমেন্ট-১ এ ১০ কোটি লিটার ধারণক্ষমতার একটি সলিড ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) এবং ৩০০ টন ধারণক্ষমতার ফিকেল স্ল্যাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এফএসটিপি) নামে দুইটি শোধনাগার নির্মাণের কাজ চলছে। শোধনাগার নির্মাণে একটি কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান এবং পাইপলাইন বসানোর কাজ বা নেটওয়ার্কিং কাজ করছে দুটি চীনা প্রতিষ্ঠান।  

ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও স্যুয়ারেজের প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম  জনান, নগরের বর্জ্যসমূহ  দুইটি ধাপে সংগ্রহ করা হবে। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের আওতায় রান্না ঘর, গোসলের পানি এবং টয়লেটের বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের বাসায় স্যুয়ারেজের পাইপলাইন বসানো হবে। ওই পাইপলাইনের মাধ্যমে গৃহস্থালি বর্জ্যসমূহ সরাসরি ক্যাশমেন্ট এরিয়ার পরিশোধনাগারে চলে যাবে। সেখানে এসব পানি পরিশোধিত হয়ে নদী ও সাগরে গিয়ে পড়বে। তবে কারিগরি যাচাই-বাছাইয়ে নগরের প্রায় ৩০ শতাংশ এরিয়া স্যুয়ারেজ পাইপলাইন স্থাপনের অনুপযোগী। এক্ষেত্রে ফিকেল স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্টের আওতায় টয়লেটের বর্জ্যসমূহ ভ্যাকুয়াম ট্রাক ও গাড়িতে করে পরিশোধনাগারে নেওয়া হবে।  

তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে কাগজে-কলমে স্যুয়ারেজের কাজ শুরুর কথা থাকলেও ওই বছরের নভেম্বরে এটি একনেকে অনুমোদন পায়। অনুমোদনের সময় ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ওয়াসা ২০১৯ সালের নভেম্বরে কারিগরী বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে আইনি জটিলতা ও করোনা মহামারীর কারণে দুই বছরে বেশি সময় ধরে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়। বর্তমানে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ১৬ শতাংশ। যেহেতেু স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনার কাজ অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ তাই ২০২৬ সালের জুন মাসের আগে প্রকল্পটি কোনোভাবেই শেষ করা সম্ভব নয়।  

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, সকল সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ে নগরের জন্য আধুনিক ও বাস্তবসম্মত স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এ প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়নে প্রায় ২০৩৫ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। এতে নগরীর পুরো স্যানিটেশন ব্যবস্থা আরো পরিকল্পিতভাবে হবে।  ক্যাশমেন্ট-১ বাস্তবায়ন হলে এই প্রকল্পের উপকারভোগীর সংখ্যা হবে প্রায় ২০ লাখ।  

তিনি আরও বলেন, আমরা জানি একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে ওয়াসাকে রাস্তাঘাট কাটতে হয়। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যেহেতু স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি  জটিল, তাই পাইপলাইন বসাতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে। বিষয়টি নগরবাসীকে মেনে নিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২২
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।