ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কৃষ্ণ প্রেমের টানে রাজপথে জন্মাষ্টমীর মহাশোভাযাত্রা

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২২
কৃষ্ণ প্রেমের টানে রাজপথে জন্মাষ্টমীর মহাশোভাযাত্রা জন্মাষ্টমীর মহাশোভাযাত্রা। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন এবং ধর্ম রক্ষার লক্ষ্যে মহাবতার ভগবান রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। অর্ধরাত্রিকাল সময় রোহিণী নক্ষত্র উঠলো।

সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি মাতা তাঁর ভাণ্ডার উন্মোচন করে দিলেন।  

চতুর্দিকে এক দিব্যজোতি দেখা গেলো।

বনের পশু, পক্ষী, বৃক্ষ প্রত্যেকেই নিজ নিজ আনন্দে উদ্ভাসিত হলো। নদী, সাগরে জলতরঙ্গের জোয়ার উঠলো। চতুর্দিকে কেবল আনন্দ। স্বর্গের দেবতারা স্তব করতে লাগলেন, আনন্দ শঙ্খধ্বনি বাজাতে শুরু করলেন এবং পুষ্পবৃষ্টি করতে লাগলেন। এই শুভ মুহূর্তে বসুদেব চর্তুভূজ, শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী সুন্দর আকৃতি ও তেজঃপুঞ্জ কলেবর সেই নবজাতককে দেখতে লাগলেন। ভগবান তাঁর পুত্ররূপ নিয়ে জন্ম নিয়েছেন।  

সঙ্গে সঙ্গে তিনি ও দেবকী ভগবানের স্তব করতে আরম্ভ করলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে বসুদেব ভগবানের আদেশ অনুসারে পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে কংসের কারাগার থেকে বাইরে এলেন। একে একে বৃহৎ লৌহ কপাট সব খুলে গেল।  

ঠিক তখনই যশোদার গৃহে যোগমায়া জন্ম নিলেন। প্রচণ্ড বজ্রবিদ্যুৎপূর্ণ রাতে অনন্তদেব সহস্র ফনা বিস্তার করে বৃষ্টির হাত থেকে নিস্তারের জন্য বসুদেবের পিছু নিলেন। মথুরাবাসী এবং ব্রজবাসীদের অজান্তে নিশুতি রাতের সমস্ত ঘটনার সাক্ষী রইলেন শুধুমাত্র দেবতারা।  

এদিকে নন্দের পুত্র জন্মগ্রহণ করার পর পরমানন্দে নতুন বস্ত্র ধারণ ও তিলক লেপে ব্রাহ্মণকে ডেকে পুত্রের জাত কর্ম করালেন। ব্রজবাসীরা মহানন্দে নন্দ উৎসব করতে লাগলেন। ব্রজের গোপরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। কৃষ্ণের জন্ম সংবাদে আকাশ-বাতাস, জল, পশু, পক্ষী, বাগানের পুষ্প সকলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলো। ব্রজবাসীর ঘরে আনন্দের প্লাবন।  

শুক্রবার (১৯ আগস্ট) ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি উপলক্ষে চট্টগ্রামজুড়ে বয়ে যায় আনন্দের ফল্গুধারা। সকালে শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ-বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত নগরের মহাশোভাযাত্রায় ফুটে ওঠে জন্মাষ্টমীর এই প্রতিচিত্র।

আন্দরকিল্লা মোড় চত্বরে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে মহাশোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী মহাশোভাযাত্রা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক মাইকেল দে এর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শিল্পপতি সুকুমার চৌধুরী।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, চট্টগ্রাম মহানগর জন্মাষ্টমী পরিষদের সভাপতি লায়ন দুলাল চন্দ্র দে, সাধারণ সম্পাদক লায়ন শংকর সেনগুপ্ত, জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রা পরিষদের সদস্য সচিব রতন ভট্টাচার্য্য, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য, সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল।  

সুমন দেবনাথ ও মিথুন মল্লিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জন্মাষ্টমী পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌরাঙ্গ দে, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, শ্রীমৎ লীলারাজ ব্রহ্মচারী, শ্রীমৎ চিন্ময় ব্রহ্মচারী, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, হাসান মুরাদ বিপ্লব, মহিলা কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত, পরিষদ কর্মকর্তা লায়ন তপন কান্তি দাশ, প্রকৌশলী আশুতোষ দাশ, রতন আচার্য্য, লায়ন দিলীপ ঘোষ, শিবু প্রসাদ দত্ত, তাপস কুমার নন্দী, শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত প্রমুখ।

উদ্বোধকের বক্তব্যে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আবহমান কাল থেকে এদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে বসবাস করে আসছে। যে কোনও মূল্যে সে ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এদেশ কারও একার নয়, এদেশ সবার। শ্রীকৃষ্ণ আজীবন মানবতার জয়গান গেয়ে গেছেন। তাই তাঁর আদর্শ ধারণ করতে পারলে সমাজে কোন বৈষম্য থাকতে পারে না। আবহমান কাল থেকে এদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন কেউ কোনদিন নষ্ট করতে পারবে না।  

শোভাযাত্রা কয়েক লাখ মানুষের অংশগ্রহণে পরিণত হয় মিলনমেলায়। বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে নেচে গেয়ে বাদ্য বাজনা বাজিয়ে মহাশোভাযাত্রা রাজপথ পরিভ্রমণ করে। শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষের ছিল সরব অংশগ্রহণ, যেন কৃষ্ণ প্রেমের এক অদৃশ্য টানে ছুটে চলেছেন তারা শেকড়ের সন্ধানে।  

ফেস্টুন ও ব্যানার সহকারে মহাশোভাযাত্রায় অংশ নেন সনাতনী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন ও মঠ-মন্দিরের নেতৃবৃন্দ। বর্ণাঢ্য মহাশোভাযাত্রা আন্দরকিল্লা, লালদিঘী, কোতোয়ালী, নিউমার্কেট, তুলসীধাম, ডিসি হিল, চেরাগী পাহাড় হয়ে জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে শেষ হয়। নারী-পুরুষ বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে বাড়ির ছাদ থেকে ফুল ও উলুধ্বনি দিয়ে মহাশোভাযাত্রাকে স্বাগত জানায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২২
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।